কৃষ্ণাভামিনী দেবীর 'ইংল্যান্ডে বঙ্গমহিলা' গ্রন্থটির রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ছিল- তা আলোচনা করো-2022, (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ষষ্ঠ সেমিস্টার, বাংলা অনার্স)।
•আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, কৃষ্ণাভামিনী দেবীর 'ইংল্যান্ডে বঙ্গমহিলা' গ্রন্থটি রচনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল- বাঙালি নারীদের বিদেশযাত্রার এবং ইংল্যান্ডের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।আর এই প্রেক্ষিতে গ্রন্থটি একদিকে যেমন বাঙালি নারীদের মধ্যে বিদেশ যাত্রার আগ্রহ তৈরি করতে সাহায্য করে, আবার অপরদিকে গ্ৰন্থটি ঊনবিংশ শতাব্দীর নারী-মুক্তির সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল এ কথা আমাদের স্বীকার করতেই হয়। তবে-
কৃষ্ণাভামিনী দাস ছিলেন প্রথম বাঙালি মহিলা, যিনি বিদেশ ভ্রমণ করেছিলেন। আর সেই ভ্রমণের যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য তাঁর "ইংল্যান্ডে বঙ্গমহিলা" গ্রন্থে প্রকাশিত হয়। যে গ্রন্থে তিনি ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থান, সংস্কৃতি, এবং সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। আসলে তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের পরিবেশ, নারী শিক্ষা, নারী জগতের সংস্কৃতি, নারীদের স্বাধীনতা, নারীদের বাইরে জগত সম্পর্কে সচেতন করা। আর এই দৃষ্টিতে আমরা ইংল্যান্ডের বঙ্গমহিলা গ্রন্থে দেখতে পাই-
•আমাদের দেশে বাঙালি নারীদের একটি অন্যতম গুণ-তারা ঘরোয়া ভাবে থাকতে ভীষণ ভালোবাসেন বা শ্রদ্ধা করেন। আসলে তারা চার দেওয়ালের মধ্যে থাকতে বেশি পছন্দ করেন। তাই তারা বাইরে যেতে, বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণ করতে তাদের মধ্যে এত অনাগ্রহ। তাই লেখিকা বাঙালি নারীদের মধ্যে বিদেশযাত্রার আগ্রহ তৈরি করা এবং তাদের নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এই গ্রন্থ রচনা। শুধু তাই নয়-
• ইংল্যান্ডের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বাঙালি নারীদের ধারণা দেওয়া। ঊনবিংশ শতাব্দীর নারী-মুক্তির সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে বাঙালি নারীদের নিজেদের স্বাধীনতা ও আত্ম-পরিচয় সম্পর্কে সচেতন করা।
• 'ইংল্যান্ডে বঙ্গমহিলা' গ্রন্থটি বাঙালি নারীদের মধ্যে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করে। এই গ্রন্থটি বাঙালি নারীদের আত্ম-পরিচয় ও স্বাধীনতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। আর এই প্রেক্ষিতে-
• আমরা বলতে পারি যে,ইংল্যান্ডের বঙ্গমহিলা গ্রন্থটি রচনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল উনিশ শতকের ইংল্যান্ডের সমাজ ও জীবনযাত্রার চিত্র একজন বাঙালি নারীর চোখের সামনে তুলে ধরা। লেখিকা কৃষ্ণভামিনী দাস, যিনি একজন রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারের বধূ ছিলেন, তাঁর এই ভ্রমণকাহিনীতে সেই সময়ের ইংল্যান্ডের রীতিনীতি, মানুষের বিশ্বাস, সামাজিক প্রথা এবং বিশেষ করে নারীদের জীবন কেমন ছিল তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন।আর সেখানে লেখিকার উদ্দেশ্য ছিল --
•নতুন দিগন্ত উন্মোচন•
আলোচ্য গ্ৰন্থ হতে আমরা জানতে পারি যে,তৎকালীন বাঙালি সমাজের নারীরা সাধারণত গৃহবন্দী জীবন যাপন করতেন এবং বাইরের জগৎ সম্পর্কে তারা ছিলেন উদাসীন। কৃষ্ণভাবিনী দাসের এই গ্রন্থ ইংল্যান্ডের মুক্ত ও প্রগতিশীল জীবন সম্পর্কে ধারণা দিয়ে বাঙালি নারীদের মনে নতুন আকাঙ্ক্ষা ও কৌতূহল সৃষ্টি করতে পারাই ছিল লেখিকার অন্যতম উদ্দেশ্য।
•দু'দেশের নারীর তুলনায়•
লেখিকা কৃষ্ণাভামিনী দেবী সম্ভবত ইংল্যান্ডের নারীদের স্বাধীনতা, শিক্ষা, সমাজ চিন্তা এবং সামাজিক অবস্থানের সাথে বঙ্গীয় নারীদের পরিস্থিতি তুলনা করে একটি সচেতনতা মূলক পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আর সেই চাওয়া থেকেই এই ইংল্যান্ডের বঙ্গমহিলা গ্রন্থটি প্রকাশনা।
•ব্যক্তি অভিজ্ঞতা উন্মোচন•
লেখিকা নিজের মধ্যে অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিকে সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার একটি স্বাভাবিক, মানবিক মনোভাব ছিল। ইংল্যান্ডের মতো একটি ভিন্ন সংস্কৃতি ও পরিবেশে লেখিকার কেমন লেগেছিল, সেই অভিজ্ঞতা তিনি পাঠকের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
•নারীমুক্তি ও শিক্ষা উন্মোচন•
আলোচ্য গ্ৰন্থটিতে সরাসরি কোনো নারীবাদী বার্তা নাও হয়ত নেই, তবে ইংল্যান্ডের নারীদের জীবনযাত্রা দেখে কৃষ্ণভামিনী দাস সম্ভবত বঙ্গীয় নারীদের শিক্ষা ও মুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন এবং সেই ভাবনা তাঁর লেখায় কোথাও না কোথাও প্রতিফলিত হয়েছে নারী মুক্তির উন্থামোচনের পথ। যে পথ ভারতীয় নারী সমাজের নারী মুক্তির আলোর দিশা দেখায়।
•পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, 'ইংল্যান্ডের বঙ্গমহিলা' গ্রন্থটি উনিশ শতকের ইংল্যান্ড দেশকে একজন বাঙালি নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা এবং সেই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তৎকালীন বাঙালি সমাজকে একটি নতুন বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে রচিত হয়েছিল। আর সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লেখিকা এই গ্রন্থটি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।আসলে তৎকালীন সময়ে ভারতীয় নারীদের মধ্যে ছিল একটি সংস্কার, রীতিনীতি।আর সেই সংস্কারে বশবর্তী হয়ে নারীরা সাধারণত চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকার জন্য তাদের মধ্যে শিক্ষার যে বিস্তার তা পৌঁছাতে পারেনি বা তারা গ্রহণ করতে পারেনি।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা নোটস সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক এবং 'SHESHER KOBITA SUNDARBAN' Youtube channel ।
Comments
Post a Comment