ঐতিহাসিক নাটক কাকে বলে? ঐতিহাসিক নাটকের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।
ঐতিহাসিক নাটকঃ ঐতিহাসিক নাটক বলতে এমন এক ধরনের নাটককে বোঝায়, যা অতীতের ঐতিহাসিক ঘটনা, চরিত্র এবং পরিবেশকে অবলম্বন করে রচিত হয়। এতে ইতিহাসের তথ্য ও সত্যকে কিছুটা কল্পনার মিশেল দিয়ে নাট্যরূপ দেওয়া হয়, যাতে দর্শক বা পাঠকের কাছে সেই সময়ের অনুভূতি ও প্রেক্ষাপট জীবন্ত হয়ে ওঠে। আর এই প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক নাটকের যে সকল বৈশিষ্ট্য গুলি আমরা দেখতে পাই সেগুলি হল-
ঐতিহাসিক উপাদানঃ ঐতিহাসিক নাটকের মূল ভিত্তি হলো ইতিহাস। যেখানে নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনা, ব্যক্তি, স্থান এবং সময়কালকে তুলে ধরা হয়। যেমন - কোনো রাজা, রানী, যুদ্ধের ঘটনা, বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তন। এছাড়াও-
কল্পনার মিশ্রণঃ আমরা জানি ঐতিহাসিক নাটক ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়, তবুও নাট্যকার সম্পূর্ণভাবে ইতিহাসের অন্ধ দাসত্ব করেন না। নাটকের প্রয়োজনে তিনি কিছু কাল্পনিক সংলাপ, চরিত্র বা ঘটনা যোগ করতে পারেন, তবে তা যেন মূল ঐতিহাসিক সত্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। অর্থাৎ, ইতিহাসের বস্তুসত্যকে গ্রহণ ও বর্জন করে কিছুটা রঞ্জিত করে একটি ভাবসত্য নির্মাণ করা হয়।
উদ্দেশ্যঃ ঐতিহাসিক নাটকের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো অতীতের ঘটনাকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা, যাতে তারা ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে এবং সেই সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বুঝতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলাও এর একটি উদ্দেশ্য হয়।
চরিত্রীয়নঃঐতিহাসিক নাটকে ঐতিহাসিক চরিত্রদের মানবিক দিকগুলো তুলে ধরা হয়। তাদের সুখ-দুঃখ, স্বপ্ন-ভয়, দ্বন্দ্ব ও মানসিক অবস্থাকে নাট্যকার নিজের সৃজনশীলতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন, যাতে চরিত্রগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও জীবন্ত হয়ে ওঠে।
ভাষা সংলাপঃ ভাষা ও সংলাপ: ঐতিহাসিক নাটকের ভাষা সাধারণত বলিষ্ঠ ও গম্ভীর হয়। সেই সময়ের পরিবেশ ও চরিত্রদের উপযোগী করে সংলাপ রচনা করা হয়, যাতে দর্শক বা পাঠক সেই অতীতের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতে পারেন। অনেক সময় তৎসম ও সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহারও দেখা যায়।
নাটকীয়তাঃ ইতিহাসকে কেবল বিবরণ আকারে উপস্থাপন না করে, এতে নাটকীয় দ্বন্দ্ব, সংঘাত, উত্থান-পতন এবং অপ্রত্যাশিত মোড় যোগ করা হয়। এটি নাটককে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখে।
মঞ্চায়ন উপযোগিতাঃ যেহেতু এটি একটি নাটক, তাই এটি মঞ্চে অভিনয়ের উপযোগী হতে হয়। সংলাপ, চরিত্র এবং ঘটনা এমনভাবে সাজানো হয় যাতে তা মঞ্চে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।
ঐতিহাসিক রসঃঐতিহাসিক নাটকের মাধ্যমে পাঠক ও দর্শকের মনে ইতিহাসের রস সঞ্চারিত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রের উন্মাদনা, ঐশ্বর্যের দীপ্তি, ক্ষমতার লোভ, বা পারস্পরিক সংঘাতের মতো বিষয়গুলো নাটকের চালচিত্র প্রস্তুত করে।যেমন-মাইকেল মধুসূদন দত্তের কৃষ্ণকুমারী বা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নুরজাহান বা শাজাহান অন্যতম ঐতিহাসিক নাটকের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
Comments
Post a Comment