মূল্যায়ন ও পরিমাপ কাকে বলে? মূল্যায়ন এবং পরিমাপের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, এডুকেশন, চতুর্থ সেমিস্টার মাইনর)
• মূল্যায়ন (Evaluation)
•শিক্ষাতত্ত্ব অনুসারে আমরা জানি যে,মূল্যায়ন হলো কোনো পরিমাপের উপর ভিত্তি করে কোনো বিষয়ে বিচার করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,একটি পরীক্ষার স্কোর দেখে ছাত্রের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করা, অথবা একটি প্রকল্পের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা। মূল্যায়ন সাধারণত গুণগত এবং পরিমাণগত উভয় তথ্য ব্যবহার করে, যেখানে পরিমাপ শুধুমাত্র পরিমাণগত তথ্য ব্যবহার করে. •পরিমাপ(Measurement) •পরিমাপ হলো কোনো ভৌত বা মানসিক বৈশিষ্ট্যকে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য বা ওজন পরিমাপ করা, অথবা কোনো ছাত্রের পরীক্ষার স্কোর পরিমাপ করা। পরিমাপের মাধ্যমে আমরা কোনো বস্তুর বৈশিষ্ট্য বা পরিমাণকে সংখ্যাগত ভাবে প্রকাশ করি. আর এই আলোচনার প্রেক্ষিতে মূল্যায়ন ও পরিমাপের মধ্যে পার্থক্য গুলি নিম্ন সূত্রাকারে আলোচনা করা হলো-
১) পরিধিগতঃ মূল্যায়ণের পরিধি ব্যাপক। মূল্যায়ণের মাধ্যমে ব্যক্তির সামগ্রিক দক্ষতা , বৈশিষ্ট্য , আগ্রহ , মনোযোগ , প্রতিভা - ইত্যাদি বিভিন্ন দিকের পরিমাপ করা যায়। কিন্তু- •পরিমাপের পরিধি মূল্যায়নের তুলনায় অনেকটা সংকীর্ণ। পরিমাপের মাধ্যমে ব্যক্তির কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য , ক্ষমতা বা দক্ষতার পরিমাপ করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষমতা যাঁচাইয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরিমাপের প্রয়োগ করা হয়।
২ বৈশিষ্ট্যগতঃ মূল্যায়নের বৈশিষ্ট্যগুলি বহুবিধ। মূল্যায়নের দ্বারা ব্যক্তির শারীরিক , মানসিক , সামাজিক , নৈতিক , আচরণগত , প্রক্ষোভিক সকল প্রকার বৈশিষ্টের পরিমাপ করা যায়। কিন্তু- •পরিমাপের দ্বারা ব্যক্তির কোনো একটি বিষয়ে অর্জিত জ্ঞান বা একটি বৈশিষ্টের পরিমাপ করা যায়। তাই পরিমাপের সাহায্যে বৈশিষ্টগত পরিমাপের সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম।
৩) প্রকৃতিগতঃ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তার সামগ্রিক পরিমাপ করা যায়। ব্যক্তিসত্তার পরিবর্তন ও ব্যক্তিত্বের পরিমাপের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অপরিহার্য। কিন্তু-
•পরিমাপের প্রকৃতি হল আংশিক। পরিমাপের সাহায্যে ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তার বৈশিষ্টগুলিকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে যাঁচাই করা যায়।
৪) প্রক্রিয়াগতঃ মূল্যয়ন হল একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন বিকাশের পরিমাপ করতে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যথেষ্ট কার্যকর। কিন্তু-
•পরিমাপ একটি বিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। পরিমাপের দ্বারা শিক্ষার্থীর অধীত জ্ঞানের বা মানসিক ক্ষমতা পরিমাপের জন্য বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ অভীক্ষা প্রস্তুত করা হয়।
৫) সময়গতঃ মূল্যায়নের পরিধি ও প্রক্রিয়া যেহেতু ব্যাপক , তাই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন। ব্যক্তির সকল বৈশিষ্টের মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু-
•পরিমাপের ক্ষেত্রে সময় তুলনামূলকভাবে কম লাগে। যেহেতু পরিমাপ প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ও বিচ্ছিন্নভাবে সম্পাদিত হয় - তাই এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম সময়ের প্রয়োজন হয়।
৬) পরিমাণগতঃ মূল্যায়নের মাধ্যমে ব্যক্তির বৌদ্ধিক , দৈহিক , প্রাক্ষোভিক , নান্দনিক , মানসিক - ইত্যাদি সকল দিকের পরিমাপ করা যায়। কিন্তু-
•পরিমাপের সাহায্যে কেবলমাত্র ব্যক্তির বৌদ্ধিক ও দৈহিক বিকাশের পরিমাপ করা যায়।
৭) কার্যগতঃ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া হল পরিমাণগত ও গুণগত। কিন্তু- •পরিমাপ প্রক্রিয়া হল শুধুমাত্র পরিমাণগত।
৮) উদ্দেশ্যগতঃ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সর্বদা শিক্ষার উদ্দেশ্যভিত্তিক হয়ে থাকে। মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার মূল লক্ষ্যগুলি চরিতার্থ করা যায়।আসলে পরিমাপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সীমিত ক্ষেত্রভিত্তিক। মূল্যায়নের লক্ষ্য হল বহুমুখী। কিন্তু- •পরিমাপের লক্ষ্য হল একমুখী।
৯)কালগতঃ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সতত পরিবর্তনশীল বৃদ্ধি ও বিকাশকে অনুশীলন ও পরিমাপ করতে সাহায্য করে। কিন্তু-
•পরিমাপ হল একটি সাময়িক প্রক্রিয়া। একটি বিশেষ সময়ে শিক্ষার্থীর কোনো একটি বিষয়ে জ্ঞানের দিক থেকে কতটা অগ্রগতি হয়েছে - তা পরিমাপের মাধ্যমে জানা যায়।
১০) সিদ্ধান্ত গ্ৰহণেঃ কোনো বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণ বা চূড়ান্ত অবস্থা নির্ধারণকারী কর্মসম্পাদনা হল মূল্যায়ন। কিন্তু- • পরিমাপের সাহায্যে কোনো নির্দিষ্ট অংশের জ্ঞান বা বর্তমান মানসিক ক্ষমতা ও দক্ষতা - ইত্যাদির নির্ণায়ক।
Comments
Post a Comment