ইলতুৎমিসের শাসনকার্যে কৃতিত্ব আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়, সংসদ দ্বাদশ শ্রেণী)।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, কুতুবউদ্দিন আইবকের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আরাম শাহ উত্তরাধিকারের দাবি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। তবে আরাম শাহ সিংহাসনে বসলেও মুসলিম অভিজাতরা ইলতুৎমিসকে সমর্থন করেন। তার প্রধান কারণ সিংহাসন বসার অধিকার,ক্ষমতা এবং জনসমর্থন ইলতুৎমিসের পক্ষেই ছিল। আর সেই জনসমর্থনকে সামনে রেখে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমর্থনে আরাম শাহকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করে ইলতুৎমিস সিংহাসনে বসেন।
•সমস্যা ও জটিল পরিস্থিতিঃ ইলতুৎমিস সিংহাসনে বসার পরেই নানান জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন।বলা যায় সেই সমস্যাগুলি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনি। ঠিক সেই সময়ে- হিন্দু শাসনকর্তারা এবং মুসলিম প্রাদেশিক শাসকরা ক্ষমতার লোভে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এছাড়াও রাজবংশের কোন কোন ব্যক্তির দিল্লির সিংহাসন দখল করার আকাঙ্ক্ষা ছিল। তবে সেই সময়ে মোঙ্গল জাতির আক্রমণের আশঙ্কা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
•সাম্রাজ্য বিস্তারঃ ইলতুৎমিস সিংহাসনে বসার পর ভয়াবহ বিপদের মধ্যে নিজেকে সামলে রেখে ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করেন। আর এই সময়ে তিনি নাসিরউদ্দিন কুবাচাকে লাহোর, উচ্চ প্রভৃতি এলাকা থেকে বিতাড়িত করে নিজেকে নিষ্কণ্টক করেন। আবার- মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খাঁয়ের আক্রমণ থেকে ভারতের তুর্কি রাজ্যকে নিরাপদ রাখতে তিনি বদ্ধপরিকর হন। তাছাড়া রাজপুত কর্তৃক ছিনিয়ে নেওয়া রণথম্ভোরের দুর্গ তিনি পুনর্দখল করেন।
•সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীকরণঃ ইলতুৎমিস তার সাম্রাজ্যেকে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বহিরাগত আক্রমণ থেকে দিল্লি সুলতানীর নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করেছিলেন। পাশাপাশি নানা সংস্কারের মাধ্যমে নবগঠিত মুসলিম রাজ্যের শাসন কাঠামোকে দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আবার সৈন্য বাহিনী গড়ে তোলার পাশাপাশি সুলতানী যুগের রৌপ্যমুদ্রা তঙ্কা, তাম্রমুদ্রা, জিতল এর প্রচলন করেন।
ইকতা ব্যবস্থাঃ ইলতুৎমিসের শাসনকালে একটি অন্যতম প্রশাসনিক সংস্কার হলো একটা ইক্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আসলে এটি একটি ভূমি বা জমি বিলি ব্যবস্থা হলেও এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তিনি সামন্ততান্ত্রিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটান। অতঃপর তিনি সমগ্ৰ সুলতানী এলাকাকে কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় আনেন।
Comments
Post a Comment