প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিপির গুরুত্ব আলোচনা করো।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিপির গুরুত্ব সর্বাধিক। তাই প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের মধ্যে লিপিকে প্রথম স্থানে রাখা হয়। কারণ লিপি তথ্য সরবরাহে অমূল্য সম্পদ। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, অশোকের শিলালিপি, সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তি, চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল লিপি প্রভৃতি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। আর এই সকল লিপি থেকে যে সকল তথ্য আমরা পাই তা হলো-
•রাজার রাজ্যসীমাঃ কখনও লিপির প্রাপ্তিস্থান থেকে, আবার কখনও লিপিতে উৎকীর্ণ তথ্য থেকে সংশ্লিষ্ট রাজার রাজ্যসীমা সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়। যেমন সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে রাজা সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যসীমা সম্পর্কে আমরা তথ্য পাই।
•রাজাদের কার্যকলাপঃ লিপিতে উৎকীর্ণ তথ্যাদি থেকে রাজাদের যুদ্ধ জয়, ধর্মপ্রচার, আদেশ উপদেশ, সংস্কার প্রভৃতি জনকল্যাণ মূলক কার্যাবলী সম্পর্কে জানা যায়। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, অশোকের শিলালিপি থেকে সে যুগের ধর্মপ্রচার, কলিঙ্গ যুদ্ধ, প্রজা কল্যাণমূলক কার্যাদি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
•ধর্মবিশ্বাস ও শিল্পকলা ঃ দেব মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ ধর্মীয় উদ্দেশ্যে প্রচারিত বেসরকারি লিপিগুলি ধর্ম ও শিল্পকলার ইতিহাস রচনার এক অপরিহার্য উপাদান। আর এখানে অশোকের ধর্মলিপিগুলি থেকে সে যুগে বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ধর্ম নয়, লিপিগুলিতে ব্যবহৃত ভাষা থেকে সে যুগের ভাষা চর্চার সম্পর্কে ধারণা করা যায়। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি অশোকের লিপি থেকে ব্রাহ্মী,খরোষ্ঠী, প্রাকৃত প্রভৃতি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
•কৃষি ও অর্থনীতিঃসাতবাহন, গুপ্ত ও গুপ্তোত্তর যুগের তামা পাতে উৎকীর্ণ যে ভূমিদান সংক্রান্ত লিপিগুলি পাওয়া যায়, তা থেকে তৎকালীন ভূমি ও কৃষি ব্যবস্থা এবং রাজ্যের অর্থনীতি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়।। যেমন ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মালদাহ জেলায় আবিষ্কৃত তাম্রলিপি থেকে তৎকালীন পালরাজা মহেন্দ্র পাল বৌদ্ধদের জমি দান করেছিলেন। আসলে লিপি হল ইতিহাসের জীবন তো দলিল।
Comments
Post a Comment