সংগতি কবিতায়(4th.Sem Major) কবি অমিয় চক্রবর্তী জগত ও জীবনের সকল অসংগতির মধ্যে সংগতি স্থাপনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন- আলোচনা করো।
সংগতি কবিতায় কবি অমিয় চক্রবর্তী জগত ও জীবনের সকল অসংগতির মধ্যে সংগতি স্থাপনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন- আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা মেজর)।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, কবি অমিয় চক্রবর্তী'র 'সংগতি' কবিতাটি দুটি বৈপরীত্যের বিষয়ের মধ্যে ঐক্য এবং আশাবাদের এক গভীর দার্শনিক প্রত্যয় তুলে ধরেছেন। যেখানে-জগত ও জীবনের সমস্ত অসংগতি, পরিস্থিতি, চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যকার ব্যবধান দূর করে দেবেন পরমপুরুষ ভগবান। আসলে মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত একটা দুঃখের তুফান উঠছে। আর মানুষ সেই দুঃখকে বাধা দিয়ে এক অসহায়ভাবে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে চলেছে সারাক্ষণ। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ে মানুষের বুক ভাঙ্গা হাহাকার প্রকাশ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কিন্তু কবির বিশ্বাস স্বয়ং ঈশ্বরই কেবল পারেন জগৎ ও জীবনের এই কঠিন দুঃখকে মোচন করতে। আর সেখানে আমরা দেখি-
কবির বৈপরীত্যের মধ্যে ঐক্য স্থাপনঃকবিতার মূল সুর হলো বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী বিষয়, যেমন – ঝড়ো হাওয়া এবং পোড়ো বাড়ি, প্রবল বন্যা এবং অনাবৃষ্টি, ভালো এবং মন্দ, জীবন এবং মৃত্যু, আশা এবং হতাশা – ইত্যাদির মধ্যে এক ধরণের সংগতি বা ঐক্যের সন্ধান। কবি বিশ্বাস করেন যে এই আপাতবিরোধী উপাদানগুলো আসলে একই পরম সত্তার অংশ। তিনি এই সমস্ত বিপরীতধর্মী জিনিসগুলোকে মিলিয়ে দিতে চান, অতঃপর সেখানে সবকিছুর মধ্যেই এক অখণ্ডতা বিরাজ করবে।
কবির আশাবাদ ও ইতিবাচক মনোভাবঃ'সংগতি' কবিতাটি একটি আশাবাদের কবিতা। প্রতিকূল পরিস্থিতি, দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, সমাজের বৈষম্য, হানাহানি -এই সমস্ত নেতিবাচকতার মধ্যেও কবি এক ইতিবাচক শক্তির উপর প্রবলভাবে বিশ্বাস রাখেন।তাই তিনি মনে করেন, এই সমস্ত অশুভ বা নেতিবাচক জিনিসগুলো একদিন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হবে এবং সবকিছুর মধ্যে এক সুন্দর মেলবন্ধন স্থাপিত হবেই হবে।
কবির ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসঃ 'সংগতি' কবিতায় ঈশ্বরের প্রতি এক গভীর বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়।আসলে কবি মনে করেন যে-যখন মানুষ চরম হতাশায় ডুবে যায়, তখন ঈশ্বরই একমাত্র ভরসার পাত্র হয়ে উঠেন। তবে কবি ঈশ্বরকে এক চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা এবং মানুষের চাওয়া-পাওয়ার একমাত্র তৃপ্তির উৎস হিসেবে দেখেন। তার বিশ্বাস, জগতের সমস্ত ভালো-মন্দকে ঈশ্বরই এক ঐক্যের বন্ধনে মিলিয়ে দেবেন। যেখানে -
বাস্তবতা ও স্বপ্ন দর্শনে কবিঃ কবি অমিয় চক্রবর্তী বাস্তবতাকে মেনে নিয়েও স্বপ্ন দেখেন। তবে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে রচিত এই কবিতাটিতে কবি তৎকালীন সময়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরেছেন। কিন্তু এরই পাশাপাশি কবি স্বপ্ন দেখেন এক নতুন দিনের, যেখানে মানুষ তার স্বপ্নের বিদ্রোহকে বাস্তবে রূপ দেবে এবং এক নতুন পৃথিবী গড়ে তুলবে। তবে-
মানবতা ও প্রগতিশীলতায় কবিঃ সংগতি কবিতায় মানবতার প্রতি কবির গভীর মমতা প্রকাশ পায়। যেখানে কবি দুর্বল ও সবল, প্রাচীন ও নবীনের মধ্যে সংগতি স্থাপনের কথা বলেছেন। তবে ঝড়ো হাওয়াকে প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক এবং পোড়ো বাড়িকে প্রাচীনতার প্রতীক হিসেবে দেখে কবি এই দুয়ের মধ্যে মিলন ঘটাতে চান, যা এক নতুন শক্তির জন্ম দেবে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, 'সংগতি' কবিতাটি অমিয় চক্রবর্তীর গভীর দার্শনিক ভাবনা এবং আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির এক সুন্দর প্রকাশ পেয়েছে। তবে এটি কেবল একটি কবিতা নয়, এটি জীবনের সকল অসংগতির মাঝে সংগতি খুঁজে পাওয়ার এক মহৎ প্রচেষ্টার বাস্তব জীবনের প্রস্তুতি। আজ সেখানে কবির বিশ্বাস, জগৎ ও জীবনের এই সমস্ত অসংগতি, অসাম্যের বঞ্চনার মতো নেতিবাচক বিষয়গুলি মধ্যে দূর হয়ে যাবে।
Comments
Post a Comment