Skip to main content

ভারতীয় (2nd.Sem-PolSc.) সংবিধানের প্রস্তাবনার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

 ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর) ।

আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,বিশ্বের বৃহত্তম সংবিধানের মধ্যে ভারতীয় সংবিধান অন্যতম একটি সংবিধান। আর সেখানে ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা হলো- সংবিধানের মুখবন্ধ বা ভূমিকা। যে মুখবন্ধ বা ভূমিকার তাৎপর্য অপরিসীম। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, প্রস্তাবনাটি হলো ভারতীয় সংবিধানের আত্মা বা হৃদয়। সেই সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রধান তাৎপর্যগুলি হলো-

 সংবিধানের মূলনীতি ও আদর্শঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের মূলনীতি, লক্ষ্য ও আদর্শ গুলিকে তুলে ধরা হয়েছে। আসলে এটি নির্দেশ করে যে, ভারত একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রাষ্ট্র। শুধু তাই নয় এই সংবিধান ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব নিশ্চিত করবে।

 সংবিধান কর্তৃত্বের উৎসঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায়  স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, সংবিধানের ক্ষমতার উৎস হল ভারতের জনগণ। আর এই প্রেক্ষিতে সেখানে বলা হয়েছে-"আমরা, ভারতের জনগণ"। ভারতীয় সংবিধানের এই মূলমন্ত্র জনগণের সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা করে থাকে।

 সংবিধানের উৎসঃ সংবিধানের প্রস্তাবনা সংবিধানের উদ্দেশ্যগুলিকে ব্যাখ্যা করে থাকে। আর সেখানে বলা হয়েছে যে, ভারতকে এমন একটি  রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করা হবে যেখানে সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত হবে। শুধু তাই নয়, ভারতের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় থাকবে।

 ব্যাখ্যার সহায়কঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সরাসরি কোনো আইনি ক্ষমতা প্রদান করার কথা বলা নেই, তবে সংবিধানের কোনো ধারা বা শব্দের অস্পষ্টতা দেখা দিলে সেখানে প্রস্তাবনার সাহায্য নেওয়া হয়।যেটি সংবিধানের ব্যাখ্যাকারীদের কাছে একটি নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে থাকে।

 ঐতিহাসিক তাৎপর্যঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা গণপরিষদের সদস্যদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। আসলে এটি স্বাধীনতা আন্দোলনের আদর্শ এবং একটি নতুন জাতি গঠনের অঙ্গীকার বহন করে।

 রাজনৈতিক তাৎপর্যঃ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনার অংশটি ভারতের রাজনৈতিক কাঠামোর মৌলিক নীতি রক্ষা করে। আর এই প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, ভারতের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে সংবিধানের প্রস্তাবনার অংশটি।

 নৈতিক তাৎপর্যঃ ভারতীয় সংবিধানের নৈতিক তাৎপর্য ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মতো নৈতিক মূল্যবোধের উপর জোর বা গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। যা একটি সুস্থ ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য বিষয়।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ভারতীয় সংবিধানের মূল স্তম্ভ হল সংবিধানের ভূমিকা বা মুখবন্ধ। আর সেটি ভারতীয় সংবিধানে 'প্রস্তাবনা' নামে তাৎপর্যময়। আসলে ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা কেবল একটি ভূমিকা নয়, এটি সংবিধানের দর্শন, উদ্দেশ্য এবং মূল্যবোধের সারসংক্ষেপ বলা শ্রেয়।আর সেটি ভারতীয় রাষ্ট্রের চরিত্র এবং নাগরিকদের অধিকার ও প্রত্যাশার বিষয়টি স্পষ্টতার পরিচয় বহন করে থাকে।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, ব্যাখ্যা, ভিডিও এবং সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel এবং shesherkabita blog.com ওয়েবসাইট।

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...