শজারুর কাঁটা উপন্যাসের দীপ নাথের ভূমিকা ও তার পরিণতি আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, বাংলা মাইনর)
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম গোয়েন্দা উপন্যাস 'শজারুর কাঁটা'। আর সেই উপন্যাসের দীপনাথ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রহস্যময় চরিত্র হিসেবে আলোচিত।বলা যায় যে,উপন্যাসের মূল প্লট বা কাহিনী তার চরিত্রকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। যেখানে আমরা দেখি এই উপন্যাসে দীপ নাথের ভূমিকা-
উপন্যাসটি আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পারি যে, দীপনাথ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় রহস্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু তাই নয়,সে একজন ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান।যাকে ঘিরে এই উপন্যাসে পর পর বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে থাকে। আর সেখানে উপন্যাসের শুরুতেই দেখতে পাই যে,তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয় এবং সেই চেষ্টা ব্যর্থও হয়।তার জীবনে একটি গভীর রহস্যের জাল বোনা হয়।আর সেখানে-
হত্যাকাণ্ডের রহস্যের উৎসঃ উপন্যাসে দীপনাথকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে ব্যোমকেশ বক্সী তদন্তে নামে। আজ তদন্তে নেমে তার পরিবারের সদস্য, বন্ধু এবং তার অতীত জীবন-সবকিছুই ব্যোমকেশের তদন্তের আওতায় স্বাভাবিকভাবে আসে। যেখানে-
উপন্যাসে ট্রাজিক নায়কঃ দীপনাথ একাধারে ভিকটিম(ক্ষতিগ্রস্ত)এবং এক ট্র্যাজিক হিরো হিসেবে উপন্যাসে উঠে আসে। তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তাকে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ঠেলে দেয়। শুধু তাই নয়,তার বিয়ের দিন তার স্ত্রী দীপার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত একটি স্বীকারোক্তি পায়। যে স্বীকারোক্তি তার জীবনকে আরও জটিল করে তোলে।আসলে-
দীপনাথ অতীতের শিকারঃ উপন্যাসের গভীরে প্রবেশ করলে আমরা দেখতে পাই যে,দীপনাথের জীবনের এই জটিলতা তার অতীতের সঙ্গে সংযুক্ত। শৈশবের একটি ঘটনা এবং তার চারপাশের মানুষের কিছু গোপন উদ্দেশ্য তাকে এই ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। তাই সে তার পরিবারের কিছু অন্ধকার দিকের শিকার হয়। আর তার ফলে-
•দীপ নাথের পরিণতি•
আমরা আলোচ্য শজারুর কাঁটা উপন্যাস থেকে জানতে পারি যে,দীপ নাথের পরিণতি অত্যন্ত করুণ এবং হৃদয়বিদারক।উপন্যাসের শেষে জানতে পারি যে, তার জীবন এক জটিল ষড়যন্ত্রের শিকার। তার চারপাশের মানুষ, বিশেষ করে তার পরিবারেই এমন কিছু ব্যক্তি ছিল যারা তার ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। আর সেই প্রচেষ্টার মাধ্যমে-
দীপনাথের হত্যার প্রচেষ্টাঃ দীপ নাথকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। আর তার ফলে শেষ পর্যন্ত সে এই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। শজারুর কাঁটা ব্যবহার করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, যা উপন্যাসের নামের সঙ্গে অতি সঙ্গতিপূর্ণ। যেখানে-
হৃদয়বিদারক যন্ত্রণার শিকারঃ সজারুর কাঁটা উপন্যাসে দীপনাথ কেবল শারীরিক আক্রমণই নয়, মানসিক যন্ত্রণারও শিকার হয়। যার ফলে তার ব্যক্তিজীবন সম্পর্ক, বিশেষ করে তার স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া আঘাত তাকে প্রবলভাবে বিধ্বস্ত করে তোলে। অবশেষে-
হত্যাকাণ্ডের রহস্যের সমাধানঃ উপন্যাসের অন্তিমে আমরা দীপ নাথের মৃত্যু দেখতে পাই।আর গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সী শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করে। দীপ নাথ নিজেই যে এই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, সে কথা ব্যোমকেশ জানতে পারে। আসলে দীপ নাথ তার অসুস্থতার জন্য মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিল।আর সেই মৃত্যুর দায়ভার সে অন্যের উপর চাপানোর চেষ্টাও করেছিল। এটিই ছিল উপন্যাসের সবচেয়ে বড় দৃষ্টি বিমুখ ঘটনা। আসলে- দীপ নাথের চরিত্রটি শজারুর কাটা উপন্যাসে শুধু একটি শিকার নয়, বরং বলা যায় সেই চরিত্রটি মানুষের মনস্তত্ত্বের জটিলতা এবং প্রতিশোধের স্পৃহার একটি প্রতীক হয়ে ওঠে।আর তার পরিণতি পাঠককে গভীরভাবে নাড়া দেয়। শুধু তাই নয়, উপন্যাসে ব্যোমকেশ বক্সী তদন্তের মূল আকর্ষণীয় চরিত্র হয়ে ওঠে।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, ব্যাখ্যা, সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 ।
Comments
Post a Comment