Skip to main content

নবনীতা দেব সেন(6th. Sem) হে পূর্ণ তব চরণের কাছে গ্রন্থটিতে কেদার বদ্রী ভ্রমণের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

 নবনীতা দেব সেনহে পূর্ণ তব চরণের কাছে গ্রন্থটিতে কেদার-বদ্রী ভ্রমণের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন তা আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ষষ্ঠ সেমিস্টার বাংলা অনার্স CC-14)।

       আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, লেখিকা নবনীতা দেবসেনের একটি অন্যতম ভ্রমণ কাহিনি 'হে পূর্ণ তব চরণের কাছে'। যেটিতে আশির দশকে (১৮৮৫) তাঁর উত্তরাখণ্ডের চার ধাম - কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ সহ  যমুনোত্রী ও গঙ্গোত্রী ভ্রমণের এক মনোমুগ্ধকর বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।আর সেখানে লেখিকা তার মেয়ে এবং ভাইকে নিয়ে এই তীর্থযাত্রা করেছিলেন। সেই  প্রেক্ষিতে এটি কেবলমাত্র একটি তীর্থযাত্রার বর্ণনা নয়, বরং নবনীতা দেবসেনের স্বভাবসুলভ রসবোধ, গভীর পর্যবেক্ষণ এবং অন্তরঙ্গ অনুভূতির এক অনন্য মিশ্রণ বলা যেতে পারে।আর সেখানে আমরা দেখি- 

                   •কেদারনাথ ও বদ্রীভ্রমণ•

হে পূর্ণ তব চরণের কাছে গ্রন্থটি মূলত তীর্থযাত্রাকে কেন্দ্র করে লেখা হলেও, লেখিকা তীর্থস্থানগুলোর সামগ্রিক অবস্থা, সেখানের ব্যবস্থাপনা ও অব্যবস্থাপনা সবকিছুই তার কলমে তুলে ধরেছেন। সময়কাল হলো ১৯৮৫ সাল। আসলে এই গ্ৰন্থটিতে সেই সময়ের উত্তরাখণ্ডের এক সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে লেখিকার অভিজ্ঞতায় ধরা পড়ে-

       সহজ সরল, আন্তরিক,বর্ণময় বর্ণনাঃনবনীতা দেবসেনের রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তার সহজ, সাবলীল এবং আন্তরিক ভাষা। তিনি ব্যক্তিগত অনুভূতি, ছোটখাটো ঘটনা এবং যাত্রাপথের মজার মুহূর্তগুলো এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যা পাঠককে সহজেই ভ্রমণের সঙ্গে একাত্ম করে তোলে।

         রসবোধের লেখিকাঃ আমরা জানি যে,লেখিকা নবনীতা দেব সেনের তীক্ষ্ণ রসবোধ এই ভ্রমণ কাহিনিকে আরও উপভোগ্য করে তুলেছে। শুধু তাই নয়,কঠিন পরিস্থিতি বা দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো অসুবিধার মধ্যেও তিনি হাসির খোরাক খুঁজে পেয়েছেন, যা পাঠকের মুখে হাসি ফোটায়।

        সৌন্দর্যময় প্রকৃতির রূপঃ আমরা জানি উত্তরাখণ্ডের প্রকৃতি পরিবেশ ভয়াল ভয়ংকর। কিন্তু সেই ভয়ংকর পরিবেশ, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনাও লেখিকার লেখনীতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।আর এমন পরিবেশের মধ্যে পাহাড়, নদী, উপত্যকা এবং পথের ধারের দৃশ্যগুলো তিনি নিপুণভাবে চিত্রিত করে ভ্রমণ পিপাসু পাঠকের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে না।আর সেখানে-

         মানুষের পরিচয়ঃকেদার বদ্রী ভ্রমণে লেখিকা বিভিন্ন ধরনের মানুষের সংস্পর্শে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।যারফলে তীর্থযাত্রী, স্থানীয় মানুষ, পথপ্রদর্শক এবং অন্যান্য চরিত্রগুলোর সঙ্গে তার কথোপকথন এবং তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তিনি দক্ষতার সঙ্গে তুলে এই গ্ৰন্থে তুলে ধরেছেন। আর সেই প্রেক্ষিতে চন্দন সিংহ এবং মাধোদাসজীর মতো চরিত্রগুলি এই ভ্রমণ গ্ৰন্থে বিশেষ পরিচিতি পেয়ে গেছে।তবে বলা যায় যে গ্ৰন্থটিতে-

       ভ্রমণের বাস্তবচিত্রাঙ্কনঃ নবনীতা দেবসেন কেবল তীর্থের আধ্যাত্মিক দিকটিই তুলে ধরেননি, বরং ভ্রমণের বাস্তব দিকগুলো অতি সুস্পষ্টভাবে মননশীলতা নিয়ে যেমন— থাকার ব্যবস্থা, খাদ্যের প্রাপ্তি, পথের কষ্ট এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিরও বিবরণ দিয়েছেন। বিশেষত, ১৯৮৫ সালের প্রেক্ষাপটে তীর্থযাত্রার যে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল তা তার বর্ণনায় অতি জীবন্ত হয়ে ওঠে।

           পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, 'হে পূর্ণ তব চরণের কাছে' গ্রন্থটি তীর্থযাত্রার পাশাপাশি একটি সম্পূর্ণ জীবন অভিজ্ঞতার বর্ণনা, লেখিকা তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং মননশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। যার ফলে গ্ৰন্থটি কেবলমাত্র একটি ভ্রমণ কাহিনি নয়, এটি এক  অনন্য সাহিত্যকর্ম, যা পাঠকের মনে গভীর ছাপ ফেলে। শুধু তাই নয়,গ্ৰন্থটি ভ্রমণ পিপাসু পাঠকের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে এবং রসবোধময় পাঠকের হৃদয়কে রসময়ে পরিপূর্ণ করে তুলতে সক্ষম হয়।

 ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 




Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...