মালতীবালা বালিকা (4th.Sem Major )বিদ্যালয়'কবিতাটি এক কিশোরী বালিকার প্রথম প্রেম এবং তার স্মৃতিচারণের আখ্যান-আলোচনা করো।
কবি জয় গোস্বামীর 'মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়' কবিতাটি এক কিশোরী বালিকার প্রথম প্রেম এবং তার স্মৃতিচারণের আখ্যান-আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা মেজর, DS-7, Unit- IV)।
কৈশরের প্রথম প্রেম ও তার স্মৃতিঃ মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয় কবিতার একজন নারী, যে তার কৈশোরে বেণীমাধব নামের এক ছেলের প্রতি দুর্বলতার কথা স্মরণ করেছে। বেণীমাধব লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল এবং শহরে থাকত। মেয়েটি তখন নবম শ্রেণীতে পড়ত, যখন সবে সে শাড়ি পরতে শুরু করেছে। তাদের আলাপ হয়েছিল সুলেখাদের বাড়িতে। এই সময়টা তার কাছে ছিল এক নিষ্পাপ প্রেমের দিন, যেখানে বেণীমাধবের বাঁশির সুর, লুকিয়ে দেখা করা, এবং অঙ্ক করতে বসেও বেণীমাধবের কথা ভাবার মতো ছোট ছোট স্মৃতিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়েটির নিষ্পাপ ভালবাসা ও আত্মত্যাগঃ মেয়েটি বেণীমাধবকে ভালোবেসেছিল, কিন্তু যখন সে বেণীমাধবকে তার প্রেমিকার পাশে আলোর নিচে দেখেছিল, তখন তার মন ভেঙে গেলেও সে তাদের জন্য ভালো চেয়েছিল। এই অংশটি মেয়েটির ভালোবাসার এক মহৎ দিক প্রকাশ করে, যেখানে ব্যক্তিগত দুঃখের উপরে উঠে অন্যের সুখ কামনার একটি সুন্দর ছবি ফুটে ওঠে।
বাস্তব জীবনের কঠোর সত্যকথনঃ আমরা দেখতে পাই যে, কবিতার অন্তিমে বালিকার স্মৃতিচারণ শেষ হয় এবং বর্তমানের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয় মেয়েটি। তার বাবা দোকানে কাজ করতেন,তবে তার পরের বোনটিও চোরাপথের বাঁকে হারিয়ে যায়।যার বর্তমান অবস্থা অর্থাৎ সে কোথায় আছে তার জানা নেই।মেয়েটি এখন এই পাড়ার সেলাই দিদিমণি অর্থাৎ সেলাই করে জীবন নির্বাহ করে। তার এই বর্তমান অবস্থা তার দারিদ্র্য ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করে।
ফেলে আসা স্বপ্নময় বেদনাঃ কৈশোরের সেই মিষ্টি স্মৃতি এবং বর্তমানের রূঢ় বাস্তবতা মেয়েটির মনে একটি গভীর বেদনা সৃষ্টি করে। "আজ জুটেছে, কাল কী হবে? – কালের ঘরে শনি" এই লাইনটি তার বর্তমান জীবনের অনিশ্চয়তাকে তুলে ধরে।
প্রতিবাদের প্রশ্নঃ কবিতার শেষে আমরা দেখি মেয়েটি বেণীমাধবের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় এবং একটি গভীর, চাপা ক্ষোভ বা প্রতিবাদের সুর তার কন্ঠে শুনতে পাই। আর সেখানে আমরা দেখি- "তবু আগুন বেণীমাধব আগুন জ্বলে কই? কেমন হবে আমিও যদি নষ্ট মেয়ে হই।"
আসলে মেয়েটির এই কথাগুলি তার জীবনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা চাপা কষ্ট, হয়তো সমাজের প্রতি তার এক ধরনের ক্ষোভ এবং বেণীমাধবের প্রতি এক গভীর অভিযোগের প্রকাশ। আর এটি ইঙ্গিত দেয় যে, সমাজের নানা চাপ এবং নিজের কষ্ট তাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছে যে,যেখানে সে নিজের নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করার কথাও ভাবতে বাধ্য হচ্ছে, যদিও তা কেবলমাত্র একটি প্রশ্ন ছাড়া আর কিছুই না!
পরিশেষে আমরা বলতে পারি,'মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়'কবিতাটি এক কিশোরী প্রেমের স্মৃতি, সেই প্রেমের মধ্যে ছিল নিষ্পাপ ভালবাসা এবং সময়ের সাথে সাথে জীবনের বাস্তবতার কঠিন আঘাতে সেই স্মৃতিগুলো পরিবর্তিত হয়ে যায়। আর এমন করুন এক মর্মস্পর্শী চিত্র কবি এখানে তুলে ধরেছেন। যেখানে এটি স্মৃতিময় গভীর বেদনা, প্রেম, হারানোর বেদনা, এবং সামাজিক বাস্তবতার এক অসাধারণ মেলবন্ধনে বৈচিত্র্যময় ভঙ্গিতে আবদ্ধ হয়।
Comments
Post a Comment