সর্বাত্মক পরিচয়পত্র বা কিউম্যুলেটিভ রেকর্ড কার্ড (Cumulative Record Card - CRC) এর উদ্দেশ্য গুলি আলোচনা করো।
• শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ তথ্য সংরক্ষণ: CRC এর মূল উদ্দেশ্য হলো একজন শিক্ষার্থীর জন্ম থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুসংগঠিতভাবে সংরক্ষণ করা। এর মধ্যে থাকে শিক্ষাগত পারদর্শিতা, পারিবারিক পরিচয়, আচার-আচরণ, অন্যের সাথে সম্পর্ক, স্বাস্থ্যগত তথ্য, সহ-পাঠক্রমিক কার্যকলাপের বিবরণ ইত্যাদি।
•শিক্ষার্থীর নির্দেশনা প্রদান: এই কার্ডে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষক, অভিভাবক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শিক্ষার্থীর চাহিদা চিহ্নিত করতে পারেন। এর ফলে শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয়, যা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
•শিক্ষার্থীর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ: CRC একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিক অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে তার পারফরম্যান্সের ধারা, পরিবর্তন এবং বিশেষ প্রয়োজনগুলো সহজেই চিহ্নিত করা যায়।
•আচরণগত উন্নতিতে সহায়তা: সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা তাদের আচরণকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে। শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা ও শক্তি সম্পর্কে অবগত হয়ে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দিতে পারেন।
• শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পের জন্য সহায়ক: বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বা শিল্প-কারখানার কর্মকর্তারা এই তথ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন, যা তাদের নিয়োগ বা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কাজে লাগে।
•তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও নৈর্ব্যক্তিকতা: CRC তে লিপিবদ্ধ তথ্য সর্বদা নৈর্ব্যক্তিক ও নির্ভরযোগ্য হবে বলে আশা করা হয়, যা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।
•শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে বোঝা: এই কার্ডের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে গভীরভাবে বোঝা সম্ভব হয়, তার ব্যক্তিগত, সামাজিক, আবেগিক এবং শিক্ষাগত দিকগুলি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা যায়।
সর্বাত্মক পরিচয়পত্র" এবং "CRC" দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয় এবং এদের অর্থও ভিন্ন।
১. সর্বাত্মক পরিচয়পত্র (Cumulative Record Card - CRC)
শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বাত্মক পরিচয়পত্র বলতে সাধারণত Cumulative Record Card (CRC) বোঝায়। এটি একটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত এবং ধারাবাহিক তথ্য সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। এটি শুধুমাত্র পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং শিক্ষার্থীর সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের বিকাশকে তুলে ধরে।
উদ্দেশ্য:
* শিক্ষার্থীর সামগ্রিক মূল্যায়ন: শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক এবং শিক্ষাগত দিকগুলোর একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা।
* নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান: শিক্ষার্থীর আগ্রহ, প্রবণতা, পারদর্শিতা, পড়াশোনার অভ্যাস, সংগতিবিধানজনিত সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষক, অভিভাবক এবং নির্দেশকদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা।
* ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত বা বৃত্তিমূলক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করা।
* ধারাবাহিক মূল্যায়ন: সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি বা পরিবর্তনের তথ্য সংরক্ষণ করা।
* শিক্ষকের জন্য সহায়ক: শিক্ষককে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন করতে এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষাদান পদ্ধতি পরিবর্তন করতে সাহায্য করা।
সাধারণত এতে যে ধরনের তথ্য থাকে:
* শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, পারিবারিক পটভূমি)।
* শারীরিক বিকাশ ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য।
* শিক্ষাগত পারদর্শিতা (বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল, ক্লাসে অংশগ্রহণ, বিশেষ দক্ষতা)।
* আগ্রহ ও প্রবণতা (খেলাধুলা, শিল্পকলা, অন্যান্য সহ-পাঠক্রমিক কার্যকলাপ)।
* সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশ (আচরণ, ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা)।
* অভিভাবকদের মন্তব্য ও পরামর্শ।
২
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,CRC এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর একটি সার্বিক ও ধারাবাহিক চিত্র তুলে ধরা,যে চিত্রের মাধ্যমে তার শিক্ষা, বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।
Comments
Post a Comment