Skip to main content

জন্মভূমি(RMV-XII) কবিতার ব্যাখ্যামূলক, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও MCQ প্রশ্নোত্তর।

জন্মভূমি, যতীন্দ্রমোহন বাগচী কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫, পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় সংসদ, উচ্চমাধ্যমিক)

১) "এটি আমার গ্ৰাম, আমার স্বর্গপুরী/ঐখানেতে হৃদয় আমার গেছে চুরি।"- উদ্ধৃতাংশটি অবলম্বনে কবির কাছে তার গ্রাম কেন স্বর্গপুরী আলোচনা করো।

উত্তরঃ কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী রচিত জন্মভূমি কবিতা অনুসারে আমরা জানতে পারি যে, কবির জন্মভূমি অড়হর খেতের আড়ালে, সবুজ কেয়াঝাড় এর সমন্বয়ে। যেটি আম কাঁঠালের ঘেরা বাগান। যেখানে রাখাল বালকেরা আপন মনে খেলায় মেতে ওঠে। সেই জন্মভূমি কবির কাছে স্বর্গপুরী বলে মনে হয়। যে জন্মভূমির প্রতি প্রতিটি মানুষের একটা হৃদয়ের টান থাকে।তবে-

       সেই জন্মভূমিতে আধুনিক জীবনযাত্রার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, ডাকঘর, রাজপ্রাসাদ বা ধনীর দেবালয় নেই। তবুও সেখানে প্রত্যেক পরিবার ও ও প্রতিবেশীদের মধ্যে যে মানসিক সুখ আছে, তাকেই কবি জন্মভূমিকে সর্গপুরী বলে মনে করেন। আসলে কবি এখানে মানসিক শান্তির পাশাপাশি স্বর্গসুখ অনুভব করে জন্মভূমি কে বলেছেন-

          "ঐটি আমার গ্রাম, আমার স্বর্গপুরী।"

২) "তবু আমার চিত্ত সেথায় গেছে চুরি।"-কবির চিত্ত সেথায় বলতে কোথায় এবং কেন চুরি গেছে? লেখো।

উত্তরঃ জন্মভূমি কবিতায় কবির চিত্ত তার জন্মভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে চুরি হয়ে গেছে। আসলে কোভিদ জন্মভূমি তৎকালীন বাংলাদেশের কোন এক গ্রামে। আর সেই গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা। যেখানে বাঁশবাগানের পাশ দিয়ে পাড়ার একটা পথ বেঁকে চলে গেছে। আর সেখানে আছে সজনে গাছের শাখা, পথে গরুর গাড়ির চাকার দাগ, পথের ধারে ঘুঁটে ছাইয়ের গাদা। যে চিত্র কবির কাছে-

       "বিশ্বশোভা ঐখানেতে গেছে চুরি।"

   আসলে কবির জন্মভূমির গ্রামে পাখিদের ডাকাডাকি, আর অসংখ্য পাখিদের বসবাসের কারণে গাছের শাখা প্রশাখা নত হয়ে পড়ে। যেখানে পথ চলতে গিয়ে ঝরা শুকনো পাতা পায়ে পায়ে জড়িয়ে যায়। প্রকৃতির এই বিচিত্র লীলায় কবি জন্মভূমির প্রতি একটা আত্মিক টান অনুভব করেন। আর তখনই কবির মনে হয়েছে-

           "বনে ভরা এমনি আমার স্বর্গপুরী,                                         তবুও আমার চিত্ত সেথায় গেছে চুরি।"

৩) জন্মভূমি কবিতা অবলম্বনে কবির গ্ৰামে কি কি নেই- তার আলোচনা করো।

উত্তরঃ আমরা 'জন্মভূমি' কবিতার পঞ্চম স্তবক অনুসারে জানতে পারি যে, কবির গ্রামে কোন পাঠশালা নেই। আর পাঠশালা না থাকার কারণে সে গ্রামে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে পারেনি। পাশাপাশি সেই গ্রামে কোন রাজার বসবাস নেই। যার ফলে ওই গ্রামে কোন দর্শনীয় প্রাসাদ কিংবা ধনী ব্যক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোনো দেবালয় নেই। নেই কোন ডাকঘর। যার ফলে এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্ত পর্যন্ত কোন ভাব, থাকে ভাবনা বা সংস্কৃতি আদান-প্রদান হয় না। গ্রামের মানুষগুলির অভাব দারিদ্র্য থাকলেও তাদের মধ্যে কোন সংকোচবোধ নেই। তবে -

