কান্টের নীতিতত্ব(Ethics)ব্যাখ্যা ও বিচার করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, দর্শন, মাইনর)
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, কান্ট ছিলেন একজন প্রভাবশালী জার্মান দার্শনিক।তবে তাঁর নীতিতত্ত্ব দর্শনে কর্তব্যবাদ নামেও পরিচিত। আর সেই নীতিতত্ত্ব অনুসারে আমরা জানি যে,কোনো কাজের নৈতিক মূল্য তার ফলাফলের উপর নির্ভর করে না, বরং বলা যায় যে,কাজটি নীতিগতভাবে সঠিক কিনা তার উপর নির্ভর করে। তাই কান্ট মনে করেন যে, কিছু নৈতিক নিয়ম আছে যা সার্বজনীন এবং নিঃশর্তভাবে প্রযোজ্য।আর এই নীতির প্রেক্ষিতে-
•কান্টের নীতিতত্বের মূল ধারণা•
১) সদিচ্ছাঃ কান্ট বিশ্বাস করতেন যে, একমাত্র সদিচ্ছাই ভালো। বুদ্ধি, প্রতিভা বা সুখ - এগুলো সবই খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে বা হয়।কিন্তু সদিচ্ছা সবসময়ই অন্তর্নিহিত ভাবে ভালো। আর সদিচ্ছা মানে কর্তব্যের খাতিরে কাজ করা, যে কাজ কোনো প্রকার ব্যক্তি স্বার্থ বা অনুভূতির বশে করা হয় না।
২) নীতি তত্ত্বঃ কান্টের মতে, নৈতিক কাজ হল সেই কাজ যা কর্তব্যের খাতিরে করা হয়। আসলে কর্তব্য হল নৈতিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। তবে আমরা যখন কোনো কাজ করি তখন কেবল নৈতিক নিয়ম মেনে চলি। আর নৈতিক নিয়ম মেনে যখন কাজ করি, তখন সেই কাজ নৈতিক মূল্য লাভ করে।
৩) সার্বিকনীতিঃ কান্টের নীতিতত্ত্বের কেন্দ্রীয় ধারণা হল সার্বিক নীতি।আর এটি একটি নিঃশর্ত আদেশ যা আমাদের সবসময় মেনে চলতে হয়, আমাদের ইচ্ছা বা লক্ষ্যের উপর নির্ভর না করে। কান্ট সার্বিক নীতিকে বিভিন্নভাবে সূত্রায়িত করেছেন, যার মধ্যে দুটি প্রধান:
৪) স্বায়ত্তশাসনঃ কান্ট মনে করতেন যে, নৈতিক আচরণের জন্য মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকা প্রয়োজন। আমরা যখন যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে নৈতিক নিয়ম নির্ধারণ করি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করি, তখন আমরা স্বায়ত্তশাসিত হই। নৈতিকতা কোনো বাহ্যিক কর্তৃপক্ষ (যেমন ঈশ্বর বা সমাজ) দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়, বরং তা আমাদের নিজস্ব যুক্তিবোধ থেকে উৎপন্ন হওয়া উচিত।
•কান্টের নীতি তত্ত্বের বিচার বা সমালোচনা•
১) প্রবল কঠোরতাঃ কান্টের নীতিতত্ত্ব অনেক সময় আমাদের কাছে খুব কঠোর বলে মনে হয়। তবে বলে রাখা ভালো যে,সার্বিক নীতির উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ার কারণে বিশেষ পরিস্থিতিতে নমনীয়তা দেখানোর সুযোগ থাকে না। উদাহরণস্বরূপ-
যদি একজন খুনি আপনার বন্ধুর খোঁজ করে এবং আপনি জানেন সে কোথায় লুকিয়ে আছে, কান্টের নীতি অনুসারে আপনার সত্য বলা উচিত, যা আপনার বন্ধুর জীবন বিপন্ন করতে পারে।
২) তীব্র নীতির সংঘাতঃ কান্টের তত্ত্ব নীতি সংঘাতের সমাধান দিতে ব্যর্থ। এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যে, যখন দুটি নৈতিক কর্তব্য একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, এবং কান্টের নীতি আমাদের বলে না যে কোনটি অগ্রাধিকার পাবে।
৩) ফলাফলের উপেক্ষাঃ কান্ট নৈতিক মূল্যের জন্য কাজের ফলাফলের গুরুত্ব দেন নি, যা বাস্তব জীবনে অনেক সময় সমস্যা তৈরি করতে পারে। কোনো কাজের পরিণতি যদি অত্যন্ত ভয়াবহ হয়, তবুও যদি কাজটি নীতিগতভাবে সঠিক হয়, কান্টের মতে তা নৈতিক হবে। আসলে বাস্তব পরিস্থিতি কান্টের নীতিতত্ত্ব প্রয়োগ করা ভীষণ কঠিন।
Comments
Post a Comment