সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশ বিদেশে গ্ৰন্থে পাঠানদের সমাজ ও সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায় তা আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ষষ্ঠ সেমিস্টার, বাংলা অনার্স CBCS)
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী 'দেশে বিদেশে' গ্রন্থে তিনি আফগানিস্তানে কাটানো তাঁর সময়ের এক সরস ও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণমূলক চিত্র তুলে ধরেছেন।আর সেই চিত্রে বিশেষভাবে চিত্রণ হয়েছে পাঠানদের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্ক। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর লেখায় পাঠানদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য মূর্ত হয়ে পাঠকের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।আর সেখানে আমরা দেখি-
•সমাজের ও জীবনযাত্রায়-
•আন্তরিকতা ও আতিথেয়তাঃ পাঠানদের বাহ্যিক দিক থেকে শুষ্ক ও রসকষহীন মনে হয়। তবে একবার আলাপ হলেই তারা যে কাউকে আপন করে নেয় বা নিতে পারে। বলা যায় তাদের আতিথেয়তা অতুলনীয়। মেহমানদারি করতে তাদের কোনো কার্পণ্য নেই, টাকাপয়সা না থাকলেও ইচ্ছার কোনো অভাব হয় না। এমনকি, পথেঘাটেও তারা অপরিচিতদের প্রতি উদার মনোভাব নিয়ে আপ্যায়ন করে। তবে-
•পাঠশালা আড্ডাবাজ ও অলসঃ আলোচ্য গ্রন্থে মুজতবা আলী পাঠানদের অলস এবং আড্ডাবাজ জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে তারা গালগল্প আর আড্ডায় মশগুল থাকতে ভীষণ ভালোবাসে। তাদের কাছে মুচির সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য জুতোয় লোহা ঠোকানোও একটা অজুহাত মাত্র। তাছাড়াও-
•আরামপ্রিয়তা কিন্তু বিলাসিতাহীনঃ অলস ও আড্ডাবাজ হলেও তারা আরামপ্রিয় নয়। তাদের বিলাসিতা সীমা ছাড়ায় না। তবে তারা অর্থনৈতিক দিক থেকে ভীষণ অপরিপক্কতা। যার ফলে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ অপরিপক্ব। ফলে তাদের রাজ্য কখনো অর্থনৈতিক সচ্ছলতা চোখে দেখেনি। অভাবের তাড়নায় তারা প্রায়শই লুটতরাজ করে বেড়ায়। তাসত্ত্বেও-
•পাঠশালা স্বাধীনচেতাঃপাঠানরা প্রবল স্বাধীনচেতা জাতি। রাস্তায় চলাচলের সময় তারা কারও জন্য রাস্তা ছেড়ে দেয় না, কারণ তাদের কাছে রাস্তা ছেড়ে দেওয়াটা স্বাধীনতার পরিপন্থী। তবে সেই সময়ের আফগানিস্তানের সমাজে মহিলাদের অবস্থান ছিল নগণ্য। মুজতবা আলী রসিকতার ছলে তুলে ধরেছেন যে, পাঠানদের কাছে রাইফেলের জন্য বড় লড়াই হয়, কারণ রাইফেল থাকলে সুন্দরীর স্বামীকে খুন করে তার বিধবাকে বিয়ে করা যায়, যা তাদের কাছে "উত্তম বন্দোবস্ত"!আর সেখানে -
•গোষ্ঠীগত সংঘাতঃ পাঠানদের বিভিন্ন গোষ্ঠী, যেমন - আফ্রিদী, শিনওয়ারী, খুগিয়ানী - এদের মধ্যে প্রায় সারা বছরই মারামারি লেগে থাকে। যার ফলে সেখানে সামাজিক বিভাজন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কাবুলের সামাজিক জীবনকে লেখক তিন ভাগে ভাগ করেছেন: খাঁটি কাবুলের লোক, ভারতীয়রা এবং ইউরোপিয়ানরা।
•সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ-
•অকৃত্রিম দেশপ্রেমঃপাঠানদের গালগল্প আর লম্বা আড্ডায় মশগুল থাকার স্বভাবের ভেতরেও মুজতবা আলী তাদের অকৃত্রিম দেশপ্রেম আবিষ্কার করে অবাক হয়েছেন। যেখানে তাদের সমাজে আইনের শাসনের চেয়েও বন্দুকের প্রতিপত্তি অনেক বেশি।
•ইসলামী মূল্যবোধঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা ও মোল্লাতন্ত্র-প্রকৃত ধর্মচর্চার প্রভেদ সম্পর্কেও তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশ বিদেশে গ্ৰন্থে।আর সেখানে তিনি কেবল পাঠানদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোই তুলে ধরেননি, বরং তাদের জীবনদর্শন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, ধ্যানধারণা, এবং রাষ্ট্রভাবনার উপরও তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। আর সেকারণেই-
•সৈয়দ মুজতবা আলীর সরস এবং রসবোধপূর্ণ বর্ণনাভঙ্গির কারণে এই গম্ভীর বিষয়গুলোও পাঠকের কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। তিনি আফগানিস্তানের রুক্ষ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা সেই সময়ের চাঞ্চল্য ও জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
••• ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 •••
Comments
Post a Comment