বাঙলা ভাষা প্রবন্ধের মূল ভাববস্তু নিজের ভাষায় আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, দ্বাদশ শ্রেণী, তৃতীয় সেমিস্টার)।
•আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ২০শে ফেব্রুয়ারি,তিনি যখন আমেরিকায় ছিলেন সেই সময়কালে 'উদ্বোধনী' পত্রিকার (১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই জানুয়ারি প্রথম প্রকাশ)সম্পাদক মহাশয়কে একটি পত্র প্রেরণ করেছিলেন। আমাদের আলোচ্য প্রবন্ধটি সেই পত্রের একটা অংশ স্বরূপ। বিবেকানন্দ প্রেরিত সেই পত্রটি উদ্বোধন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আর সেই পত্রের ষষ্ঠ অধ্যায় 'ভাববার কথা'নাম দিয়ে পত্রটি প্রকাশিত হয়। যেটি আমাদের পাঠ্য বিষয় হিসাবে 'বাঙলাভাষা' প্রবন্ধ নামে পরিচিত।যে প্রবন্ধ থেকে -
•আমরা জানতে পারি যে, ভাষা মানুষের মনের কথা প্রকাশ করে।তবে ইতিহাসের পাতায় নজর দিলে আমরা দেখতে পাই যে, সেই সময়কালে আমাদের এই বাংলায় সংস্কৃত ভাষা প্রচলিত ছিল। আর সংস্কৃত ভাষা প্রচলিত থাকার কারণে সমস্ত বিদ্যাচর্চা, জ্ঞানচর্চা, পাঠ সবই এই ভাষায় দেওয়া হতো। যার ফলে সাধারণ মানুষের সাথে বিদ্বানব্যক্তি এবং পন্ডিত মানুষদের মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টি হয়। তবে-
• আমরা জানি ভগবান গৌতম বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সকলেই লোকহিতের জন্য অর্থাৎ মানুষের কল্যাণকরের জন্য নানা বাণী প্রচার করে গেছেন। এই সকল মনিষীগণ যে সকল বাণী প্রচার করে গেছেন তা সবই তাঁদের মুখের ভাষা অর্থাৎ কথ্য ভাষা। আসলে তাঁরা সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য এই মুখের ভাষায় বাণী প্রচার করেছেন। তবে-
•এক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখা ভালো যে, আমরা যখন কোন বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে চিন্তা করি, বিশেষ করে আধ্যাত্মিক বা আত্মিক বা তাত্ত্বিক চিন্তা করি, সেই চিন্তার ভাষা কিন্তু আমাদের ঘরোয়া ভাষা কিংবা মুখের ভাষা হয়। কিন্তু সেই চিন্তা,চেতনার বিষয়কে আমরা যখন লিখিতভাবে প্রকাশ করি-তখন সেই ভাষার মধ্যে সংস্কৃত ভাব যেমন থাকে,থাকে ভাবের গভীরতা, আবার তেমনি থাকে ভাষার জটিলতা। আসলে এই জটিলতা হয় এই কারণে যখন আমরা সংস্কৃত ভাষার গদাই লশকরি চাল (ভারী নৌকার লস্কর বা খালাসির মত অলসগতি বা ধীরগতি সম্পন্ন) নকল করতে চাই। আর এই নকল করতে গিয়ে আমাদের প্রিয় ভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষা এক অস্বাভাবিক রূপ ধারণ করে থাকে। কিন্তু-
•এই বাংলা ভাষার মধ্যে একটা প্রাণ আছে, আছে সজীবতা। কিন্তু আমরা সেই দিকে লক্ষ্য না দিয়ে পাণ্ডিত্য জাহির করার জন্য সংস্কৃত ভাষার দিকে ঢলে পড়ি।যার ফলে আমাদের ভাষার মধ্যে যেমন আড়ষ্টতা এসে যাচ্ছে।ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের ভাষা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়ছে। কিন্তু এভাবে ভাষা এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না। তাই-
• প্রাবন্ধিক বিবেকানন্দ এই ভাষার উন্নতির জন্য কলকেতার ভাষা প্রসঙ্গ এনেছেন। তিনি আরোও বলেছেন যে, আমাদের কথ্য ভাষার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন উপভাষাও আছে। তবে কাজের তাগিদে বা অন্যান্য কারণে কলকাতায় জনসমাগম অনেকটা বেশি।আর কলকাতার জনসমাগম বেশি হওয়ার কারণে স্বামী বিবেকানন্দ মান্য ভাষা হিসেবে কলকেতার ভাষার প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন।তবে-
•আমাদের দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন অধিকতর উন্নতস্তরে পৌঁছে যাবে, তখন পূর্ব-পশ্চিমী ভেদ আর থাকবে না। ঠিক তখনই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে বৈদ্যনাথ পর্যন্ত সকল বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে একটি ভাষা প্রচলিত হবে। আর সেই ভাষাটি হবে কলকেতার ভাষা। আসলে-
•আসলে কলকেতার ভাষা অনেক সহজ এবং যা আপামর জনসাধারণ অতি সহজে গ্রহণ করতে পারে। তাই আমাদের করণীয়- সকল স্তরের মানুষ যে ভাষা বুঝতে পারে সেই ভাষাকেই প্রাধান্য দেওয়া। তবে এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, কলকেতার ভাষাকে মানত্য দিতে গিয়ে কোন আঞ্চলিক ভাষাকে অবমাননা করা উচিত হবে না। আসলে ভাষা হল আমাদের মনের ভাব ভাবনার একমাত্র বাহন। এছাড়াও -
•ভাষার মধ্যে যখন বিশেষ্য বিশেষণ ভাব থাকে, অলংকার সমৃদ্ধ ভাব থাকে, ছন্দময়তা ভাব থাকে, তখন সেই ভাষার আভিজাত্যতা কিছুটা হলেও নষ্ট হয়। কারণ ভাষার এই আড়ষ্টতা সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। তাই এই ভাষাকে আপামর জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দিতে কিংবা গ্রহণযোগ্যতা করে তুলতে ভাষাকে অবশ্যই সর্বজনবিদিত এবং অলংকার বিহীন সাবলীল হতে হবে। তাহলে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এই ভাষাকে হৃদয় ভরে গ্রহণ করবে এবং দুহাত ভরে এই ভাষার মধুময় রস কোমল ওষ্ঠ রসে পান করবে।
•ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা নোটস সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel ।
Comments
Post a Comment