Skip to main content

দেশভাগের(6th.Sem.BNGA) যন্ত্রণা বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে কিভাবে প্রকাশ হয়েছে কয়েকটি উপন্যাস অনুসরণে তার পরিচয় দাও।

দেশভাগের যন্ত্রণা বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে কিভাবে প্রকাশ হয়েছে কয়েকটি উপন্যাস অনুসরণে তার পরিচয় দাও (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ষষ্ঠ সেমিস্টার বাংলা অনার্স, সি বিসিএস )।     

           • আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ১৯৪৭সালের দেশভাগ বাঙালির জীবনে এক গভীর ক্ষত তৈরি করেছিল। তবে সেদিন এই বিভাজন শুধু ভৌগোলিক সীমারেখা টানেনি, মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, পরিচিতি ও মানসিকতার ওপরও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল। বলা যায় যে,বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে উপন্যাসে, এই দেশভাগের বাস্তব রূপ অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে ফুটে উঠেছে। আর সেখানে আমরা দেখি- 

'এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা' উপন্যাসে আমরা দেখি-'জ্যোতির্ময়ী দেবীর এই উপন্যাসটি দেশভাগের প্রত্যক্ষ অভিঘাতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল।তবে মূলত নারী জীবনের ওপর দেশভাগের প্রভাবকে তিনি এখানে তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের "উৎসর্গ" অংশে তিনি লিখেছেন – "সকল যুগের সকল দেশের অপমানিতা লাঞ্চিতা নারীদের উদ্দেশ্যে"।                                                        আসলে এই উপন্যাসে দেশভাগের ফলে নারীদের সতীত্বহানি, লাঞ্ছনা, এবং তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম অত্যন্ত বাস্তবসম্মতভাবে চিত্রিত হয়েছে। বাস্তুহারা নারীদের অনিশ্চিত জীবন এবং মানসিক ট্রমা এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।

'কেয়া পাতার নৌকো'প্রফুল্ল রায়ের এই  উপন্যাস দেশভাগের ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু জীবনের এক মহাকাব্যিক আলেখ্য। 'কেয়াপাতার নৌকো' পূর্ব বাংলার গ্রামীণ জীবনের পটভূমিতে দেশভাগের পূর্বাপর পরিস্থিতি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং ভিটেমাটি হারানোর যন্ত্রণাকে তুলে ধরে। এরপর 'শতধারায় বয়ে যায়' এবং 'উত্তাল সময়ের ইতিকথা' উপন্যাসে দেশান্তরী মানুষের নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম, নতুন কলোনি গড়ার চেষ্টা, এবং তাদের আত্মপ্রতিষ্ঠার আত্যসন্ধানের পরিচয় পাওয়া যায়। লেখকের নিজস্ব উদ্বাস্তু জীবনের অভিজ্ঞতা এই উপন্যাসের বাস্তবতাকে আরও গভীর করেছে।

"নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে" অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উপন্যাসটি দেশভাগের প্রেক্ষাপটে একটি যৌথ পরিবারের দেশ ছেড়ে চলে আসা, উদ্বাস্তু জীবনের অভিজ্ঞতা এবং প্রকৃতির অনুপুঙ্খ বর্ণনা নিয়ে গঠিত। দেশভাগ কীভাবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করেছে, সম্পর্কগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে, এবং লোভী ও কামুক মানুষের উন্মোচন ঘটিয়েছে, তা অত্যন্ত বিশ্বস্ত ভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়েছে। এই উপন্যাসে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের চিত্রও দেখা যায়।

"আগুনপাখি" হাসান আজিজুল হকের 'আগুনপাখি' উপন্যাসটি পূর্ব বাংলার একজন গ্রাম্য নারীর জীবন আখ্যান। একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে এবং একান্নবর্তী পরিবারের গৃহবধূ হিসেবে তাঁর চোখে দেশভাগের সময়কার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিবরণ উঠে আসে। এই উপন্যাসে দেশভাগের হাহাকার ও মানুষের ব্যক্তিগত অভিঘাত অত্যন্ত গভীর সংবেদনশীলতার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে। সেই হিসাবে এই উপন্যাসটি দেশভাগের চিত্র ন চিত্রনে একটি বিশেষ ভূমিকা বাংলা সাহিত্যে গ্রহণ করেছে।।

            •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, উপরিউক্ত উপন্যাসগুলো প্রমাণ করে যে দেশভাগ কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনা ছিল না, এটি ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিটেমাটি হারানোর, সম্পর্ক ভাঙার, পরিচিতি সংকটের এবং গভীর মানসিক যন্ত্রণার এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বাংলা উপন্যাসে এই মানবিক বিপর্যয়ের বাস্তব চিত্র অত্যন্ত নিপুণভাবে ধরা পড়েছে, যা পাঠককে সেই সময়ের ভয়াবহতা ও মানুষের যন্ত্রণার সঙ্গে একাত্ম হতে সাহায্য করে। এই সাহিত্যকর্মগুলো কেবল ইতিহাস নয়, মানুষের চিরকালীন সংগ্রাম, এবং স্মৃতির এক অবিস্মরণীয় দলিল।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 


Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...