Skip to main content

জ্ঞানের উৎস (2nd Semester ,Philosophy)সম্পর্কে কান্টের বিচারবাদ ব্যাখ্যা ও বিচার করো।

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে কান্টের বিচারবাদ ব্যাখ্যা ও বিচার কর(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সেমিস্টার দর্শন মাইনর)।

আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে পাশ্চাত্য দর্শনে বেশ অনেকগুলি মতবাদ লক্ষ্য করা যায়। সেই সকল মতবাদগুলির মধ্যে অন্যতম মতবাদ হল কান্টের মতবাদ। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, পাশ্চাত্য দর্শনে কান্ট একজন বিচারবাদী দার্শনিক হিসেবে পরিগণিত। যিনি গতানুগতিক অভিজ্ঞতাবাদ এবং বুদ্ধিবাদের মধ্যে সমন্বয়ে সাধন করেছেন।। আর সেখানে-

অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিবাদের মধ্যে সমন্বয়সাধনঃ বিচারবাদী দার্শনিক কান্ট বলেন যে, আমাদের সকল প্রকার জ্ঞান শুরু হয় অভিজ্ঞতা দিয়ে। এর পরক্ষণেই তিনি আবার বলেন যে, অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের জ্ঞান শুরু হয়, শেষ নয়। কারণ জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধিরও যথেষ্ট ভূমিকা আছে। তাই তিনি মনে করেন, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা এই দুই এর মধ্যে কোন একটি দ্বারা কখনোই যথার্থ জ্ঞান লাভ করা যায় না। কিন্তু -

     • অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরা বলেন যে, অভিজ্ঞতাই জ্ঞান লাভের একমাত্র পথ। আবার বুদ্ধিবাদীরা বলেন যে, বুদ্ধি হল জ্ঞান লাভের একমাত্র পথ। তবে এখানে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরা ক্যান লাভ এর ক্ষেত্রে বুদ্ধির অবদানকে অমান্য করে ইন্দ্রিয়ানুভবকেই জ্ঞানের একমাত্র পথ বলে উল্লেখ করেন। আবার বুদ্ধিবাদীরা জ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার অবদানকে অস্বীকার করি বুদ্ধিকেই যথার্থ জ্ঞানের উৎস বলে মনে করেন। তাই বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ হলো চরম মতবাদ।তবে-

    অভিজ্ঞতাবাদ এবং বুদ্ধিবাদের মতবাদ আংশিক সত্য কিন্তু তাদের মতবাদ কোন মতেই ত্রুটিমুক্ত নয়। আর সেই কারণে কান্ট বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার অবদানকে নানা ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে উভয়কেই জ্ঞানের উৎপত্তির আবশ্যিক শর্ত বলে মনে করেন। তাই তিনি প্রকৃত জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধির প্রয়োজনের কথা বলেন। আর সেই কারণে কান্টের মতবাদ 'বিচারবাদ' নামে পরিচিত।

কান্টের মতে জ্ঞানের উৎসঃ বিচারবাদী দার্শনিক কান মনে করেন, জ্ঞানের দুটি দিক রয়েছে-একটি হলো উপাদানগত দিক এবং অপরটি হল আকারগত দিক।যেখানে আমরা বুদ্ধির সাহায্যে পাই জ্ঞানের আকার, আর অভিজ্ঞতার সাহায্যে আমরা পাই জ্ঞানের উপাদান। এই জ্ঞানের উপাদান হল সংবেদন। যে সংবেদন আমরা অভিজ্ঞতার সাহায্যে লাভ করি। তবে এই সংবেদনগুলি বিশৃঙ্খল, অবিন্যস্ত ও অসংলগ্ন অবস্থায় থাকে। আর সেই কারণে সংবেদনগুলি জ্ঞান নয়। তবে-

    বুদ্ধিই এই বিশৃংখল সংবেদনগুলির ওপর তার আকার আরোপ করে, তারপর তা জ্ঞানে পরিণত হয়। এখানে কান্ট বলেন যে, জ্ঞানের আকার দু' ধরনের-১) বোধগত আকার ২) ইন্দ্রিয়ানুভূতির আকার। কোন কিছুকে প্রত্যক্ষ করতে গেলে তা দেশ ও কালের মধ্যে দিয়ে প্রত্যক্ষ করতে হয়। কারণ আমাদের সকল বাহ্য প্রত্যক্ষ দেশ ও কালের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত থাকে। সেই জন্য দেশ ও কালকে ইন্দ্রিয়ানুভূতির পূর্বতঃসিদ্ধ আকার বলা হয়ে থাকে। আসলে রাজ্য জগৎ থেকে পাওয়া সংবেদন রাশি দেহগত ও কালগত আকার নিয়ে মনের কাছে উপস্থিত হলে মন তার ওপর কতকগুলি বোধজাত আকার আরোপ করে। আর তাদের সাহায্যে যখন সংবেদন রাশিকে সুসংবদ্ধ করে তখনই জ্ঞান উৎপন্ন হয়ে থাকে। সুতরাং-

   জ্ঞানের উপাদান আসে অভিজ্ঞতা থেকে আর জ্ঞানের আকার অর্থাৎ দেশ কাল কার্যকরণ ইত্যাদি আসে বুদ্ধি থেকে।  তাই কান্ট বলেন-

     "জ্ঞানের আকার ছাড়া অভিজ্ঞতা অন্ধ, আবার অভিজ্ঞতা ছাড়া জ্ঞানের আকার শূন্যগর্ভ।"

       পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, কান্টের সিদ্ধান্ত হল জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি উভয়েরই প্রয়োজন আছে। কোনো একটিকে ছাড়া জ্ঞানলাভ করা সম্ভব নয়। এইভাবে কান্ট বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ নামক দুই চরম মতবাদের সিদ্ধান্তকে সংযত করে তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছেন।আর কারণে কান্টকে বিচারবাদী দার্শনিক বলা হয়।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন  ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏.

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...