Skip to main content

চৈতন্যভাগবত গ্ৰন্থের(2nd.Sem Major )পঞ্চদশ অধ্যায় অবলম্বনে চৈতন্য মহাপ্রভুর সহিত ঈশ্বরপুরীর সাক্ষাৎ ও গয়াগমনের ইতিবৃত্ত আলোচনা করো।

চৈতন্যভাগবত গ্ৰন্থের পঞ্চদশ অধ্যায় অবলম্বনে চৈতন্য মহাপ্রভুর সহিত ঈশ্বরপুরীর সাক্ষাৎ ও গয়াগমনের ইতিবৃত্ত আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, বাংলা মেজর)

            আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, চৈতন্যভাগবতের পঞ্চদশ অধ্যায়টি চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্বের বর্ণনা করেছেন কবি বৃন্দাবন দাস।আর এই অধ্যায়ে মূলত তাঁর গুরু ঈশ্বরপুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং গয়াগমনের মধ্য দিয়ে তাঁর ভক্তিসাধনার চূড়ান্ত উন্মোচন ও প্রেমাবেশের প্রারম্ভিক লক্ষণগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।আর সেখানে আমরা দেখি- 

ঈশ্বরপুরীর সাথে সাক্ষাৎ ও দীক্ষাঃ নবদ্বীপে তখন চৈতন্য এক প্রখ্যাত পণ্ডিত নিমাই পণ্ডিত ছিলেন। অবশ্য সে সময়ে তিনি সন্যাস গ্ৰহণ করেননি।কিন্তু তখন তাঁর অন্তরে ভক্তি শ্রদ্ধার বীজ ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হচ্ছিল।এই সময়েই ঈশ্বরপুরী নামক একজন মহাভাবুক ও প্রেমিক বৈষ্ণব নবদ্বীপে আসেন। আর এই ঈশ্বরপুরী ছিলেন মাধবেন্দ্র পুরীর শিষ্য এবং কৃষ্ণপ্রেমের এক মূর্ত প্রতীক।আর সেখানে-

 শ্রদ্ধা ও আতিথেয়তাঃ চৈতন্যভাগবত গ্ৰন্থানুসার আমরা জানতে পারি যে,ঈশ্বরপুরীর আগমনে নিমাই পণ্ডিত অত্যন্ত আনন্দিত হন। তবে তিনি একজন প্রসিদ্ধ পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও পরম বিনয় ও শ্রদ্ধার সঙ্গে ঈশ্বরপুরীর সেবা করেন। তাঁর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে ঈশ্বরপুরী তাঁর প্রতি প্রসন্ন হন। অতঃপর-

ভক্তি শিক্ষাঃ ঈশ্বরপুরী নিমাই পণ্ডিতকে গোপীভাবের ভক্তি এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রতি রাধাভাবের সেবা ও প্রেম সম্পর্কে শিক্ষা দেন। যদিও নিমাই পণ্ডিত স্বয়ং ঈশ্বরের অবতার ছিলেন, তবুও লোকশিক্ষার জন্য তিনি এই ভক্তিভাবের অনুশীলন করতেন।তবে বলা যায়- ঈশ্বরপুরীর সঙ্গে তাঁর কথোপকথন ও ভাববিনিময় তাঁর ভক্তির উন্মোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।

দীক্ষা গ্ৰহণঃ নিমাই পন্ডিত এই সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈশ্বরপুরীর কাছে দশাক্ষর গোপাল মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এই দীক্ষা গ্রহণের পর থেকে তাঁর প্রেমোন্মাদ আরও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। শুধু তাই নয়,তিনি প্রায়শই কৃষ্ণনাম জপ করতেন এবং মাঝে মাঝে ভক্তিভাবে বিহ্বল হয়ে পড়তেন।আসলে এই ঈশ্বরপুরীই ছিলেন তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গুরু। যেখানে-

