Skip to main content

চৈতন্য ভাগবতের আদিখন্ড(2nd Sem Major )অবলম্বনে হরিদাসের চরিত্র ও মাহাত্ম্য আলোচনা করো।

চৈতন্য ভাগবতের আদিখণ্ড অবলম্বনে হরিদাসের চরিত্র ও মাহাত্ম্য আলোচনা কর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা মেজর এনএপি)।

আলোচনা শুরুতেই আমরা বলতে পারি যে,চৈতন্য ভাগবতের আদিখণ্ডে হরিদাস ঠাকুর এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো উদ্ভাসিত হয়ে আছেন। তাঁর জীবন, ভক্তি এবং সহনশীলতা তাঁকে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের অন্যতম প্রিয় ও প্রধান পার্ষদ রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শুধুমাত্র তাই নয়,হরিদাসের চরিত্র ও মাহাত্ম্য কেবল তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা বা ভক্তির গভীরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বলা যায় তা ছিল তাঁর দৃঢ়তা, উদারতা এবং ভাগবত ধর্মের প্রতি অবিচল নিষ্ঠার এক মূর্ত প্রতীক।আর এই সকল তথ্যের ভিত্তিতে হরিদাসের চরিত্রে যেসকল বৈশিষ্ট্য আমরা পাই তাহলো-

       অবিচল ভক্তিনিষ্ঠাঃ  হরিদাসের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ভগবানের নাম জপের প্রতি তাঁর অপ্রতিরোধ্য অপরিমেয় আসক্তি।আর সেই আসক্তিতে তিনি দিনে তিন লক্ষ হরিনাম জপ করতেন। শুধু তাই নয় এই হরিনাম জপ করার নিয়ম তিনি কখনোই ভঙ্গ করেননি শত প্রতিকূলতার মধ্যেও। আসলে হরিদাসের এই নাম জপের প্রতি তাঁর ভক্তিনিষ্ঠা ছিল অতুলনীয়। তাই তাঁর মধ্যে দেখি-

          •প্রবল সহনশীলতা ও ক্ষমাঃ  হরিদাস ঠাকুর ছিলেন জাতিতে যবন, তাই তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজে তাঁকে বহু অত্যাচার ও উৎপীড়ন সহ্য করতে হয়েছিল। কাজীর বিচারে তাঁকে বাইশ বাজারে বেত্রাঘাত করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি ভক্তিতে, সহনশীলতায় অবিচল ছিলেন। এমনকি যারা তাঁকে প্রহার করছিল, তাদের প্রতিও তাঁর কোনো বিদ্বেষ ছিল না, বরং তিনি তাদের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তাই বলা যায় তাঁর এই ক্ষমা ও সহনশীলতার গুণ ছিল অসাধারণ। এছাড়াও তিনি ছিলেন -

            •নিরভিমানী ও বিনয়ীঃ চৈতন্যদেবের প্রতি এত ভক্তি ও এতসিদ্ধি লাভ করেও হরিদাস ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও নিরভিমানী।আসলে  তিনি নিজেকে তৃণাদপি সুনীচ মনে করতেন এবং কখনোই নিজের মহিমা প্রকাশ করেননি। শুধু তাই নয়,তিনি সব সময় নিজেকে দীনহীন ভৃত্য মনে করতেন। তাই তাঁর মধ্যে দেখতে পাই -

         •ধর্মীয় উদারতাঃ হরিদাস ঠাকুর কখনই জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ মানতেন না। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে,নাম জপের মাধ্যমেই সব মানুষ মুক্তি লাভ করতে পারে।আসলে তাঁর জীবনের এই উদার দৃষ্টিভঙ্গি তৎকালীন সমাজের জন্য এক নতুন দিশা, নতুন গৌড়ীয় পথের সন্ধান দেখিয়েছিল। কারণ তিনি ছিলেন -

