শিক্ষায় মূল্যায়নের ভূমিকা বা গুরুত্ব আলোচনা করো।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, মূল্যায়ন সম্পর্কে গতানুগতিক ধারণায় শিক্ষার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা খুবই সীমাবদ্ধ। কারণ পাঠক্রম শেষে শিক্ষার্থীর অর্জিত অভিজ্ঞতা পরিমাপেই এটি ব্যবহৃত হয়। তবে মূল্যায়ন সম্পর্কিত আধুনিক ধারণায় এর ব্যবহারের পরিধি বেশ বিস্তার লাভ করেছে। যেখানে আধুনিক শিক্ষার প্রধান তিনটি অংশের মধ্যে মূল্যায়ন একটি অন্যতম। তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে এই মূল্যায়নের ভূমিকা বা গুরুত্ব বেশ তাৎপর্যময়। আর সেখানে -
১) মূল্যায়ন ও শিক্ষার উদ্দেশ্যঃ আমরা জানি মূল্যায়ন শিক্ষার উদ্দেশ্যকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। যেখানে নির্দিষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য উদ্দেশ্য ব্যতীত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটেছে কিনা তা পরিমাপ করা যায় না তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য নিরূপণ, শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি বাস্তবরূপ দেওয়া সম্ভব কিনা তা মূল্যায়নের কৌশলের দ্বারা নিরূপণ করা দরকার। আর সে কারণেই শিক্ষার উদ্দেশ্য স্পষ্টকরণে মূল্যায়ন সাহায্য করে থাকে।
২) মূল্যায়ন ও পাঠদান পদ্ধতিঃ আমাদের নির্ধারিত শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি সতর্কতার সাথে রচিত। যেখানে প্রয়োজনীয় মূল্যায়নের কৌশলগুলি বাস্তবায়িত হয়নি সে ক্ষেত্রে বলা হয় যে, পাঠদান পদ্ধতির মধ্যে ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। আর এক্ষেত্রে পাঠদান পদ্ধতির উন্নতিসাধন করতে মূল্যায়নের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ এই মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, সুষ্ঠুভাবে এবং সঠিক মাত্রায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবর্তন ঘটাতে গেলে পাঠদান পদ্ধতির আরো উন্নতি সাধন প্রয়োজন।
৩) মূল্যায়ন ও সু-শিক্ষণঃ বর্তমানে ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীর শিখনে অবাঞ্চিত প্রভাব বিস্তার করেছে। কারণ সেখানে পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের পরিমাপ করা হয়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা সেই ভাবে নিজেদের প্রতিনিয়ত প্রস্তুত করে চলেছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র কতগুলি তথ্য মুখস্থ করে। আর সেখানে শিক্ষার্থী নোটবই, সাজেশন, টিউটোরিয়াল হোম প্রভৃতির ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছে। তবে এই সকল উপাদান গুলি কখনোই সুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিচয় নয়। তাই শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নের মাধ্যমে সুশিখনে সাহায্য করবে।
৪) মূল্যায়ন ও পাঠক্রমঃ পাঠক্রম এবং শিক্ষা উপকরণের উন্নতিকরণে গঠনমূলক এবং চূড়ান্ত মূল্যায়ন উভয়েরই ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পাঠক্রমের পরিবর্তন, পরিবর্তন ও পরিমার্জনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা জানা যায় পাঠক্রম মূল্যায়নের মাধ্যমে।
৫) মূল্যায়ন ও অভিভাবক এবং সমাজ ঃ শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা সম্পর্কিত নিয়মিত তথ্য সমাজের নিকট পৌঁছে দেওয়ার দায়বদ্ধতা মূল্যায়ন গ্রহণ করে। সেই সাথে গ্রহণ করে নির্মিত তথ্য অভিভাবকদের সরবরাহের ক্ষেত্রে। আর এটি গ্রহণ করে কেবলমাত্র মূল্যায়ন নামক বিষয়টি।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, শিক্ষায় মূল্যায়নের গুরুত্ব বা ভূমিকা বেশ তাৎপর্যময়। আর এখানে উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বলতে পারি যে, শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি, শিক্ষকের পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশ, পাঠক্রম, সামাজিক চাহিদা ইত্যাদি সব দিক থেকে বিচার করা সম্ভব হয় মূল্যায়নের মাধ্যমে। আর সেই কারণেই শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়নের গুরুত্ব বা তাৎপর্য বা ভূমিকা বিশেষভাবে অনস্বীকার্য।
Comments
Post a Comment