ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি আলোচনা করো।
•বাহ্যিক কারণ•
১) ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ুর প্রভাবঃ
• সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির সভ্যতা সংস্কৃতির প্রকৃতি সেই জাতির ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে যেখানকার ভূপ্রকৃতি রুক্ষ কঠোর সেখানকার ভাষার কর্কশতা ও কঠোরতা অধিক লক্ষণীয়। আবার সেখানকার ভাষার কোমলতা ও মাধুর্য বেশি সেখানকার ভূপ্রকৃতি বর্ষাস্নিগ্ধ ও কোমল। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে।
২) সামাজিক প্রভাবঃ
•দেশের সামাজিক অবস্থা ধ্বনির প্রকৃতি নির্ণয়ে প্রভাব ফেলে। দেশে শান্তি থাকলে উচ্চারণ বিকৃতি কমে, আবার দেশে অশান্তি বা যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলে বিশেষ শব্দ বারবার ব্যবহারে ধ্বনি পরিবর্তনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
৩) ঐতিহাসিক প্রভাবঃ
•কালের গতির সঙ্গে তাল রেখে ইতিহাসের ধারা পরিবর্তনের মতোই ধনী পরিবর্তিত হয়। যেমন- সিন্ধু>হিন্দু।
৪) লিপি বিভ্রাটঃ
•অপর কোন ভাষার শব্দ লিখতে গিয়ে সম বর্ণের অভাবে কাছাকাছি উচ্চারণে নিয়ে আসার চেষ্টা হয়। যার ফলে ধ্বনিতে পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। যেমন ক্যালকাটা>কলিকাতা।
•আভ্যন্তরীণ কারণ•
•শারীরিক কারণ•
১) শ্রবণ যন্ত্রের ত্রুটি ঃ
•শ্রোতার শ্রবণ যন্ত্রের ত্রুটির জন্যে বক্তার কথা শ্রোতা যথাযথ শুনতে পায় না। তবে কানের ত্রুটি থাকলে শব্দ বা ধ্বনি ঠিকঠাক শোনা যায় না। যার ফলে শ্রবণ বোধের ত্রুটির জন্য ধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে যায়।
২) বাগযন্ত্রের ত্রুটিঃ
•বক্তার বাগযন্ত্রের ত্রুটি থাকলে ধ্বনি যথাযথভাবে উচ্চারিত হয় না। কেননা বাগযন্ত্রের সাহায্যেই ধ্বনি উচ্চারিত হয়। তবে এক্ষেত্রে জিহ্বার জড়তা থাকলে এই ত্রুটি দেখা যায়। যেমন শ>স।
৩) আরাম প্রিয়তাঃ
• বক্তা কোন শব্দের সহজ উচ্চারণ করতে যুক্ত ব্যঞ্জন ভেঙে বা নতুন ধ্বনির আগমন ঘটিয়ে অথবা অন্য উপায়ে ধ্বনিতে পরিবর্তন নিয়ে আসে, ফলে তখন ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। যেমন কর্ম>কম্মো।
৪) দ্রুত উচ্চারণের ত্রুটিঃ
• তাড়াহুড়ো করে কথা বলতে গিয়ে শব্দ মধ্যে কোথাও কোন বর্ণ লুপ্ত হয়ে ধ্বনিকে পরিবর্তিত করে দেয়। যেমন- কোথায় যাবে>কোজ্জাবে।
•মানসিক কারণ•
১) সাদৃশ্যগত কারণঃ
• সাদৃশ্যগত কারণে ধ্বনির পরিবর্তন হয়। বস্তুত ধ্বনি পরিবর্তনের সাদৃশ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন- বধূ>বৌ।
২) শ্বাসাঘাত জনিত কারণঃ
•শ্বাসাঘাত বা অসাবধানতা জনিত কারণে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে। এক্ষেত্রে অজ্ঞতা বা অসাবধানে শব্দের যথাস্থানে শ্বাসের আঘাত না পড়ে অন্যত্র শ্বাসাঘাত পড়ে। আর এই শাসাঘাতের ধ্বনি পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন-গামোছা> গাম্ ছা।
৩) আবেগময়তাঃ
•আবেগময়তা জন্যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে।স্নেহ প্রীতি বা শ্রদ্ধাবশে অনেক সময় কোন কোন শব্দকে অতিরিক্ত ধ্বনি দিয়ে উচ্চারণ করা হয়ে থাকে। যার ফলে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে যায়। যেমন-কাকা>কাকু।
৪) অজ্ঞতাঃ
•অজ্ঞতা বসে কখনও কখনও ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে যায়। হয়তো অজ্ঞতার জন্যই উচ্চারণে অক্ষমতা আসে বা না জেনে ভুল শব্দ শুদ্ধ ভেবে উচ্চারণ করতে গিয়ে ধ্বনি পরিবর্তন হয়। যেমন-ফর্ম>ফ্রম।
মোটকথা হলো,ধ্বনি পরিবর্তন একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এর পেছনে একাধিক কারণ সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে। এই পরিবর্তন ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তনের অংশ এবং এটি ভাষাকে জীবন্ত ও ব্যবহারোপযোগী রাখে।
Comments
Post a Comment