Skip to main content

রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীর ফুল্লকেতুর(6th Semester )পালার 'হাস্যরস' আলোচনা করো।

রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীর ফুল্লকেতুর পালার 'হাস্যরস' আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা অনার্স ষষ্ঠ সেমিস্টার)।          

             আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীর 'ফুল্লকেতুর পালা' মঙ্গলকাব্যের চণ্ডীমঙ্গল অংশের কালকেতু-ফুল্লরার আখ্যানকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন। আর সেখানেএই নাটকে যে হাস্যরস পরিবেশন করেছেন তা কেবল মনোরঞ্জনের জন্য নয়, বরং গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যঙ্গ তুলে ধরার একটি শক্তিশালী প্রয়াস বলতে হবে।আর সেখানে আমরা হাস্যরসের বেশ কিছু অংশ দেখতে পাই।ফুল্লকেতুর পালার সেই হাস্যরসের কিছু অংশ আমরা নিচে আলোচনা করলাম-

 চরিত্র চিত্রনে ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপঃ আলোচ্য নাটকে রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী চরিত্রগুলির মাধ্যমে হাস্যরস ফুটিয়ে তুলেছেন। আর সেখানে আমরা দেখি- কালকেতু, ফুল্লরা এবং অন্যান্য চরিত্রগুলি তাদের সরলতা, লোভ, এবং কিছু ক্ষেত্রে মূর্খামির মাধ্যমে হাসির উদ্রেক করে। বিশেষত-

         দেব-দেবীর মানবিকীকরণ এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিবাদ বা চিন্তাভাবনাগুলি ব্যঙ্গাত্মক হাস্যরস তৈরি করে। প্রচলিত মঙ্গলকাব্যের চরিত্রগুলিকে এখানে এক ভিন্ন দৃষ্টি দিয়ে দেখা হয়েছে, যেখানে তাদের দিব্যতা কমিয়ে মানবিক দুর্বলতাগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে।

 সংলাপ ও কৌতুকের হাস্যরসঃ রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীর সংলাপ রচনা খুবই শক্তিশালী। তাঁর নাটকে ব্যবহৃত সংলাপগুলি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত এবং কৌতুকপূর্ণ। চরিত্রের মুখের ভাষা, তাদের বাচনভঙ্গি এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের অপ্রত্যাশিত মন্তব্যগুলি দর্শক বা পাঠকের মুখে হাসি ফোটায়। অনেক সময়, চরিত্রের সরল স্বীকারোক্তি বা তাদের নিজস্ব যুক্তির ধারা অপ্রত্যাশিত হাস্যরসের জন্ম দেয়।

 সাময়িক পরিস্থিতিগত হাস্যরসঃ  নাটকটিতে এমন অনেক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যা স্বাভাবিকভাবেই হাসির উদ্রেক করে। যেমন, যখন দেবতারা মর্ত্যে নেমে এসে মানুষের মতো আচরণ করেন বা তাদের দৈনন্দিন সমস্যার সম্মুখীন হন, তখন তা এক ধরণের বিদ্রূপাত্মক হাস্যরসের সৃষ্টি করে। কালকেতু-ফুল্লরার দারিদ্র্য এবং তার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাদের নানা হাস্যকর প্রচেষ্টা, বা ধনপতি সদাগরের মতো চরিত্রগুলির লোভ ও প্রতারণা সংক্রান্ত ঘটনাবলীও হাস্যরস যোগ করে।

কুরআন ও লোক কাহিনীতে হাস্যরসঃ আমরা জানি 'ফুল্লকেতুর পালা' মঙ্গলকাব্যের একটি সুপরিচিত আখ্যানকে নতুনভাবে উপস্থাপন করে। এই আধুনিক ব্যাখ্যায় অনেক ক্ষেত্রেই প্রচলিত ধারণা ও মূল্যবোধকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। দেব-দেবীর অলৌকিক ক্ষমতার প্রতি প্রশ্ন তোলা বা তাদের মানবিক সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা এই হাস্যরসের অন্যতম উৎস। এটি শুধু হাসির খোরাক যোগায় না, বরং প্রচলিত বিশ্বাস ও সমাজের অসংগতি নিয়েও প্রশ্ন তোলে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যঙ্গ বিদ্রুপঃ:ফুল্লকেতুর পালার নাটকের হাস্যরস কেবল নিছক কৌতুক নয়, এর গভীরে থাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যঙ্গ। তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, শোষণ, ক্ষমতাশালীদের দুর্নীতি, এবং সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বকে হাস্যরসের মোড়কে তুলে ধরা হয়েছে। এই হাস্যরস দর্শকদের কেবল হাসায় না, বরং তাদের চিন্তাভাবনাকেও উস্কে দেয়, সমাজের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীর 'ফুল্লকেতুর পালা' নাটকের হাস্যরস বহুমাত্রিক। এটি চরিত্রায়ণ, সংলাপ, পরিস্থিতি এবং পুরাণ-লোককাহিনীর আধুনিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সৃষ্ট এক বিদ্রূপাত্মক ও ব্যঙ্গাত্মক হাস্যরস, যা একই সাথে বিনোদন দেয় এবং গভীর সামাজিক বার্তা বহন করে।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...