Skip to main content

য়ুরোপ প্রবাসীর(4th Sem.Major)) পত্র গ্রন্থে পরিহাস প্রিয় রবীন্দ্রনাথের যে পরিচয় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে তোমার অভিমত আলোচনা করো।

 

য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র গ্রন্থে পরিহাস প্রিয় রবীন্দ্রনাথের যে পরিচয় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে তোমার অভিমত আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়,ষষ্ঠ সেমিস্টার,বাংলা অনার্স CC-14)

              আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,য়ুরোপ প্রবাসীর পত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে পরিহাস প্রিয়তার পরিচয় পাওয়া যায়, তা তাঁর লেখনীর এক বিশেষ দিক বা মূল্যবান সম্পদ। আর এই গ্রন্থে তিনি তাঁর বিলেত যাত্রার অভিজ্ঞতা, সেখানকার জীবনযাত্রা, এবং ইংরেজ সমাজের নানা দিক অকপটে তুলে ধরেছেন।যার মধ্যে আছে যেমন গভীর পর্যবেক্ষণ, তেমনি আছে তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিমায় করা তীক্ষ্ণ ও সূক্ষ্ম পরিহাস।আর সেই পরিহাসে বিষয়ে আমারা দেখি-

•রবীন্দ্রনাথের পরিহাস কেবলমাত্র কৌতুক সৃষ্টির জন্য ছিল না, বরং বলা যায় তাঁর গভীরে ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং সমাজের প্রতি এক ধরনের পর্যবেক্ষণ।সেই পর্যবেক্ষণ পরিহাসের বেশ কয়েকটি দিক আমরা নিম্ন সূত্রাকারে তুলে ধরতে প্রয়াসী হোলাম। আর সেখানে আমরা দেখি- 

• রবীন্দ্রনাথের আত্মপরিহাসঃ রবীন্দ্রনাথ অনেক সময় নিজেকে নিয়েই রসিকতা করেছেন বা পরিহাস করতে ভালোবাসতেন।আর সেই প্রেক্ষিতে নিজের অনভিজ্ঞতা, পোশাক-পরিচ্ছেদ বা আচার-আচরণের ত্রুটি নিয়ে তিনি অকপটে হাসিঠাট্টা করেছেন।যার মাধ্যমে তিনি পাঠকের কাছে নিজেকে আরও বেশি মানবিক ও সহজ করে তুলেছেন। যেমন, বিলেতে গিয়ে সেখানকার আদব-কায়দা সম্পর্কে নিজের অজ্ঞতার কথা তিনি খোলাখুলি লিখেছেন এবং তা নিয়ে বিস্তর মজাও করেছেন।

 •ইংরেজ সমাজজীবন প্রতি পরিহাসঃ রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ সমাজের কিছু বৈশিষ্ট্য, যেমন তাদের কৃত্রিমতা, পোশাকের বাহুল্য, বা সামাজিক রীতিনীতি নিয়ে সূক্ষ্ম পরিহাস করেছেন। তবে বলা যায় এই পরিহাস কখনোই কটু বা আক্রমণাত্মক ছিল না, বরং ছিল বুদ্ধিদীপ্ত এবং পর্যবেক্ষণমূলক। তিনি তাদের কথোপকথনের ধরন, তাদের সামাজিকতার ধরন নিয়ে নানা সময়ে মজা করেছেন।যেখানে-

• ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি পরিহাসঃ ভারতীয় এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির মধ্যে যে বিস্তর পার্থক্য আছে, তা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ অনেক সময় রসিকতা করেছেন।তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে এই সাংস্কৃতিক ভিন্নতা থেকে মজার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যেমন, ভারতীয় খাদ্যাভ্যাস এবং ইংরেজদের খাদ্যাভ্যাসের ভিন্নতা নিয়ে তিনি সরস মন্তব্য করেছেন।

 •সাধারণ জীবনের প্রতি পরিহাসঃয়ুরোপ ভ্রমণকালে তিনি যে সাধারণ অভিজ্ঞতাগুলো লাভ করেছেন, তার মধ্যে থেকে তিনি হাস্যরসের উপাদান খুঁজে বের করেছেন। ট্রেনে ভ্রমণ, খাবার হোটেল, বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যে থেকেও তিনি পরিহাসের রেশ ছড়িয়ে দিয়েছেন।আর সেখানে পরিহাসের তাৎপর্যে আমরা দেখি-

             •পর্যবেক্ষণ,সমালোচনা এবং পরিহাসের আড়ালে তিনি তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণমূলক বিষয়টি তুলে ধরেছেন। ইংরেজ সমাজের যে দিকগুলো তাঁর কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়েছে, সেগুলোকে তিনি পরিহাসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। যেখানে পরিহাসপ্রিয়তা রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্বের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। তাঁর চিঠিপত্র এবং অন্যান্য রচনাতেও সেই ব্যক্তিত্ব রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, য়ুরোপ প্রবাসীর পত্রে গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের পরিহাসপ্রিয়তা দেখতে পাই তাঁর লেখার এক বিশেষ সম্পদ। আর রবীন্দ্রনাথের এই গুণটি তাঁর লেখাকে কেবল সরস করে তোলেনি, বরং তা তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তি, বুদ্ধিদীপ্ততা এবং মানবিকতার পরিচয় বহন করেছে।তাই আমরা বলতে পারি রবীন্দ্রনাথ কেবল একজন  দার্শনিক বা কবি ছিলেন নন, বরং তিনি ছিলেন এক রসিক, শুধু রসিক নন, তিনি জীবনরসিক।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...