ইংরেজদের (6th.Sem) দেখিলে বলিষ্ঠ সাহসী পরিশ্রমী ও বুদ্ধিমান বলিয়া বোধ হয়-এই উক্তিটির আলোকে ইংরেজ জাতি ও তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো।
"ইংরেজদের দেখলে বলিষ্ঠ সাহসী পরিশ্রমী ও বুদ্ধিমান বলিয়া বোধ হয়"- এই উক্তিটির আলোকে ইংরেজ জাতি ও তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ষষ্ঠ সেমিস্টার,CC-14 বাংলা অনার্স-2023 CBSE)
•আলোচনার শুরুতেই আমরা রাখি যে,আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ইংল্যান্ডের বঙ্গ মহিলা গ্রন্থে আলোচ্য উক্তিটিতে ইংরেজদের বাহ্যিক এবং কিছু চারিত্রিক গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে।আর সেইসকল গুণাবলীর মধ্যে-বলিষ্ঠতা,সাহসীকতা,পরিশ্রমী ও বুদ্ধিমান অন্যতম। আর এই উক্তিটির আলোকে ইংরেজ জাতি ও তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে যেসকল বিষয়গুলি উঠে আসে সেগুলি আমরা নিম্ন সূত্রাকারে আলোচনা করা হলো-
• ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও উপলব্ধির কারণ •
•ইংরেজদের মধ্যে এই ধরনের উপলব্ধির বিষয়গুলি ঔপনিবেশিক যুগে ভারতীয়দের মধ্যে তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। যেখানে দীর্ঘকাল ধরে ইংরেজরা ভারতবর্ষে শাসন করেছে এবং তাদের ক্ষমতা, শৃঙ্খলা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ভারতীয়দের বেশ প্রভাবিত করেছে।আর সেখানে-
বলিষ্ঠতাঃ শারীরিক সক্ষমতা এবং ঔপনিবেশিক শাসনের ক্ষমতা প্রদর্শনের কারণে ইংরেজদের বলিষ্ঠতা সম্পর্কে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে। তাদের সামরিক শক্তি এবং শারীরিক কাঠিন্য অনেক ভারতীয়ের কাছে প্রবল মনে হয়েছিল।
সাহসীকতাঃ দূরদেশে এসে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, বিভিন্ন প্রতিকূলতার মোকাবিলা করা এবং নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টাকে সাহস হিসেবে দেখা হতো। সেদিন অনেক ইংরেজ প্রশাসক ও সৈনিক তাদের দৃঢ়তা ও নির্ভীকতার পরিচয় দিয়েছেন।
পরিশ্রমীঃপরিশ্রমী: ঔপনিবেশিক শাসনের বিস্তার ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য ইংরেজদের কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। তাদের কর্মনিষ্ঠা এবং নিয়মানুবর্তিতা অনেক ভারতীয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
বুদ্ধিমত্তাঃ বুদ্ধিমান: উন্নত প্রযুক্তি, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং রাজনৈতিক কৌশলের কারণে ইংরেজদের বুদ্ধিমান বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা অনেককে অনেকে, অনেক দেশকে প্রভাবিত করেছিল।
•ইংরেজ জাতির প্রকতি •
আমরা জানি যে,কোনো এক জাতিকে, জাতির প্রকৃতিকে কয়েকটি বিশেষণে আবদ্ধ করা কঠিন। তবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং সাধারণভাবে প্রচলিত ধারণায় ইংরেজদের প্রকৃতি সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তা হলো-
ঐতিহ্য ও রক্ষণশীলতাঃ আমরা জানি যে,ইংরেজরা তাদের ঐতিহ্য ও রীতিনীতিকে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করে। শুধু তাই নয়, রাজতন্ত্র, সংসদীয় প্রথা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তাদের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকষ্টতম দৃষ্টান্ত। সেই সাথে, তারা ধীরে ধীরে পরিবর্তনের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতেও জানে,মানতেও জানে।
নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাপরায়ণঃ একটি সুশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা এবং নিয়মনীতির প্রতি আনুগত্য তাদের সংস্কৃতির অন্যতম অংশ। সেদেশে ট্র্যাফিক আইন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এর প্রতিফলন প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান।
সহনশীলতা ও শিক্ষাঃ সাধারণভাবে ইংরেজদের সহনশীলতা, ভদ্রতা,শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসেবে গণ্য করা হয়। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের আচরণ এবং অন্যের প্রতি সম্মান দেখানোর প্রবণতা বেশ লক্ষণীয়।
আত্মনির্ভরশীলতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতাঃ ইংরেজরা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যবোধকে যথেষ্ট ও যথার্থ মূল্য দেয়। শুধু তাই নয়,তারা সাধারণত নিজেদের কাজ নিজেরাই করতে পছন্দ করে এবং অন্যের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করাকে অনুচিত বলে মনে করে থাকে।
কৌতুহল ও সৃজনশীল শক্তিঃ আমরা জানি যে,জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইংরেজদের অবদান উল্লেখযোগ্য। তাদের মধ্যে নতুন কিছু জানার ও উদ্ভাবনের আগ্রহ দেখা যায়। শুধু তাই নয়,ইংরেজদের মধ্যে এক ধরনের স্বতন্ত্র ও সূক্ষ্ম রসবোধ লক্ষ্য করা যায়, যা অনেক সময় পরিস্থিতিকে হালকা করে তোলে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,ব্যক্তিগত বৈচিত্র্য এবং সময়ের সাথে সাথে মানুষের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটে।তবে ঔপনিবেশিক প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া ধারণা সম্পূর্ণ বাস্তব নাও হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে কোনো একটি জাতির সম্পর্কে এক ধরনের সরলীকৃত ধারণা পোষণ করা উচিত নয়। কিন্তু ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসনের প্রেক্ষাপটে ভারতীয়দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। তবে বলা যেতে পারে যে,একটি জাতির প্রকৃতি বহুমাত্রিক এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে।
Comments
Post a Comment