মূল্যায়ণের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, এডুকেশন)।
•মূল্যায়ণের সুবিধা•
১) শিক্ষার্থীর অগ্রগতি নির্ণয়ঃ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পঠন-পাঠনে কতটা উন্নতি লাভ করেছে, তা জানতে পারে। এর ফলে তারা তাদের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে উন্নতির চেষ্টা করতে পারে।
২) এখন পদ্ধতির যাচাইঃ শিক্ষকরা মূল্যায়নের ফলাফলের মাধ্যমে তাদের শিক্ষণ পদ্ধতি কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা বুঝতে পারেন। দুর্বল ফলাফল দেখলে তারা তাদের পড়ানোর কৌশল পরিবর্তন করতে পারেন।
৩) প্রেরণা বৃদ্ধিঃ নিয়মিত মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আরও বেশি মনোযোগী ও উৎসাহিত করতে পারে। ভালো ফল পেলে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
৪) দক্ষতা ও দুর্বলতা নির্ণয়ঃ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশেষ দক্ষতা এবং দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা যায়। এর ফলে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিকনির্দেশনা দেওয়া সম্ভব হয়।
৫) প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টিঃ একটি সুষ্ঠু মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি করতে পারে, যা তাদের আরও ভালো করতে উৎসাহিত করে।
৬) শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি করণের সহায়তাঃ মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের তাদের পরবর্তী স্তরের পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে।
৭) অভিভাবকদের অবগতিকরণঃ মূল্যায়নের ফলাফল অভিভাবকদের তাদের সন্তানের শিক্ষাগত অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে এবং তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।
৮) বিদ্যালয়ের উন্নতিসাধনঃ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার উন্নতি: সামগ্রিক মূল্যায়নের তথ্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং অন্যান্য নীতি নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে।
• মূল্যায়নের অসুবিধা•
১) মানসিক চাপসৃষ্টিঃ মূল্যায়নের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো পরীক্ষার্থীদের মনে ভয় বা খারাপ ফলাফলের আশঙ্কায় অনেক শিক্ষার্থী মানষিক চাপের শিকার হতে পারে।
২) সময় অপচয়ঃ একটি সুষ্ঠু মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে যথেষ্ট সময়, শ্রম ও অর্থের প্রয়োজন হয়।
৩) জ্ঞানের অভাবঃ অনেক মূল্যায়ন পদ্ধতি শুধুমাত্র মুখস্থবিদ্যার উপর জোর দেয়, যা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞান ও দক্ষতা যাচাই করতে ব্যর্থ হতে পারে।
৪) সৃজনশীলতার অভাবঃ কিছু মূল্যায়ন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা বিকাশে বাধা দিতে পারে।
৫) পক্ষপাতিত্বঃ মূল্যায়নকারীর ব্যক্তিগত ধারণা বা পছন্দের কারণে ফলাফলে পক্ষপাতিত্ব দেখা যেতে পারে।
৬) তুলনামূলক বিচারঃ অনেক সময় মূল্যায়নের ফলাফল শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলনামূলক বিচার সৃষ্টি করে, যা তাদের আত্মমর্যাদাকে আঘাত করতে পারে।
৭) সীমাবদ্ধতা ও প্রতারণাঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর সামগ্রিক জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পূর্ণরূপে মূল্যায়ন করা কঠিন।তবে কিছু মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ থাকে, যা মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, একটি কার্যকর মূল্যায়ন ব্যবস্থা শিক্ষাব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত। যেখানে মূল্যায়নের সুবিধা ও অসুবিধা উভয় দিক বিবেচনা করে একটি সুষম ও গঠনমূলক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিক্ষণ ও শিখনকে আরও উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।
Comments
Post a Comment