Skip to main content

ঐতিহাসিক নাটক (4th Sem. Major )কাকে? বলে ঐতিহাসিক নাটকের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।

ঐতিহাসিক নাটক কাকে বলে? ঐতিহাসিক নাটকের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।

ঐতিহাসিক নাটকঃ ঐতিহাসিক নাটক বলতে এমন এক ধরনের নাটককে বোঝায়, যা অতীতের ঐতিহাসিক ঘটনা, চরিত্র এবং পরিবেশকে অবলম্বন করে রচিত হয়। এতে ইতিহাসের তথ্য ও সত্যকে কিছুটা কল্পনার মিশেল দিয়ে নাট্যরূপ দেওয়া হয়, যাতে দর্শক বা পাঠকের কাছে সেই সময়ের অনুভূতি ও প্রেক্ষাপট জীবন্ত হয়ে ওঠে। আর এই প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক নাটকের যে সকল বৈশিষ্ট্য গুলি আমরা দেখতে পাই সেগুলি হল-

ঐতিহাসিক উপাদানঃ ঐতিহাসিক নাটকের মূল ভিত্তি হলো ইতিহাস। যেখানে নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনা, ব্যক্তি, স্থান এবং সময়কালকে তুলে ধরা হয়। যেমন - কোনো রাজা, রানী, যুদ্ধের ঘটনা, বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তন। এছাড়াও-

কল্পনার মিশ্রণঃ আমরা জানি ঐতিহাসিক নাটক ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়, তবুও নাট্যকার সম্পূর্ণভাবে ইতিহাসের অন্ধ দাসত্ব করেন না। নাটকের প্রয়োজনে তিনি কিছু কাল্পনিক সংলাপ, চরিত্র বা ঘটনা যোগ করতে পারেন, তবে তা যেন মূল ঐতিহাসিক সত্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। অর্থাৎ, ইতিহাসের বস্তুসত্যকে গ্রহণ ও বর্জন করে কিছুটা রঞ্জিত করে একটি ভাবসত্য নির্মাণ করা হয়।

উদ্দেশ্যঃ ঐতিহাসিক নাটকের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো অতীতের ঘটনাকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা, যাতে তারা ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে এবং সেই সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বুঝতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলাও এর একটি উদ্দেশ্য হয়।

চরিত্রীয়নঃঐতিহাসিক নাটকে ঐতিহাসিক চরিত্রদের মানবিক দিকগুলো তুলে ধরা হয়। তাদের সুখ-দুঃখ, স্বপ্ন-ভয়, দ্বন্দ্ব ও মানসিক অবস্থাকে নাট্যকার নিজের সৃজনশীলতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন, যাতে চরিত্রগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও জীবন্ত হয়ে ওঠে।

ভাষা সংলাপঃ ভাষা ও সংলাপ: ঐতিহাসিক নাটকের ভাষা সাধারণত বলিষ্ঠ ও গম্ভীর হয়। সেই সময়ের পরিবেশ ও চরিত্রদের উপযোগী করে সংলাপ রচনা করা হয়, যাতে দর্শক বা পাঠক সেই অতীতের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতে পারেন। অনেক সময় তৎসম ও সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহারও দেখা যায়।

নাটকীয়তাঃ ইতিহাসকে কেবল বিবরণ আকারে উপস্থাপন না করে, এতে নাটকীয় দ্বন্দ্ব, সংঘাত, উত্থান-পতন এবং অপ্রত্যাশিত মোড় যোগ করা হয়। এটি নাটককে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখে।

মঞ্চায়ন উপযোগিতাঃ যেহেতু এটি একটি নাটক, তাই এটি মঞ্চে অভিনয়ের উপযোগী হতে হয়। সংলাপ, চরিত্র এবং ঘটনা এমনভাবে সাজানো হয় যাতে তা মঞ্চে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।

ঐতিহাসিক রসঃঐতিহাসিক নাটকের মাধ্যমে পাঠক ও দর্শকের মনে ইতিহাসের রস সঞ্চারিত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রের উন্মাদনা, ঐশ্বর্যের দীপ্তি, ক্ষমতার লোভ, বা পারস্পরিক সংঘাতের মতো বিষয়গুলো নাটকের চালচিত্র প্রস্তুত করে।যেমন-মাইকেল মধুসূদন দত্তের কৃষ্ণকুমারী বা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নুরজাহান বা শাজাহান অন্যতম ঐতিহাসিক নাটকের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...