Skip to main content

ভারতীয় (2nd Sem-Pol.Sc) সংবিধানের বিভিন্ন উৎস গুলি আলোচনা করো।

 ভারতীয় সংবিধানের বিভিন্ন উৎস গুলি আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)।

             •আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,ভারতের সংবিধান প্রণয়নে অনেক দেশের সংবিধান থেকে উপাদান গ্রহণ করে ভারতীয় সংবিধান রচিত হয়েছে।আর তার মধ্যে প্রধান উৎস গুলি হল-ভারত সরকার আইন ১৯৩৫, ব্রিটিশ সংবিধান, মার্কিন সংবিধান, ফরাসি সংবিধান, আইরিশ সংবিধান এবং অন্যান্য বিভিন্ন দেশের সংবিধান। শুধু তাই নয়,এর বাইরেও ভারতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকেও সংবিধানের বিভিন্ন অংশে প্রতিফলিত করা হয়েছে।আর সেখানে উৎসগুলো হলো-

 •ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ঃ ১৯৩৫ এর আইনটি ভারতীয় সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, রাজ্যপালের পদ, বিচার ব্যবস্থার কাঠামো, সরকারি কর্ম কমিশন, এবং জরুরি অবস্থার বিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এই আইন থেকে নেওয়া হয়েছে।

 •যুক্তরাজ্যের সংবিধানঃ সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা, আইনসভার নিম্নকক্ষের প্রাধান্য (লোকসভা), রাষ্ট্রপতি পদাধিকার বলে রাষ্ট্রের প্রধান হলেও কার্যত নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান, একক নাগরিকত্ব, এবং সংসদীয় বিশেষাধিকারের ধারণা যুক্তরাজ্যের সংবিধান থেকে গৃহীত হয়েছে।

 •মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানঃ ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা, উপরাষ্ট্রপতির পদ, এবং রাষ্ট্রপতির অপসারণ পদ্ধতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দ্বারা গৃহীত হয়েছে।

 •আয়ারল্যান্ডের সংবিধানঃ রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি আয়ারল্যান্ডের সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই সাথে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতিও আয়ারল্যান্ডের সংবিধান দ্বারা প্রভাবিত।

কানাডার সংবিধানঃ কানাডার সংবিধান একটি শক্তিশালী কেন্দ্র সহ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন, এবং অবশিষ্ট ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত থাকার ধারণাটি কানাডার সংবিধান থেকে গৃহীত হয়েছে।

 •অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানঃ ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন সংক্রান্ত তালিকা এবং আন্তঃরাজ্য বাণিজ্য ও বাণিজ্যের স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিষয়গুলি অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান থেকে গৃহীত হয়েছে।

জার্মানির(Weimar) সংবিধানঃদেশের  জরুরি অবস্থার সময় মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখার বিধানটি জার্মানির  সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে।

 •সোভিয়েত ইউনিয়নের সংবিধানঃ ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য (Fundamental Duties) সোভিয়েত ইউনিয়নের (তৎকালীন) সংবিধান থেকে গৃহীত হয়েছে।

 •ফ্রান্সের সংবিধানঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রজাতন্ত্রের ধারণা, স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শ প্রভৃতি ফ্রান্সের সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধান থেকে সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতির ধারণাটি নেওয়া হয়েছে।

           পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, উপরিউক্ত দেশগুলি ছাড়াও ভারতের নিজস্ব রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং ভারতীয় সংবিধান প্রণেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিও সংবিধান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তবে ভারতের সংবিধান বিভিন্ন উৎস থেকে ধারণা ও নীতি গ্রহণ করে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলোকে গ্রহণ ও অভিযোজিত করেছে। আর এই কারণে ভারতের সংবিধানকে প্রায়শই বিভিন্ন দেশের সংবিধানের 'মিশ্রণ' বলে উল্লেখ করা হয়।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...