Skip to main content

সিঁড়ি(4th Sem- Bengali Minor)ভেঙে ভেঙে উপন্যাসে একদিকে মৃত্যুর রহস্য অপরদিকে দাম্পত্য জীবনের ভাঙন,এই দুই মিলে উপন্যাসের মূল কাহিনীটি এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে- আলোচনা করো।

সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে উপন্যাসে একদিকে মৃত্যুর রহস্য অপরদিকে দাম্পত্য জীবনের ভাঙন,এই দুই মিলে উপন্যাসের মূল কাহিনীটি এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে- আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, বাংলা মাইনর)।

         আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি অন্যতম গোয়েন্দা প্রধান উপন্যাস 'সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে'। আর সেই গোয়েন্দা প্রধান উপন্যাসের মূল ভাব বস্তুর মধ্যে আমরা অহংকারের পতন এবং অনুশোচনা দহন মানুষকে কিভাবে বিনষ্ট করে তা আমরা দেখতে পাই। আর সেই বিষয়টি আমরা নিম্ন সূত্রাকারে তুলে ধরলাম।যেখানে-

         সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বাসুদেব সেনগুপ্ত।যিনি একজন প্রাক্তন তুখোড় খেলোয়াড়।তবে তিনি খেলোয়াড় হলেও যৌবনে নিজের খ্যাতি ও প্রতিপত্তির অহংকারে অন্যদের প্রবলভাবে অবহেলা করতেন। তবে সেই বাসুদেব সেনগুপ্তকে ডাক্তার  সিঁড়ি ভাঙতে নিষেধ করেন। তবুও তিনি ডাক্তারের নির্দেশকে অমান্য করে লিফট খারাপ থাকায় এবং নিজের শারীরিক সক্ষমতার অহংকারে আটতলার ফ্ল্যাটে সিঁড়ি ভেঙে উঠেন।সেই ৮ তলার সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে সেনগুপ্ত মারাত্মকভাবে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। তবে-

             বাসুদেব সেনগুপ্ত সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় তার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর ছবি তার মনে ভেসে ওঠে। স্ত্রী শিখা, বান্ধবী রীণা, ছেলে অজু, খেলার মাঠে এক তরুণ খেলোয়াড়ের চিরতরে আহত হওয়া, আত্মীয়দের ঠকিয়ে সম্পত্তি দখল করা - এই সমস্ত নেতিবাচক কর্মগুলি তার অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বলা যায় যে,এই পথ অতিক্রম করার সময় পিছু ফেলে আসা সমস্ত কিছুই নিজের অজান্তে নিজের মনের মধ্যে জায়গা করে নেয়। আর তার ফলে-

            বাসুদেব সেনগুপ্তের অকাল মৃত্যু হয়। তার এই অকাল মৃত্যুকে নিয়ে উপন্যাসে নানা রহস্যের দানা বাঁধে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে,বাসুদেবের আকস্মিক মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল কিনা। আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গোয়েন্দা শবর তদন্তে নেমে পড়েন। আর তদন্তে নেমে তিনি বাসুদেবের জীবনের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করেন। সেই তদন্তে উঠে আসে বাসুদেবের স্বার্থপরতা, পরকীয়া, প্রতারণা এবং পুরনো দিনের ক্ষোভ আরো কত কি! আর এই সকল বিষয়গুলি তার মৃত্যুর কারণ কিনা সে বিষয়ে উপরে গোয়েন্দার দৃষ্টিতে নজর দেওয়া হয়।তবে-

             সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে উপন্যাসটি কেবল একটি রহস্য কাহিনী নয়। আসলে এটি মানুষের অহংকার, স্বার্থপরতা এবং তার পরিণতি নিয়ে গভীর ভাবনা তুলে ধরে। বাসুদেবের সিঁড়ি ভেঙে ওঠার শারীরিক কষ্ট যেমন ছিল, তেমনই মানসিক কষ্টের তীব্রতাও কম ছিল না। যেখানে প্রতিটি সিঁড়ি যেন তার জীবনে পাপের বোঝা বহন করছিল এবং শেষ পর্যন্ত সেই পাপের বোঝাই তার জীবন অকালে কেড়ে নেয়। যেখানে-

          আলোচ্য উপন্যাসটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় যে, সময়ের স্রোতে মানুষের বাহ্যিক শক্তি কমতে পারে, কিন্তু তার কৃতকর্মের ফল তাকে বহন করতেই হয়। অনুশোচনার আগুন ধিকধিক জ্বলতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তা হয়তো মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

          পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে' উপন্যাসের মূল চরিত্র বাসুদেব নামের এক অহংকারী ব্যক্তির জীবন এবং তার স্ত্রী শিখার মধ্যেকার সম্পর্ক। বাসুদেব শুধুমাত্র নিজেকে ভালোবাসে।তবে তিনি অন্যের দুঃখ-অভিমান নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায় না। শুধু তাই নয়-

            বাসুদেব সেনগুপ্ত তার স্ত্রীর প্রতিও নেই কোনো আবেগ, ভালোবাসা।যারফলে তাদের দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ভেঙে যেতে বসে বা ভেঙে যায়।আসলে উপন্যাসটি মূলত একটি ভাঙা সম্পর্কের কাহিনী।আর সেই কাহিনীতে বাসুদেবের অহংকার এবং শীতলতা তাদের সম্পর্কের অবনতির কারণ, এবং শিখার দুঃখ-অভিমান উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তুলে ধরেছেন।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...