য়ুরোপ (6th.Sem,CBCS )প্রবাসীর পত্র গ্রন্থ অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথের লন্ডন শহর সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার পরিচয় দাও।
'য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র' গ্ৰন্থ অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথের লন্ডন শহর সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার পরিচয় দাও (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ষষ্ঠ সেমিস্টার বাংলা অনার্স CBCS,CC24)।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, নিতান্ত তরুণ বয়সে রবীন্দ্রনাথ 'য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র'লিখেছিলেন। আর সেখানে তিনি একপত্রে লিখলেন- "তোমাকে যে পত্র লিখেছি তা ভারতীতে আমার ইচ্ছামত প্রকাশ করা হয়েছে।" তবে য়ুরোপ প্রবাসী পত্র গ্রন্থের সব পত্রগুলি ভারতীর উদ্দেশ্যে লেখা হয়নি। আর এই গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ সে কথা ব্যক্ত করেছেন। আর সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-
'য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র' গ্রন্থে লন্ডনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম বিদেশ ভ্রমণের (১৮৭৮-১৮৮০) অভিজ্ঞতা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। আর সেই বর্ণনায় কিশোর রবীন্দ্রনাথের চোখে লন্ডন শহর এবং সেখানকার জীবনযাত্রা বেশ কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য তার মননে চিত্রিত হয়। সেই চিত্রনে আমরা দেখি-
• লন্ডন শহরের পরিবেশ এবং জনজীবনঃ লন্ডন শহরের পরিবেশ রবীন্দ্রনাথের কাছে একটা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ধোঁয়াটে এবং স্যাঁতস্যাঁতে মনে হয়েছিল।তবে এই শহরের পরিবেশ তাঁর মনে এক ধরণের তিক্ত বিষণ্ণতাবোধ সৃষ্টি করেছিল।আসলে তিনি লন্ডন শহরের ব্যস্ত জীবনযাত্রাকে পছন্দ করেননি। বিশেষ করে ট্রেনের অবিরাম ছোটাছুটি তাঁকে বেশ হতবাক করেছিল। তিনি লিখলেন যে লন্ডনের ট্রেনের চেহারা যেন এখানকার মানুষের মতোই- মহা ব্যস্তভাবে হাঁসফাঁস করতে চলেছে।"
সেই সাথে লন্ডন শহরের রাস্তাঘাট পাথরের তৈরি এবং বেশ পরিষ্কার হলেও তিনি গাড়ির শব্দের আধিক্য লক্ষ্য করেছিলেন। তবে বিশাল বিশাল বাড়িঘর এবং জমকালো দোকানপাট শহরটিকে জাঁকজমকপূর্ণ করে তুলেছিল।আর সেখানে-
• ব্রিটিশ সমাজ ও সংস্কৃতিঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লন্ডনে থাকাকালীন তিনি ব্রিটিশ সমাজের ঘনিষ্ঠ পরিচয় লাভ করেন এবং তাদের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। আর সান্নিধ্যে এসে তিনি ইংরেজদের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে কড়া মন্তব্য করেন। আর মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, তারা নোংরা না হলেও ভারতীয় মানদণ্ডে অপরিষ্কার।তবে এই সময়কালে ব্রিটিশ সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল। লন্ডনে থাকাকালী তিনি দুবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলেন।যেখানে তিনি বিখ্যাত বাগ্মী গ্ল্যাডস্টোনের বক্তৃতা শোনার সুযোগ পান এবং তার বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। তবে সেখানকার-
• বাসস্থান এবং শিক্ষাঃ লন্ডনে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ প্রথমে মিস্টার বার্কার নামে একজন ল্যাটিন ও গ্রিক পণ্ডিতের পরিবারে এবং পরে ডক্টর স্কট (যাকে তিনি মিস্টার কে বলে উল্লেখ করেছেন) নামে একজন ভদ্র গৃহস্থের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব আর্টস অ্যান্ড ল' বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখানে অধ্যাপক হেনরি মর্লির কাছে ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। তবে-
• প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিঃ লন্ডন শহর কয়লার ধোঁয়ায় ভারাক্রান্ত ও দূষিত পরিবেশ। আর সেই দূষিত পরিবেশ রবীন্দ্রনাথের কোনমতেই ভালো লাগেনি। সেই কারণে তিনি কিছুদিনের জন্য লন্ডন ছেড়ে কেন্টের টুনব্রিজ ওয়েলসে পল্লী পরিবেশের মধ্যে যান। আর সেই পল্লীতে গিয়ে তিনি দীর্ঘদিন পর বেশ স্বস্তি অনুভব করেছিলেন।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,রবীন্দ্রনাথ লন্ডনে থাকাকালীন লন্ডন শহরের প্রতি প্রতি একটা মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। আর সেই অনুভূতি থেকে তিনি লন্ডনের প্রাকৃতিক পরিবেশকে কিছুটা বিরূপ মনে করেছেন। তবে সেই সাথে তিনি সেখানকার সামাজিক জীবন এবং মানুষের ব্যবহার সম্পর্কেও কিছু কথা বলেছেন।আর এই প্রেক্ষিতে'য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র' গ্রন্থে বর্ণিত রবীন্দ্রনাথের অভিজ্ঞতা, তাঁর ইউরোপ ভ্রমণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাঁর সাহিত্যিক জীবনের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এ কথা আমাদের স্বীকার করতেই হয়।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube ।
Comments
Post a Comment