Skip to main content

প্রেমেন্দ্র মিত্রের মঙ্গল (4th. Sem.Minor) গ্ৰহে ঘনাদা গল্পটির পটভূমির আলোকে পর্যালোচনা করো।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা গল্পটির পটভূমির ও বিষয়েবস্তুর আলোকে পর্যালোচনা কর(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা মাইনর)।

     •আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের অমর সৃষ্টি মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা। আসলে'মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা' গল্পটি ঘনাদা সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় একটি গল্প। আর সেখানে এই গল্পের মূল পটভূমি বা ভাবনায় আমরা দেখি-

          •বিজ্ঞান ও কল্পনার অসাধারণ মিশ্রণঃ ঘনাদার গল্পগুলো আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য, কাল্পনিক হলেও, তার পেছনের বিজ্ঞানভিত্তিক আছে তথ্যের ভিত্তি। আর সেখানে মঙ্গল গ্রহের ঘনাদা গল্পটিও এর ব্যতিক্রম নয়।তবে এখানে তিনি মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব, সেখানকার পরিবেশ, প্রতিকূলতা এবং সেখানে টিকে থাকার জন্য সম্ভাব্য প্রযুক্তির কথা এমনভাবে তুলে ধরেন, যা কল্পনাকে বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে আসে। গল্পের মাধ্যমে তিনি বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকের কৌতূহল বাড়িয়ে তোলেন। যেখানে আছে-

         •এক অসাধারণ চরিত্র হিসেবে ঘনাদাঃ আলোচ্য গল্পে এক অসাধারণ চরিত্রের পরিচয় পাই,যার নাম ঘনাদা।আসলে তার আসল নাম ঘনশ্যাম দাস। যিনি বাংলা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। প্রেমেন্দ্র মিত্র ১৯৪৫ সালে এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন। তিনি কলকাতার ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেনের একটি মেসবাড়ির বাসিন্দা। তাঁর প্রধান কাজ হলো মেসের চার যুবক - শিবু, শিশির, গৌর এবং গল্পের কথক সুধীরকে নিজের জীবনের অবিশ্বাস্য সব অ্যাডভেঞ্চারের গল্প শোনানো। এই গল্পগুলো আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও এর মধ্যে অনেক বাস্তব বৈজ্ঞানিক তথ্য ও বিশ্ব ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ থাকে। ঘনাদা নিজেকে একজন বিশ্বপর্যটক, বিজ্ঞানী এবং দুঃসাহসী অভিযাত্রী হিসেবে দাবি করেন, যিনি পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং মহাকাশেও তাঁর অবাধ বিচরণ।আর সেখানে-

         •গল্পের মূল পটভূমিঃ ঘনাদার মঙ্গল গ্রহের গল্পগুলোর মূল পটভূমি হলো বিজ্ঞান ও কল্পনাকে মিশ্রিত করে এক নতুন জগৎ সৃষ্টি করা। এই গল্পগুলোতে মঙ্গল গ্রহকে একটি মৃত বা প্রাণহীন গ্রহ হিসেবে দেখানো হয় না। বরং ঘনাদা এমন এক মঙ্গল গ্রহের কথা শোনান, যেখানে পৃষ্ঠদেশ প্রাণহীন হলেও তার মাটির গভীরে এক উন্নত সভ্যতা লুকিয়ে আছে। আসলে এই লুকিয়ে থাকার মধ্যে আছে-

      •পাতালপুরীতে ঘনাদাঃ ঘনাদার মতে, লক্ষ লক্ষ বছর আগে মঙ্গলে একটি উন্নত সভ্যতা ছিল, যা পৃথিবীর চেয়েও অনেক উন্নত ছিল। কিন্তু তাদের নিজেদের মধ্যেকার পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে গ্রহের পৃষ্ঠদেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়। এর ফলে মঙ্গলের বাসিন্দারা মাটির নিচে সুড়ঙ্গ কেটে বিশাল পাতাল শহর তৈরি করে সেখানে আশ্রয় নেয়।আর সেখানে-

