Skip to main content

কবি শঙ্খ ঘোষ (4th.Sem) বাবরের প্রার্থনা কবিতায় ব্যক্তিগত শোককে কিভাবে এক গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক নৈরাশ্যের তুলে ধরেছেন-তা আলোচনা করো।

কবি শঙ্খ ঘোষ 'বাবরের প্রার্থনা' কবিতায় ব্যক্তিগত শোককে কিভাবে এক গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক নৈরাশ্যের চিত্র তুলে ধরেছেন- আলোচনা করো।

        আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,কবি শঙ্খ ঘোষ 'বাবরের প্রার্থনা' কবিতাটিতে ব্যক্তিগত শোককে ছাপিয়ে এক গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক নৈরাশ্যের চিত্র তুলে ধরেছেন।আর সেই বিষয়টি অবশ্যই বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।যেখানে কবির অসুস্থ কন্যার আরোগ্যের জন্য আকুতি এই কবিতায় কেবল একটি ব্যক্তিগত প্রার্থনা হয়ে থাকেনি, বরং বলা যায়-সমকালীন অস্থির ও অবক্ষয়িত সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।আর সেখানে-

পিতৃহৃদয়ের তীব্র আর্তি ও নৈরাশ্যঃ বাবরের প্রার্থনা কবিতার মূল সুর হলো এক পিতৃহৃদয়ের আর্তি, আর সেই আর্তিকে সামনে রেখে কবি তাঁর অসুস্থ কন্যার জীবন ভিক্ষা চাইছেন। তবে  এখানে এই  আর্তি ব্যক্তিগত বেদনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে গেছে তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। দেশজুড়ে তখন নৈরাশ্য, অন্যায়, এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়। এই পরিস্থিতি কবির মনকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছে।

 অন্ধকার ও শূন্যতাঃ কবিতায় বারবার 'অন্ধকার', 'শূন্য হাত', 'বিষাদ' এবং 'শঙ্কা'-র মতো শব্দগুলি ব্যবহৃত হয়েছে।যে শব্দগুলি কেবল কবির ব্যক্তিগত হতাশার প্রকাশ নয়, বরং তা সমকালীন সমাজের বিরাজমান নৈরাশ্য, নিরাপত্তাহীনতা এবং ভবিষ্যতের প্রতি সংশয়ের ইঙ্গিতবাহী।আর সেখানে কবি যেন ব্যক্তিগত শোকের মধ্য দিয়ে সমাজের বৃহত্তর ব্যাধিকে অনুভব করছেন।

আস্থা ও মূল্যবোধের সংকটঃ কবি অসুস্থ কন্যার জন্য প্রার্থনার পাশাপাশি সমাজে আস্থা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখে ভীত হয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত প্রার্থনা যেন এমন এক সময়ে উচ্চারিত হচ্ছে, যখন সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই অবনত যে, কোনো সুদিনের আশা প্রায় নেই। কবির প্রার্থনা তাই কেবল কন্যার সুস্থতার জন্য নয়, বরং এক সুস্থ সমাজ এবং মানবিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যও।

ঐতিহাসিক উপমায়ঃ কবি এখানে ঐতিহাসিক চরিত্র বাবরের সঙ্গে নিজের বেদনাকে একাত্ম করেছেন। বাবর যেমন পুত্র হুমায়ুনের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করার প্রার্থনা করেছিলেন, তেমনি কবিও যেন নিজের কন্যার জন্য একইরকম আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাবরের এই আত্মত্যাগ একদিকে যেমন গভীর ব্যক্তিগত শোকের প্রকাশ, অন্যদিকে তা যেন তৎকালীন সময়ের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বের মাঝে এক অসহায় শাসকের আর্তিও বটে।বাবর যেমন অস্থির সাম্রাজ্যের মাঝে দাঁড়িয়ে পুত্রকে বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছেন। অর্থাৎ-

       কবি ব্যক্তিগত বেদনা সর্বজনীন বেদনার রূপ নিয়েছে তা কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর ব্যক্তিগত দুঃখকে সামনে রেখে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, তা সহজেই সর্বজনীন আবেদন লাভ করেছে। যেখানে পিতৃসুলভ প্রার্থনা ব্যক্তিগত গন্ডির সীমানা ছাড়িয়ে এক সর্বজনীন রূপ পরিগ্ৰহণ করে।

 * পিতা হিসেবে আকাঙ্ক্ষা: সন্তানের সুস্থতার জন্য একজন পিতার আকুতি একটি চিরন্তন মানবিক অনুভূতি। যখন কবি তাঁর কন্যার জন্য ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন, তখন তা কেবল তাঁর নিজস্ব বেদনা থাকে না, বরং পৃথিবীর প্রতিটি পিতার আবেগ ও উৎকণ্ঠাকে প্রতিফলিত করে। এই 'পিতৃসুলভ প্রার্থনা' ব্যক্তিগত গণ্ডি ছাড়িয়ে সর্বজনীন রূপ নেয়। ঠিক এইভাবে-

             কবি শঙ্খ ঘোষ 'বাবরের প্রার্থনা' কবিতায় তাঁর ব্যক্তিগত শোককে এক অসাধারণ শিল্পরূপ দান করেছেন, যেখানে একজন পিতার আর্তি সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী উচ্চারণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক গভীর উদ্বেগের প্রকাশ হয়ে উঠেছে।

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...