ফেরারি ফৌজ নাটকের নীলমণি চরিত্রটি নির্মাণে নাট্যকার কতখানি সার্থক হয়েছেন তা আলোচনা করো।
•আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,উৎপল দত্তের বিখ্যাত নাটক 'ফেরারী ফৌজ'-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ চরিত্র হলো নীলমণি। আসলে এই চরিত্রটি তার দ্বৈত সত্তা এবং নাটকীয় মোচড়ের কারণে দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।আর সেখানে আমরা দেখি-
•নীলমণি ছদ্মবেশী দেশপ্রেমীঃ নাটকের শুরু থেকে আমরা দেখতে পাই,নীলমণিকে ব্রিটিশ সরকারের একজন বিশ্বস্ত গুপ্তচর হিসেবে দেখানো হয়েছে। শুধু তাই নয়,তাকে বিপ্লবীরা 'মীরজাফর বাহাদুর' বলে উপহাস করে। আসলে সে ছোটখাটো, ব্যস্তসমস্ত এবং কিছুটা ভীরু প্রকৃতির চরিত্র। তবে সে বিপ্লবীদের গতিবিধি সম্পর্কে পুলিশকে খবর দেয় বলে মনে হয়। আর এই দিকটি তার চরিত্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে-
•বাস্তবতা ও কৌশলঃ নীলমণির এই গুপ্তচরের পরিচয়টি আসলে তার একটি ছদ্মবেশ। বিপ্লবীদের নেতা শান্তি রায়-ই ছদ্মবেশে নীলমণি নামে বিচরণ করেন। পরাধীন ভারতের প্রেক্ষাপটে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য এটি ছিল একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। তবে বাইরে থেকে পুলিশের বিশ্বস্ত হয়ে থাকার ফলে সে বিপ্লবীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারত এবং শত্রুদের বিভ্রান্ত করতে সক্ষম। এছাড়াও -
•দ্বৈত চরিত্র ও বৈপরীত্যঃ এই নীলমণি চরিত্রটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এই চরিত্রটির মধ্যে আছে দ্বৈত সত্তা। একদিকে সে সমাজের চোখে একজন বিশ্বাসঘাতক, অন্যদিকে সে একজন নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী। এই বৈপরীত্য চরিত্রটিকে অত্যন্ত জটিল এবং জীবন্ত করে তোলে। নাটকের শেষ দিকে যখন নীলমণির আসল পরিচয় উন্মোচিত হয়, তখন তা দর্শককে এক দারুণ চমক দেয় এবং চরিত্রটির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে যায়।আসলে নীলমণি-
•বিপ্লবের প্রতীকঃ ফেরারি ফৌজ নাটকে নীলমণি চরিত্রটি মূলত বিপ্লবের প্রতীক। উৎপল দত্ত এই চরিত্রের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন যে, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম কেবল সামনের সারির বীর যোদ্ধাদের দিয়েই হয় না, বরং অনেক সময় পিছন থেকে, ছদ্মবেশে বা কৌশলের মাধ্যমেও বিপ্লব এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আসলে এটি দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগের এক অনন্য উদাহরণ।
•নাট্যকারের উদ্দেশ্যঃ উৎপল দত্ত 'ফেরারী ফৌজ' নাটকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা এবং চরিত্র সৃষ্টিতে চমকের পর চমক সৃষ্টি করেছেন। নীলমণির মতো চরিত্র তৈরি করে তিনি দর্শককে নাটকের রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতি আকৃষ্ট ও মনোযোগী করতে চেয়েছেন।বিপ্লবী শান্তি রায়ের এই ছদ্মবেশ ধারণ করার মাধ্যমে নাট্যকার দেখিয়েছেন যে, বিপ্লবীদের লড়াইয়ে কতটা কৌশল ও আত্মত্যাগ প্রয়োজন।
•পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে-'ফেরারী ফৌজ' নাটকের নীলমণি চরিত্রটি একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হিসেবে পরিচিত হলেও, প্রকৃতপক্ষে সে ছিল একজন মহান বিপ্লবী শান্তি রায়-এর ছদ্মবেশ। তার এই দ্বৈত পরিচয়ই চরিত্রটিকে নাটকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
Comments
Post a Comment