Skip to main content

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের(RMV,XII) 'ছেলেটা' কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছেলেটা' কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো(পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় সংসদ উচ্চমাধ্যমিক)।

            আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, 'পুনশ্চ' কাব্যগ্রন্থের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অন্যতম কবিতা 'ছেলেটা'। আসলে এই কবিতাটি একটি আখ্যানধর্মী গল্প কবিতা। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গল্প কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম অনুসারে কবিতাটির নামকরণ করেছেন। বলা যায় এখানে তিনি বিষয়ের তুলনায় চরিত্রকে অধিক পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ আরোপ করেছেন। আর সেই কারণে কবি আলোচ্য কবিতার নামকরণের ক্ষেত্রে মুখ্য চরিত্র 'ছেলেটা' কে গ্রহণ করেছেন। যেখানে-

             এই ছেলেটা আগাছার মত অতি অযত্নে আপন মনে বেড়ে ওঠে। আসলে ছেলেটা অনামী পিতৃমাতৃহীন। আর পিতৃমাতৃহীন হওয়ার কারণে ছেলেটা ছোটবেলা থেকে দুরন্ত ও ডানপিটে হয়ে ওঠে। সে এতটাই দুরন্ত যে, কুল পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে তার হাড় ভেঙে যায়। শুধু তাই নয়-

         একবার ছেলেটা বনের মধ্যে গিয়ে বিষফল খায়। আর বিষফল খাওয়াতে তার জীবন সংশয় দেখা দেয়। ছেলেটা এতটাই ডানপিটে যে, একবার রথ দেখতে গিয়ে হারিয়ে যায়। কিন্তু সে হারিয়ে গেলেও আবার ফিরে আসে। তার চরিত্রের মধ্যে নিত্যনতুন দুষ্টামি দেখা দেয়। এই দুষ্টুমির জন্য সে প্রহার ও গালি খায়, তবুও তার স্বভাব অপরিবর্তিত থেকে যায়। এরপরেও সে-

      একবার নদীর জলে ডুব দিয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। আর দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিলে রাখাল বালক তাকে জল থেকে তুলে তার প্রাণ রক্ষা করে। তবুও ছেলেটার দুষ্টুমি কিছুতেই থামেনা। কখনো কখনো সে বক্সীদের বাগান থেকে ফল চুরি করে। আবার পাকড়াশীদের মেজো ছেলে কাঁচ পরানোর চোঙ দেয়নি বলে সে সেটি চুরি করে আনে। আবার -

          ছেলেটা মাঠ থেকে কোলাব্যাঙ ধরে এনে বাগানের গর্তে পোষে। আবার কখনো কখনো গোবর পোকা বাক্সের মধ্যে রাখে। স্কুলে যাওয়ার সময় পকেটে রাখে কাঠবিড়ালী। মাস্টারমশাইয়ের টেবিলের ডেক্সের মধ্যে সে হেলে সাপ রেখে দেয়। এত দুষ্টুমিভরা ছেলেটির মধ্যে ছিল সহানুভূতি, সমবেদনা। তার পোষা কুকুরটি মারা গেলে-

     "দুদিন সে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদে বাড়ালো,                            মুখে অন্নজল রুচল না-"

         এক প্রতিবেশীর ভাতে মুখ দেবার অপরাধে তারা কুকুরটাকে মেরে ফেলে। অতঃপর থেকেই ছেলেটার মনে মেরে ফেলার প্রতিশোধ বাসনা তীব্র হয়। তাই সেই প্রতিবেশীর ভাগ্নের মাথার উপর চাপিয়ে দিয়ে এলো এক ভাঙা হাড়ি। আবার সিধু গয়লানী ছেলেটাকে খুব ভালো বাসলেও দুষ্টুমির হাত থেকে সেও রক্ষা পেত না। তবে পড়াশোনায় তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।

       পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, গোটা কবিতাটি দুষ্টুমিভরা একটি ছেলেকে নিয়ে আলোচিত হয়েছে। যে ছেলেটি বেড়ে ওঠে সিধু গয়লানীর পরিবারে। আর কবিতাটি ছেলেটার দৌরাত্ম্যের কথা, ছেলেটির চরিত্রের কথা বারে বারে এসে যাওয়ার কারণে 'ছেলেটা' এই নামকরণ নিঃসন্দেহে সার্থক এবং তাৎপর্যপূর্ণ।

•ঠিক এরুপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏•

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...