Skip to main content

ভারতের ইতিহাসে ১৭০৭ সালের গুরুত্ব আলোচনা করো।

 ভারতের ইতিহাসে ১৭০৭ সালের গুরুত্ব আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস মাইনর, তৃতীয় সেমিস্টার)।

         আমরা জানি যে,ভারতের ইতিহাসে ১৭০৭ সাল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়।কারণ হল এই বছরে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়। আর আওরঙ্গজেবের মৃত্যু মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা করে এবং ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন যুগের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। আর সেখানে আমরা দেখি-

               •মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতা

 আওরঙ্গজেবের দীর্ঘ শাসনকালে (১৬৫৮-১৭০৭) মুঘল সাম্রাজ্য তার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিল ঠিকই, কিন্তু একই সাথে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও বাড়তে শুরু করেছিল। তার দীর্ঘকালীন যুদ্ধ, বিশেষ করে দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়। এছাড়াও, তার কঠোর ধর্মীয় নীতি অনেক আঞ্চলিক শক্তি এবং গোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।

         •আওরঙ্গজেবের মৃত্যু ও উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব•

আওরঙ্গজেবের মৃত্যু ও উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্ব: আওরঙ্গজেবের কোন সুস্পষ্ট উত্তরাধিকারী মনোনীত না করায় তার মৃত্যুর পর মুঘল সিংহাসনের জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। তার তিন পুত্র - মুয়াজ্জাম, আজম শাহ এবং কামবক্স - নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য যুদ্ধ করেন। এই অন্তর্কলহ মুঘল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে দুর্বল করে দেয়।

                 •আঞ্চলিক শক্তির উত্থান•  

আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মারাঠা, শিখ, রাজপুত এবং অন্যান্য স্থানীয় শাসকরা নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে শুরু করে এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এর ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের ভাঙন আরও দ্রুত হয়।

             •পরবরর্তী মুঘল শাসকদের দুর্বলতা•

আওরঙ্গজেবের পর যারা মুঘল সিংহাসনে বসেন, তারা ছিলেন দুর্বল এব অযোগ্য। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে লিপ্ত অথবা আমির ওমরাহদের হাতের পুতুল। তাদের দুর্বল শাসনের কারণে সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে।

                •ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাব•

 মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। তারা বিভিন্ন আঞ্চলিক শাসকদের সাথে জোট তৈরি করে এবং ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের দিকে এগিয়ে যায়।

             পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ১৭০৭ সালে আওরঙ্গজেবের মৃত্যু ভারতীয় ইতিহাসের একটি জলবিভাজিকা ছিল। এই ঘটনা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের প্রক্রিয়া শুরু করে এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থান ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে। এর পরবর্তী দশক গুলিতে ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র অতিদ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...