      সেই গ্রামের সরল সাদাসিধে মানুষদের অবস্থার উন্নতির কোন চেষ্টা না থাকার জন্য এই দারিদ্রতা তাদের এখনো বইয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। যেখানে কবি সেই সকল মানুষগুলিকে 'সৃষ্টিছাড়া' আখ্যা  দিলেও কবির কাছে তাঁর জন্মভূমি ভীষণ আকর্ষণীয়। তাই কবি বলেন-

       "সৃষ্টিছাড়া এমনি আমার স্বর্গপুরী,                                       সকল অভাব তবু সেথায় গেছে চুরি।"

৪) জন্মভূমি কবিতায় বর্ণিত গ্রামচিত্র অংকন করো এবং জন্মভূমির প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে- তা আলোচনা করো ।

উত্তরঃ জন্মভূমি কবিতা অবলম্বনে তৎকালীন বাংলাদেশের কোন এক গ্রামের চিত্র বর্ণনা পাওয়া যায়। আর সেই বর্ণনায় আমরা দেখি, বাংলাদেশের চিরাচরিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যরাশি। যেখানে অড়হর ক্ষেত্রে আড়ালে অবস্থিত গ্রামটির প্রান্তে আছে সবুজ কেয়াঝাড়। আছে আম কাঁঠালের বাগান, যেখানে রাখাল বালকেরা জটলা করে। গ্রামের বাঁকা পথের ধারে বাঁশ বাগান। পথের ধারে আছে সজনে গাছ। আছে গরুর গাড়ির চাকার দাগ পথে। বেড়ার পাশে আমরা দেখতে পাই ঘুঁটে ছাই এর গাদা। আর এই সকল বিষয়গুলি গ্রামকে অপরূপ সুন্দর করে তুলেছে। তবে-

      গ্রামের এই সকল দৃশ্যগুলি শহরে কোনমতেই দেখা যায় না। সেই ঝোপ ঝাড়ে সন্ধ্যায় পাখিদের বাসায় যাওয়া-আসা। পাখিদের গাছের ডালে ডালে আনাগোনা। চলার পথে শুকনো পাতা পায়ের চাপে গুড়ো হয়ে যায়। এই সকল নিঃসর্গ চিত্রের অপরূপ লীলা একমাত্র গ্রামেই দৃশ্যমান। যেখানে -

         পাঠশালা, ডাকঘর, ডাক্তার-খানা, রাজপ্রাসাদ, দেবালয় না থাকলেও গ্রামের মানুষগুলি সহজ সরল আড়ম্বরহীন জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত। তাদের মধ্যে দুঃখ দারিদ্রতা আছে, কিন্তু ঐক্য এবং সম্প্রীতি তাদের কাছে এক মূল্যবান সম্পদ। তারা প্রতি সন্ধ্যাবেলায় মিলনগীতিতে অংশগ্রহণ করে। আসলে-

       আধুনিক জীবনধারার কোন স্পর্শ তাদের জীবনে নেই। তবুও জন্মভূমির প্রতি তাদের আছে একটা আত্মিক আকর্ষণ, আছে মমাত্তবোধ। অভাব অনটনের মধ্যে তারা পায় বাপের স্নেহ, মায়ের ভালোবাসা। আবার তারা প্রিয়ার হাসিমুখ দেখে তীব্র সুখ অনুভব করে। জন্মভূমির সেই গ্রাম কবির হৃদয়ে এনে দেয় পরম সুখ। তাই কবি বলেন-

      "ঐখানেতে সকল শান্তি, আমার সকল সুখ,                        বাবার স্নেহ, মায়ের আদর, প্রিয়ার হাসি মুখ।"


১) জন্মভূমি কবিতার কবি হলেন-যতীন্দ্রমোহন বাগচী। 

২) কবির গ্রামটি আছে-আইরি ক্ষেতের আড়ে।

৩) কবির জন্মভূমিতে আছে সবুজ-কেয়া ঝাড়।

৪) কোথাও বা তার বেড়ার পাশে-ঘুঁটে ছাইয়ছর গাদা।

৫) কবির জন্মভূমিতে নেই-পদ্মদীঘি।

৬) কবির গ্রামের সংকীর্তন বসে-সন্ধ্যাবেলায়।

৭) জন্মভূমি কবিতায় যে পাড়ার উল্লেখ আছে-কুমোর পাড়ার।


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...