আমার ভারতবর্ষ (4th.Sem Major )কবিতায় অবহেলিত বঞ্চিত নিরন্ন মানুষের অবহেলার পাশাপাশি কবির মনে যে আশাবাদ জাগরিত হয়েছিল তা আলোচনা করো।
'আমার ভারতবর্ষ' কবিতায় অবহেলিত বঞ্চিত,নিরন্ন মানুষের অবহেলার পাশাপাশি কবির মনে যে আশাবাদ জাগরিত হয়েছিল, তা আলোচনা করো( পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, বাংলা মেজর,DS-7,Unit-IV.)
•আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতনামা কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।আর সেই কবির কবিতায় ভাষিত হয়েছে সমগ্র দুনিয়ার প্রতারিত মানুষের বেদনা, মানবতা-বিরোধী ঘটনার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ তীব্র-প্রতিবাদ। আবার অন্যদিকে রোমান্টিকের মতো সমাজ জীবনের সুন্দর স্বপ্নকে শেষমুহূর্ত পর্যন্ত রক্ষা করে গেছেন। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি প্রতিবাদ, প্রতিরোধের কন্ঠ নিয়ে রচনা করলেন-
• 'আমার ভারতবর্ষ' কবিতাটি।যে কবিতাটিতে আমরা দেখতে পাই একটি প্রতিবাদী এবং মানবতাবাদী চেতনার বর্হিপ্রকাশ।আসলে এ কবির বেশিরভাগ কবিতার মধ্যে আছে প্রতিবাদের ও প্রতিরোধের ভাষা। যে ভাষা নিরন্ন,অবহেলিত, বঞ্চিত মানুষের মুখের ভাষা। আর এই প্রতিবাদের ভাষার জন্য তিনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি।তাই জীবনের চলার পথে যেখানেই তিনি অন্যায় দেখেছেন, সেখানেই তাঁর কন্ঠ থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রতিবাদের ভাষা। আর সেই প্রতিবাদের ভাষাকেই তিনি রূপ দিয়েছেন তাঁর 'আমার ভারতবর্ষ' কবিতায়। আর সেই কবিতায় আমরা দেখি-
• শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জীবনঃ কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমার ভারতবর্ষ কবিতায় সেই 'পঞ্চাশ কোটি নগ্ন মানুষের' কথা বলেছেন।যে মানুষগুলি সারাদিন মাঠে,ময়দানে, রোদে খাটে, ক্ষুধার জ্বালায় ও শীতে রাতে ঘুমোতে পারে না। সেই মানুষগুলি সাঁওতাল পরগণায়, দাক্ষিণাত্যে, মেঘালয়ে, পাহাড়ে, জঙ্গলে, চা-বাগানে, কয়লা-খনিতে কাজ করে। কাজের শেষে জোটে আধপেটা ভাত। আবার কখনো বিনা চিকিৎসায় তারা মারা যায়। অর্থাৎ, সমাজের প্রান্তিক, নিপীড়িত এবং শোষিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, তাদের বঞ্চনা ও অবহেলাই আমার ভারতবর্ষ কবিতার পটভূমি। আর সেখানে আমরা দেখি-
•তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধঃ কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সারাটা জীবন অন্যায়, শোষণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আর সেই প্রতিবাদে আমরা দেখি- "আমার ভারতবর্ষ চেনে না তাদের, মানে না তাদের পরোয়ানা।"
এখানে কবি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, ভারতবর্ষের আসল পরিচয় রাজা-শাসকের পরিবর্তন বা তাদের স্বার্থপরতা নয়, বরং বলা যেতে পারে দেশের সাধারণ, শ্রমজীবী মানুষের রক্ত ও ঘামে গড়ে ওঠা প্রকৃত ভারত। তবে-
•গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার নামে প্রহসনঃ
"কত রাজা আসে যায়, ইতিহাসে ঈর্ষা আর দ্বেষ আকাশ বিষাক্ত করে জল কালো করে, বাতাস ধোঁয়ায় কুয়াশায় ক্রমে অন্ধকার হয়।"
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এখানে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, ষড়যন্ত্র, লোভ এবং দুর্নীতির প্রতি কটাক্ষ করেছেন। স্বাধীনতার নামে যে শোষণ ও বঞ্চনা আজও চলে, তার বিরুদ্ধে কবি তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছেন। আর সেখানেই-
•মানবিকতা ও ভাতৃত্বঃকবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই ভারত ভূমিতে দাঁড়িয়ে অনুভব করেন যে,এই ভারতবর্ষের আজও মানুষগুলো শোষিত ও নিপীড়িত। তবুও তিনি মানবতার জয় গানে বলে ওঠেন- "চারিদিকে প্রচন্ড মারের মধ্যে আজও ঈশ্বরের শিশু, পরস্পরের সহোদর।"
•আসলে কবি সকল বঞ্চনার মাঝে, শত অবহেলার মাঝে, প্রবল প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষের জয়গান করেছেন। আর সেই জয়গানের মধ্যে উঠে আসে কবির মনের মধ্যে জমে থাকা মানবিকতাবোধ, ঐক্যবোধ এবং ভ্রাতৃত্ববোধ।যে বোধের কারণে আজও মানুষ বেঁচে আছে এক টুকরো আলো দেখার আশায়। আর এ কবি সেই আলোর দিকেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন।
•কবির আশাবাদঃ 'আমার ভারতবর্ষ' কবিতার বেশিরভাগ অংশই জুড়ে আছে মানুষের বঞ্চনা ও দুঃখের চিত্র। তবুও এ কবির মধ্যে একটি আশাবাদ লুকিয়ে আছে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, সকল স্তরের মানুষের মধ্যেকার একান্ত নিজস্ব বিবেক ও মূল্যবোধ জাগ্রত হলে তবেই একটি সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব, অন্যথায় নয়।
•পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'আমার ভারতবর্ষ' কবিতাটি কেবলমাত্র একটি ভৌগোলিক এলাকার বর্ণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এই ভারতবর্ষ সেইই ভারতবর্ষ, যে ভারতবর্ষ শোষিত, অবহেলিত, বঞ্চিত না খাওয়া মানুষের রক্ত, ঘাম ও হাড় দিয়ে তৈরি। আসলে কবিতাটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং এক মানবিক সমাজের স্বপ্ন দেখার সোপান।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏
Comments
Post a Comment