লকের মুখ্যগুণ(2nd.Sem.) ও গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্য লেখো। বার্কলে কীভাবে সেই পার্থক্য খন্ডন করেন? আলোচনা করো।
লকের মুখ্যগুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্য লেখো। বার্কলে কীভাবে সেই পার্থক্য খন্ডন করেন? আলোচনা করো।
আলোচনার প্রথমেই আমরা বলে রাখি যে, অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক লকের মতে আমরা সংবেদনের মাধ্যমে যা লাভ করি, তা হল বস্তুর ধারণা বা প্রতিরূপ। এই ধারণা বা প্রতিরূপ হল বিভিন্ন গুণের সমষ্টি। আস নালে তাঁর মতে বস্তুর গুণ দুই প্রকার-১) মুখ্য গুণ এবং ২) গৌণ গুণ। আর এই দুই গুণের মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১) লক বলেন মুখ্য গুণগুলি বস্তুকে আশ্রয় করেই থাকে। বস্তু ছাড়া গুণের কোন অস্তিত্ব নেই। কাজেই, মুখ্য গুনগুলি বস্তুগত রূপে গণ্য হয়। কিন্তু -
• গৌণ গুণগুলি বস্তুতে আরোপিত হলে সেগুলি ব্যক্তির মনোগত রূপে গণ্য হয়। কারণ এই সমস্ত গুণ জ্ঞাতা কর্তৃক বস্তুতে আরোপিত হয়।
২) মুখ্য গুণগুলি বস্তুর অপরিহার্য গুণ রূপে গণ্য। সেই কারণেই মুখ্য গুণগুলি নিত্য, শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয় রূপে স্বীকার্য। বস্তুর আকার, আয়তন এবং গতিপ্রকৃতি হলো বস্তুর মুখ্য গুন। আর এই গুণগুলি কখনোই পরিবর্তিত হতে পারে না। কিন্তু -
•গৌণ গুণগুলি বস্তুতে ব্যক্তি মনের আরোপ বলে সেগুলি স্থান-কাল এবং পাত্র ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন বস্তুর রূপ,রস, গন্ধ প্রভৃতি গৌণ গুণগুলি পরিবর্তিত হয়।
৩) লকের মতে বস্তুর মুখ্য গুনগুলি সার্বিক। কারণ এই গুণগুলি সকলের কাছে সমভাবে বিদ্যমান। বস্তুর আকার হল মুখ্য গুণ, কারণ গোলাকার বস্তুকে সকল ব্যক্তি গোল দেখে। এখানে এই বস্তুকে কেউ অন্য আকারে দেখে না। কিন্তু -
•বস্তুর রূপ, রস, গন্ধ প্রভৃতি গৌণ গুণগুলি ব্যক্তি ভেবে ভিন্ন হয়। যেমন কোন একটি বস্তুর রূপ সকলের কাছে সমান নয়। তাই গৌণ গুণগুলি সার্বিক নয়।
৪) লক বলেন মুখ্য গুণগুলি কখনই ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে বস্তুতে আরোপ করা যায় না। আসলে এই গুণগুলি হল বস্তুর নিজস্ব গুণ। কিন্তু -
•বস্তুর গৌণ গুণগুলিকে আমরা ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে বস্তুতে আরোপ করি। অর্থাৎ গৌণ গুণ সম্পর্কে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি তা মূলত ইন্দ্রিয়লব্ধ।
৫) লকের মতে, মুখ্য গুন গুলির সঙ্গে বস্তুধর্মে সাদৃশ্য লাভ করা যায়। অর্থাৎ বস্তুধর্ম এবং মুখ্য গুণের মধ্যে মিল থাকে। কিন্তু -
•গৌণ গুণগুলির সঙ্গে বস্তুধর্মের কোন মিল নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ গৌণ গুণগুলির সঙ্গে বস্তুধর্মে বৈসাদৃশ্য দেখা যায়।
• অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক জন লক্ বস্তুর মুখ্যগুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে যে পার্থক্য করেছেন, পরবর্তীকালে ভাববাদী দার্শনিক বার্কলে মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের পার্থক্যকে অস্বীকার বা খন্ডন করেছেন। আর এক্ষেত্রে বার্কলের যুক্তি হলো-
১) বার্কলে দাবি করেন যে, আমরা গৌণ গুণগুলিকে যেমন আমাদের ইন্দ্রিয় সংবেদনের সাহায্যে লাভ করতে পারি ঠিক তেমনিই মুখ্য গুণগুলিকেও ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে লাভ করা যায়। কাজেই এই দুই গুণের উৎস ইন্দ্রিয় সংবেদন। সুতরাং মুখ্য গুন ও গৌণ গুণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
২) লকের মতে মুখ্য গুণগুলি বস্তুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কিন্তু গৌণ গুণগুলি বস্তুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয়। তবে বার্কলে মনে করেন যে, বস্তুর মুখ্য গুনগুলি অবস্থাভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। কারণ বরফ গলে জলে পরিণত হলে তার আকারের পরিবর্তন ঘটে। আবার সেই সাথে বিস্তৃতিরও পরিবর্তন ঘটে। কাজেই গৌণ গুণের মতো মুখ্য গুনগুলিও পরিবর্তনশীল ও মনোগত।
৩) লকের মতে বস্তুর মুখ্য গুনগুলি বস্তু থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। কিন্তু গৌণ গুণগুলিকে বস্তু থেকে সহজেই বিচ্ছিন্ন করা যায়। তবে এক্ষেত্রে বার্কলে দাবি করেন যে, মুখ্য গুনগুলির মত গৌণ গুণগুলিও বস্তু থেকে পৃথক করা যায় না। কারণ রংহীন, আকারহীন বস্তুর চিন্তা করা একেবারেই সম্ভব নয়। কাজেই কাজেই মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
৪) লক দাবি করেন যে, মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ উভয় মিলে বস্তুর ধারণা গঠিত হয়। কিন্তু লকের এই মতকে বার্কলে অস্বীকার করে বলেন যে, তাহলে তাদের পার্থক্য করা অবাস্তব।
•• ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL 🙏 ••
হয়।
Comments
Post a Comment