Skip to main content

শজারুর (4th.Sem.BNG) কাঁটা উপন্যাসের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যোমকেশ বক্সী।

শজারুর কাঁটা উপন্যাসের হত্যাকান্ডের রহস্য কিভাবে উৎঘাটিত হয়েছিল ব্যোমকেশ বক্সী চরিত্র অবলম্বনে তা আলোচনা করো( পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, বাংলা মাইনর)।

          আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,"শজারুর কাঁটা" উপন্যাসে ব্যোমকেশ বক্সী অত্যন্ত ধৈর্যতার সাথে, ঠান্ডা মাথায় এবং অতি বুদ্ধিমত্তার সাথে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছিলেন। তবে ব্যোমকেশ বক্সীর এই রহস্য উদঘাটনের প্রক্রিয়াটি ছিল ধাপে ধাপে। আর সেই কারণে তিনি সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ, যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণের সমন্বয়ে রহস্যের উৎঘাটন করতে চেয়েছিলেন। আর সেই সমন্বয়ে যে সকল ঘটনা আমরা দেখি - 

১) ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক পর্যবেক্ষণঃ ব্যোমকেশ বক্সী প্রথমে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল, অর্থাৎ বনওয়ারী লালের বাগানবাড়ি পরিদর্শন করেন। সেই পরিদর্শনে তিনি সেখানে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। সেই সাথে-

             •ব্যোমকেশ বক্সী লক্ষ্য করেন যে, বনওয়ারী লালের মৃতদেহ একটি কাঁটা গাছের নিচে পড়ে আছে। তিনি আরো লক্ষ্য করেন যে,তার গায়ে শজারুর কাঁটার মতো কিছু বিঁধে আছে। এরপর-

            •ব্যোমকেশ বক্সী ঘরের ভেতরের যাবতীয় পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করেন এবং অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লে তা নিজে নোট করেন।

২ সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তথ্য সংগ্রহঃ 

        •ব্যোমকেশ বক্সী প্রথমে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে এমন কয়েকজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। সেই জিজ্ঞাসাবাদে তালিকায় ছিল বনওয়ারী লালের স্ত্রী মালতী, তার ভাইপো নরেশ, প্রতিবেশী রমণী ডাক্তার এবং বনওয়ারী লালের বন্ধু বৈদ্যনাথ উল্লেখযোগ্য। এরপর-

           •ব্যোমকেশ বক্সী প্রত্যেকের বক্তব্য তিনি খুব মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং তাদের কথার মধ্যে কোনো অসঙ্গতি বা লুকানো তথ্য আছে কিনা তা যাচাই করার চেষ্টা করেন। শুধু তাই নয়, সেখানে -

         •বনওয়ারী লালের স্ত্রী  মালতীর রহস্যময় আচরণ এবং নরেশের আর্থিক অভাব ব্যোমকেশের সন্দেহের কেন্দ্রে আসে। তবে এখানে রমণী ডাক্তারের শান্ত স্বভাব এবং বৈদ্যনাথের অতিরিক্ত উদ্বেগও তার দৃষ্টি এড়ায় না।

৩) শজারুর কাঁটার রহস্য উদঘাটন-

           আমরা জানি যে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ছিল বনওয়ারী লালের গায়ে পাওয়া কাঁটাগুলো। আর সেখানে ব্যোমকেশ জানতে পারেন যে, এগুলো সম্ভবত শজারুর কাঁটা নয়, বরং অন্য কোনো প্রাণীর কাঁটা। তাই তিনি-

           •বিভিন্ন পশু বিশেষজ্ঞ এবং শিকারীদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন যে, এই কাঁটা আসলে সজারুর নয়। এর ফলে প্রাথমিকভাবে যে ধারণা তৈরি হয়েছিল, তা ভুল প্রমাণিত হয়।

৪) বিভিন্ন মোটিভ ও সুযোগের বিশ্লেষণ- 

         • ধীরস্থির বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যোমকেশ প্রত্যেক সন্দেহভাজন হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে তা বিশ্লেষণ করেন। অতঃপর বনওয়ারী লালের সম্পত্তির প্রতি লোভ নরেশ এবং মালতীর একটি সম্ভাব্য উদ্দেশ্যও হতে পারে। তাই তিনি-

          • তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় কার কোথায় অবস্থান ছিল এবং কার সুযোগ ছিল অপরাধ করার, তা খতিয়ে দেখেন।

৫) অপ্রত্যাশিত সূত্র ও তথ্যের উদ্ঘাটন-

          •তদন্তের স্বার্থে এক পর্যায়ে ব্যোমকেশ জানতে পারেন যে, বনওয়ারী লালের একটি গোপন সম্পর্ক ছিল এবং সেই সম্পর্কের সূত্রে একটি মূল্যবান পাথর জড়িত ছিল। এই তথ্যটি মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। পাশাপাশি-

          • তিনি আরও জানতে পারেন যে রমণী ডাক্তারের বাগানে একটি বিশেষ ধরনের গাছ আছে, যার কাঁটা বনওয়ারী লালের গায়ে পাওয়া কাঁটার সাথে  হুবহু মেলে।

৬) আসল অপরাধের মুখোশ উদঘাটন-

         • ধীরে ধীরে ব্যোমকেশ সমস্ত সূত্র এবং তথ্য গুলিকে একত্রিত করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে রমণী ডাক্তার আসলে বনওয়ারী লালের অবৈধ সম্পর্কের সঙ্গিনী ছিলেন এবং মূল্যবান পাথরটি নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল।

        • রমণী ডাক্তার সুকৌশলে বনওয়ারী লালকে তার বাগানে ডেকে আনে এবং সেই বিশেষ গাছের কাঁটা ব্যবহার করে তাকে হত্যা করে, যাতে ঘটনাটিকে শজারুর আক্রমণে মৃত্যু বলে মনে হয়।  

                                                                                                 • পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যোমকেশ বক্সী তার অনুসন্ধানের সমস্ত তথ্য এবং প্রমাণ সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। রমণী ডাক্তারের মোটিভ, সুযোগ এবং তার বাগানের কাঁটার সাথে বনওয়ারী লালের গায়ে পাওয়া কাঁটার মিল-এইসব প্রমাণ তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে।আর এই প্রেক্ষিতে- 

          ব্যোমকেশ বক্সী "শজারুর কাঁটা" উপন্যাসে ঠান্ডা মাথায়, যুক্তির উপর ভিত্তি করে এবং সামান্য সূত্রকেও গুরুত্ব দিয়ে একটি জটিল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন। আর এখানে ব্যোমকেশ বক্সীর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং ধৈর্যই এই রহস্য সমাধানের মূল চাবিকাঠি ছিল।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...