        •বিবর্তন ও সংকটঃ মঙ্গল গ্ৰহের ঘনাদা গল্পের বিষয়বস্তু অনুযায়ী, এই মাঙ্গলিক সভ্যতা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে। ঘনাদা যখন মঙ্গলে যান, তখন তাদের সংখ্যা কমে মাত্র কয়েকজনে এসে দাঁড়িয়েছে। এই বিলুপ্তির পেছনে রয়েছে তাদের নিজেদের তৈরি করা সমস্যা এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা। তবুও-

          •বৈজ্ঞানিক ভিত্তিঃ যদিও গল্পগুলো কল্পনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, প্রেমেন্দ্র মিত্র এর মধ্যে কিছু বৈজ্ঞানিক ধারণা যুক্ত করেছেন। যেমন - পারমাণবিক যুদ্ধ, অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব, মহাজাগতিক রশ্মি এবং গ্রহের ভূ-পৃষ্ঠের নিচে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা। আর সেখানে -

             •মানব সভ্যতার সতর্কবার্তাঃ গল্পের একটি গভীর থিম হলো মানবজাতির ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়া। মাঙ্গলিকদের সভ্যতা তাদের নিজেদের হিংসা-বিদ্বেষের কারণে ধ্বংস হয়েছে। এর মাধ্যমে লেখক পৃথিবীর মানুষকে পারমাণবিক যুদ্ধ এবং নিজেদের মধ্যেকার হানাহানির ভয়াবহ পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন। এটি একটি রূপক হিসেবে কাজ করে, যা মানুষকে পরিবেশ রক্ষা এবং শান্তি বজায় রাখার গুরুত্ব বোঝায়। তবে গল্পটিতে আছে এক অসাধারণ-

        •অ্যাডভেঞ্চার ও রহস্যঃ গল্পের মূল আকর্ষণ হলো ঘনাদার দুঃসাহসিক অভিযান। তিনি একাকী মঙ্গলে যান, সেখানকার মাঙ্গলিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের প্রযুক্তি ও জীবনযাপন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এই অ্যাডভেঞ্চারগুলো রহস্যময় এবং রোমাঞ্চকর, যা পাঠকদের আকর্ষণ করে রাখে। এ ছাড়াও-

        •জ্ঞান ও সৃজনশীলঃ ঘনাদা একজন বাকসর্বস্ব চরিত্র হলেও, তাঁর জ্ঞানের পরিধি বিশাল। তিনি পৃথিবীর সব ভাষা জানেন এবং জটিল বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারেন। মঙ্গল গ্রহের গল্পগুলোতেও তাঁর এই অসাধারণ বুদ্ধি ও জ্ঞান প্রকাশ পায়, যা তিনি বিভিন্ন বিপদের মোকাবিলা করার জন্য ব্যবহার করেন।

          •বাস্তবতার সাথে সংঘাতঃ মঙ্গল গ্রহ ও ঘনাদা গল্পের একটি মজার দিক হলো মেসের বাকি সদস্যরা, যারা ঘনাদার গল্পগুলোকে প্রথমে বিশ্বাস করতে চায় না। তাদের সন্দেহ ও অবিশ্বাস গল্পের হাস্যরস বাড়ায় এবং ঘনাদার চরিত্রকে আরও জীবন্ত করে তোলে।

           •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,মঙ্গল গ্রহের গল্পগুলো শুধুমাত্র একটি কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক অভিযান নয়, বরং বলা যায় যে,এটি বিজ্ঞান, অ্যাডভেঞ্চার, রহস্য এবং মানব সভ্যতার প্রতি এক গভীর সতর্কবার্তার এক অসাধারণ মিশ্রণ। আর তার ফলে মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা গল্পটি পাঠক সমাজে ও বাংলা সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে।


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...