                গয়াগমন ও প্রেমোন্মাদের উচ্ছ্বাস  

         •দীক্ষা গ্রহণের পর নিমাই পণ্ডিত তাঁর পিতার শ্রাদ্ধের জন্য গয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এই গয়াগমনই নিমাই পন্ডিতের জীবনে বলা যায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। অতঃপর-

পিতার পিন্ডদানঃগয়ায় গিয়ে নিমাই পণ্ডিত সযত্নে পিতার শ্রাদ্ধকার্য সম্পন্ন করেন। অতঃপর তিনি ফাল্গুনী নদীতে পিতার পিণ্ডদান করেন। এই সময়েও তাঁর হৃদয়ে প্রবল কৃষ্ণপ্রেমের স্পন্দন ছিল।

ঈশ্বরপুরীর সাথে পুনর্মিলনঃ গয়ায় গিয়েই নিমাই পণ্ডিতের সঙ্গে তাঁর গুরু ঈশ্বরপুরীর আবার সাক্ষাৎ হয়। এই মিলন ছিল তাঁর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরপুরীকে দেখামাত্রই নিমাই পণ্ডিতের প্রেমাবেশ তীব্রতর হয়। তিনি ঈশ্বরপুরীকে নিজের আকুলতা ও কৃষ্ণবিরহ প্রকাশ করেন।

 নিমাই পন্ডিতের প্রথম প্রেমোন্মাদঃ গয়ায় অবস্থানকালে ঈশ্বরপুরীর সঙ্গ পেয়ে নিমাই পণ্ডিতের প্রেমোন্মাদ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। আর সেখানে তিনি শ্রীকৃষ্ণের বিরহে কাতর হয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। তাঁর চোখ দিয়ে অবিরত অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, তাঁর শরীর এই সময়ে পুলকিত হয়ে ওঠে এবং কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে যেতে থাকে। তিনি তখন নিজের পাণ্ডিত্য, লোকলজ্জা বা সামাজিক অবস্থান সব কিছুই থেকে দূরে থাকতেন। বলা যায় কোনো কিছুই তিনি এই সময়ে পরোয়া করতেন না। কারণ কৃষ্ণপ্রেমের উন্মাদনা তাঁকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলেছে।যার ফলে-

 সর্বত্র কৃষ্ণদর্শনঃ গয়ায় গিয়েই নিমাই পণ্ডিতের মধ্যে এই অনুভূতি প্রবল হয় যে, কৃষ্ণই তাঁর একমাত্র আশ্রয়। তিনি সর্বত্র কৃষ্ণকে দেখতে শুরু করেন এবং কৃষ্ণনাম জপ করতে করতে জ্ঞানহারা হয়ে পড়তেন। এই সময়েই তিনি অনুশোচনা করে বলেন-                                                                                 "আমি কৃষ্ণকে হারালাম! আমার কৃষ্ণ                               কোথায়? 

দ্বিগ্বিজয়ী পন্ডিতের পরিবর্তনঃ গয়া থেকে ফিরে আসার পর নিমাই পণ্ডিত সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যান।যে পণ্ডিত আগে দিগ্বিজয় করতে চাইতেন, তিনি এখন শুধু কৃষ্ণনাম জপ করছেন এবং কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর থাকছেন। তাঁর এই পরিবর্তন দেখে সকলেই বিস্মিত হয়।

           পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,চৈতন্যভাগবতের পঞ্চদশ অধ্যায়ে বৃন্দাবন দাস এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যা চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের একটি সন্ধিক্ষণকে চিহ্নিত করে। ঈশ্বরপুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও তাঁর কাছে দীক্ষা গ্রহণ এবং গয়াগমন ও সেখানে প্রেমোন্মাদের উন্মোচন—এই দুটি ঘটনাই নিমাই পণ্ডিতকে একজন সাধারণ পণ্ডিত থেকে একজন প্রেমময় ভক্তে রূপান্তরিত করে এবং পরবর্তীকালে তাঁর সন্যাস গ্ৰহণের পথ প্রশস্ত করে।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel ।


Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...