        •মহাসিদ্ধ পুরুষঃ তৎকালীন সময়ে হরিদাসের নাম জপের প্রভাবে সমাজে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা ঘটত।আর সেখানে আমরা উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি- তাঁকে মারার জন্য উদ্যত সাপ তাঁর মন্ত্রবলে শান্ত হয়ে গিয়েছিল। যদিও তিনি এই সিদ্ধি কখনো প্রকাশ করেননি, তবুও বলা যায়,তাঁর গোটাজীবন অলৌকিকতায় পরিপূর্ণ ছিল।এরই পাশাপাশি হরিদাসের মাহাত্ম্যে আমরা দেখতে পাই -

          •নামাচার্য উপাধিঃ মহাপ্রভু চৈতন্যদেব স্বয়ং হরিদাস ঠাকুরকে নামাচার্য উপাধি দিয়েছিলেন। তবে এর কারণ ছিল হরিনামের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অসামান্য অবদান। তিনিই তৎকালীন সমাজকে শিখিয়েছিলেন যে, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষ হরিনাম জপ করতে পারে। শুধু তাই নয় এই জপতপের মাধ্যমেই কলিযুগে মানুষের মুক্তি সম্ভব।আসলে তিনি ছিলেন-

        •চৈতন্যদেবের প্রিয় পার্ষদঃ চৈতন্য মহাপ্রভু হরিদাসকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন। তিনি কখনও হরিদাসকে নিজের থেকে ভিন্ন মনে করতেন না। মহাপ্রভু তাঁকে নীলাচলে তাঁর গঙ্গার তীরে কুটিরে স্থান দিয়েছিলেন এবং তাঁর মহাপ্রয়াণের পর স্বয়ং তাঁর দেহ কোলে নিয়ে সংকীর্তন করেছিলেন।আর সেখানে-

          •ভাগবত ধর্মের মূল স্তম্ভঃআমরা চৈতন্য ভাগবতের আদিখন্ডে দেখি-হরিদাস ঠাকুর ভাগবত ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ছিলেন।আসলে তাঁর জীবন ছিল বৈষ্ণব ধর্মের আদর্শের এক জ্বলন্ত উদাহরণ।তাই তিনি দেখিয়েছিলেন, ভক্তি ও নিষ্ঠা থাকলে যেকোনো মানুষই ঈশ্বরের কৃপা লাভ করতে পারে।আর ঈশ্বরের অপার কৃপা লাভের পর এজীবনে মুক্তি আসবেই।তাই তিনি-

          •সমাজ বৈষম্যের ঊর্ধেঃ হরিদাস ঠাকুর তাঁর জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে, ভক্তি পথে জাতি বা বংশ কোনো বাধা নয় বা বাধা সৃষ্টি করতে পারে না।তাই তিনি সমাজের তথাকথিত নিচু শ্রেণীর মানুষ হয়েও ভক্তির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিলেন। বলা বাহুল্য সেটি ছিল তৎকালীন সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এক নীরব প্রতিবাদ ছিল।আসলে তিনি ছিলেন-

         •প্রেম সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীকঃ হরিদাসের জীবন ছিল প্রেম সৌন্দর্যের লীলাভূমি। তাই তিনি প্রেম ও ধৈর্যের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।তবে তিনি সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন এবং প্রেম দিয়েই সব বাধা, বিপত্তি অতিক্রম করেছিলেন।আসলে-                                               চৈতন্য ভাগবতের আদিখণ্ডে হরিদাস ঠাকুর কেবল একজন ভক্ত নন, তিনি এক মহান দার্শনিক এবং সমাজের অগ্রদূত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন। তাই তাঁর চরিত্র ও মাহাত্ম্য আজও আমাদের ভক্তি, সহনশীলতা এবং নাম জপতপের গুরুত্ব সম্পর্কে  আমাদের অনুপ্রাণিত করে, উৎসাহিত করে।

•°•ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 •°•

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...