শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের শজারুর কাঁটা উপন্যাসটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা মাইনর)।
আলোচনর শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি অন্যতম রহস্যময় রোমান্সধর্মী উপন্যাস "শজারুর কাঁটা"। আর এখন আমাদের বিচার বিশ্লেষণ করে দেখাতে হবে যে, শজারুর কাঁটা উপন্যাসের এই নামকরণ কতটা সার্থকতা হয়েছে।আর তা নির্ণয় করতে গিয়ে আমাদের দেখতে হবে নামকরণের প্রয়োগী তাৎপর্য। যেখানে- •ঔপন্যাসিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ব্যোমকেশ বক্সীর কাহিনীতে "শজারুর কাঁটা" কেবল একটি কাঁটা নয়, এটি একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কের বিষাক্ততা। সেই সাথে কাঁটাকে এখানে সত্যের বিরোধের প্রতীক হিসাবে বলা হয়েছে। আর সেই আলোকে আমরা দেখি-
উপন্যাসটি মূলত প্রেম, প্রতিশোধ এবং সামাজিক জটিলতা নিয়ে গঠিত। "শজারুর কাঁটা" উপমাটি এই থিমগুলির সাথেও সম্পর্কিত। প্রেম যেমন মানুষের জীবনে সবসময় সুন্দর নয়, তেমনি প্রতিশোধের পথও সবসময় সহজ নয়। তাই শজারুর কাঁটা এই উপমাটি জটিলতার প্রতীক। যেখানে-
•শজারুর কাঁটা এই উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। যেখানে খুনি এই কাঁটা ব্যবহার করেই একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটায়। তবে এখানে এই কাঁটা মারাত্মক, ভয়ংকর মারণাস্ত্রে পরিণত হয়েছে। আর তার ফলে এই শজারুর কাঁটা উপন্যাসে হিংসা, হিংস্রতা এবং মানুষের কূটনৈতিক বুদ্ধিকে সামনে আনে।আর সেখানে-
•উপন্যাসের "শজারুর কাঁটা" সম্পর্কে বিষাক্তময় বিষয়কে নির্দেশ করে। তবে সেখানে ব্যক্তিদের বিভিন্ন চরিত্র, বিশেষত দেবাশীষ এবং তার আশেপাশের মানুষের সম্পর্ক অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং গোপন বিদ্বেষের একটি পরিস্থিতি উঠে আসে। এই বিদ্বেষ কাঁটাতারের মতো তীক্ষ্ণ এবং বেদনাদায়ক। যা ডাক্তারের সম্পর্কে ভুল ধারণাকে নষ্ট করে দেয় এবং পরিণতিতে সেই অপরাধে ট্র্যাজেডি ডেকে আনে।তবে-
• এই কাঁটা সত্যের অনুসন্ধানের পথ একটি বাধা,যা জটিল হিসেবে কাজ করে। ব্যোমকেশ যখন তদন্ত শুরু করে, তখন শজারুর কাঁটার উপস্থিতি ব্যক্তিকে আরও ঘনীভূত করে তোলে। এই অস্ত্রটি শক্তি ধোঁয়া শরণাপন্ন করে, যা আসলকে আড়াল করে এবং সত্যান্বেষীকে বিভ্রান্ত করে। কিন্তু -
• শজারুর কাঁটা প্রকৃতির একটি অংশ, যা আপাত শান্ত এবং নিরীহ। কিন্তু প্রয়োজনে এটি আত্মরক্ষার জন্য ভয়ঙ্কর হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। এই দ্বৈতসত্তা চরিত্র উপন্যাসে ব্যক্তি মানুষের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়, যেখানে আপাত নিরীহ ব্যক্তি গভীর অন্ধকারেও থাকতে পারে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, উপন্যাসের এই নামকরণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যেখানে "শজারুর কাঁটা" কেবল একটি রহস্যময় অস্ত্রের পরিচায়ক নয়, বরং এটি মানব সম্পর্কের জটিলতা, লুকানো বিদ্বেষ এবং সত্যের সন্ধানের বন্ধুর পথকে এক প্রতীকী ব্যঞ্জনায় উপস্থাপন করে। এই কারণে, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের "শজারুর কাঁটা" উপন্যাসের নামকরণ সম্পূর্ণরূপে সার্থক এবং ব্যঞ্জনাময় বলা যেতেই পারে।
Comments
Post a Comment