Skip to main content

মেঘনাদবধ কাব্যে (4th. Sem.Major) নারী চরিত্র পরিকল্পনায় কবি মধুসূদন দত্তের ভূমিকা আলোচনা করো।

মেঘনাদবধ কাব্যে নারী চরিত্র পরিকল্পনায় কবি মধুসূদন দত্তের ভূমিকা আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, বাংলা মেজর, DS-7)

         আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, বাংলাদেশের জনমানসে নারীর যে নব মূল্যায়ন হয়েছিল তা মধুসূদনের কাব্যেই প্রথম পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ হয়।যেখানে ঈশ্বর গুপ্তের কাব্যে নারী শিক্ষা ও নারীর প্রতি বিদ্রুপবাণ নিক্ষেপ হলেও রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় পদ্মিনী উপাখান কাব্যিক নারীর বীর্যবত্তার রুপ প্রকাশ পেয়েছিল। সেখানে নারীর বুদ্ধিমত্তা, মহিমা প্রভৃতি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাঙালি কবি মানস কোন দিনই পরিপূর্ণভাবে নারীর সর্বাঙ্গীণ বহুমুখীণতা অন্তরের মনিকোঠায় মেনে নিতে পারিনি। সে কারণে উনবিংশ শতাব্দীতে নারীর পরিবারমুখী স্বরূপ লেখক ও কবির কাম্য বিষয় হয়ে উঠেছে। যেখানে-

     মধুসূদনের কবি মানসে যে বিদ্রোহের বীজ নিহিত ছিল, তার সৃষ্ট নারী চরিত্রগুলি বিশ্লেষণ করলে আমাদের ধারণাটি অধিকতর পরিষ্কার হয়ে যাবে।আর এ যুক্তির প্রধান দৃষ্টান্ত হলো মেঘনাদবধ কাব্যের প্রমিলা চরিত্রটি। যে চরিত্রটি আমাদের দুর্বল মনকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। সমালোচকদের কথায়-প্রমিলা ভারতীয় জীবনবাণীর ত্যাগ ধর্মকে সে প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু তাই নয়, কৈয়েকী তার কামনা বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্য স্বামীকে নিন্দা ও বিদ্রুপ করতে পিছপা হয়নি। এই চরিত্র শক্তির এক প্রবল রূপ দেখা যায় প্রমিলার চরিত্রে। আর সেখানে-

     প্রমিলাকে কবি আপন মানস কন্যা হিসেবে গ্রহণ করে নিজের এবং পাঠকের মনে প্রাণে হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছেন। আসলে প্রমিলা হলো প্রেমে, অবীরতায়, বিহ্বলতায়,কোমলতায় আত্মদানে, পতিব্রতে, বীর্যে, শক্তিতে তেজে নির্ভিকতায়, বীরত্বে অদ্বিতীয়া।একই নারীর মধ্যে এত রূপ ইতিপূর্বে কোন কাব্য বা সাহিত্যে সে প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য হোক দেখতে পাওয়া যায়নি। এ এক মধুসূদনের অনন্য সাধারণ সৃষ্টি। এদিক থেকে প্রমিলা বীর স্বামীর যোগ্য সহধর্মিনী আবার অপরদিকে সিংহ পৃষ্ঠে মহিষ মর্দ্দিনী দুর্গা। অথচ এই প্রমীলা নারীত্বে কোমলময়। তবে-

       আমরা জানি প্রমিলা মেঘনাদের যোগ্য সহধর্মিনী। প্রমিলা বীরের পত্নী বিরঙ্গনা। আর এই বীরাঙ্গনা বেশে সে রামচন্দ্রের সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর সেখানে আমরা প্রমিলাকে দেখি-

   "দানব নন্দিনী আমি রক্ষকুল বধু/রাবণ শ্বশুর মম, মেঘনাদ স্বামী/আমি কি ডরাই কভু ভিখারি রাঘবে?" 

    প্রমিলার এই সংলাপের মধ্যে দিয়ে তার বিদ্রোহী সত্তার চরিত্রটিকে বিকশিত করেছে। আসলে তার শক্তি,বীর্য প্রতিমুহূর্তে তাকে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে-রাবণ শ্বশুর, মেঘনাদ স্বামী। এই সকল শক্তির জোরেই প্রমিলা অবিচল নিষ্ঠা ও প্রেমের পরিচয় দিয়েছে। স্বামীর মৃত্যুতে তার শোকের অন্ত নেই! কিন্তু তার চরিত্রশক্তি ও প্রেম নিষ্ঠা তাকে বিরোচিত শোক প্রকাশের পথ দেখায়। আর সেখানেই প্রমিলা বলেন-

         "পতি বিনা অবলার কি গতি জগতে।"

           অপরপক্ষে মধুসূদন দত্ত তাঁর কবি মানসে সীতার প্রতি সুগভীর সহানুভূতির পরিচয় দিয়েছেন। অশোক বনে বেড়ী দ্বারা ঘেরা অবস্থায় সে সরমার সঙ্গে অরণ্য জীবনের দুঃখ সুখ এবং বর্তমান দুঃখ বেদনার কথা বর্ণনা করেছেন। তার দাম্পত্য জীবনের যে মধুর রূপটি ফুটে উঠেছে, কবি অত্যন্ত নিপুন দক্ষতার সাথে প্রমাণ করেছেন সীতা প্রকৃতই পতিব্রতা। তা না হলে কেন সে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে অরণ্য জীবন পালন করবে। আর এহেন অবস্থায় আমরা সীতাকে দেখি-

  "একাকিনী শোকাকুলা, অশোক কাননে।                          কাঁদেন রাঘব বাঞ্ছা আঁধার কুঠিরে নীরবে।"

           এখানে এক অদ্ভুতভাবে সীতাকে রাখা হয়েছে একাকী, যেখানে রামচন্দ্র নেই, নেই তার দেবর লক্ষণও। তাই আজ অন্ধকার কুঠিরের মধ্যে সীতা একা, শুধু একা। ঠিক একই কমনীয়তা প্রকাশ পেয়েছে প্রমিলা মেঘনাদের দাম্পত্য জীবনের রূপায়ণে। আর সেখানে মেঘনাদের যুদ্ধকালে প্রমীলার বেদনা এবং মেঘনাদের মৃত্যুতে প্রমিলার গভীর শোক সেই কমনীয়তার পরিচয় বহন করে। তবে মধুসূদনের কবি মানসে রোমান্টিকতা ও ক্লাসিক ধর্মের যে দ্বন্দ্ব ছিল নারীর উল্লেখিত সেই মানস দন্দ্বরই ফসল। আর সেই মানস দ্বন্দ্বের একদিকে নবযুগের মূল্যায়ন অন্যদিকে পরিবারমুখী বাঙালি মানসের কোমল, করুন সংবেদনশীলতা।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 



Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...