ধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ সহ ধ্বনির শ্রেণী বিভাগ আলোচনা করো।
•আমরা জানি যে, ধ্বনি বা বর্ণ ভাষার ন্যূনতম একক, যা ভাষারূপ অট্টালিকার মূল ভিত্তি। আসলে লেখ্য রূপ বর্ণ এবং কন্ঠোচ্চারিত বা মৌখিক রূপ হলো ধ্বনি।তবে কোন ভাষায় উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আমরা কতগুলি ধ্বনি পাই।আর এই ধ্বনি উৎপন্ন হয় ফুসফুস থেকে ঠেলে দেওয়া শ্বাসবায়ু বা নিঃশ্বাস বায়ুর সহযোগে, যা শ্বাসনালীর মধ্যে দিয়ে কন্ঠনালীতে পড়ে। অতঃপর-
সেখান থেকে গলা, মুখ বা নাকের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসে। আমরা ইচ্ছা করলে এ সময় গলা থেকে ঠোঁট পর্যন্ত জিভের সাহায্যে আলতোভাবে বাধা দিতে পারি। কিম্বা নানাভাবে পরিবর্তিত করতে পারি। আর ইচ্ছাকৃত বাধাতেই ধ্বনি সৃষ্টি হয়। এই বাধা বা বাধার স্থান অনুসারে ধ্বনির প্রকারও পরিবর্তিত হয়। যেখানে -
শব্দের ক্ষীণতম অংশ বা ভগ্নাংশের উচ্চারিত রূপ হল ধ্বনি। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছার মাধ্যমে গলা বা মুখ-নিঃসৃত স্বর বায়ুতে যে স্পন্দন তোলে তাকে ধ্বনি বলে। যেমন -
ব+ল ='বল' দুটি ধ্বনি যোগে গঠিত। তবে বাস্তবে যেকোনো আওয়াজই ধ্বনি। কিন্তু ব্যাকরণে বাগযন্ত্রের সাহায্যে সৃষ্ট বাগধ্বনি হল কথার ধ্বনি। আসলে মানুষের গলার স্বর থেকে বেরিয়ে বায়ুতে আঘাত করে যা উৎপন্ন হয় সেটাই হলো ধ্বনি। তবে-
ধ্বনি কানে শুনি,চোখে দেখি না। তাই ভাষা ও ছন্দ বিজ্ঞানে পাখির ডাক বা কোন আঘাতের সৃষ্ট আওয়াজ ধ্বনি নয়। কাজেই, ধ্বনি হল মানুষের কণ্ঠজাত। মানুষের ইচ্ছায় সৃষ্ট মানুষের শ্রুতিগ্রাহ্য তা রূপ নেয়। আর রূপ নিলে তার নাম হবে বর্ণ(Letter)। আসলে-
ধ্বনি নির্দেশক চিহ্ন বা বর্ণের লিখিত রূপ হল বর্ণ। অর্থাৎ যে সাংকেতিক বা প্রতীক চিহ্নের সাহায্যে ধ্বনির রূপকে প্রকাশ করা হয় তাই-ই হল বর্ণ। যেমন-
'কমল'-ক ম ল এই তিনটি বর্ণ। এই বর্ণগুলি বাগযন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়াসে কন্ঠোচ্চারিত 'ধ্বনির' লিখিত রূপ বা চিহ্ন। যেখানে যেকোনো ধ্বনি উচ্চারণের জন্য বিভিন্ন অংশগুলির মধ্যে সর্বাধিক সক্রিয় জিহ্বা। তাই এই জিহ্বাই ধ্বনির প্রধান উচ্চারক। আর সেখানে জিহ্বার নানা অংশগুলি হলো-
১) আল জিহ্বা(১০), ২) জিহ্বা মূল(৮),৩) মধ্যজ্বিহ্বা(৬),৪) অগ্রজিহবা (৫), ৫) পশ্চাৎ জ্বিহ্বা(৭) এবং জ্বিহ্বাফলক। এই সকল অংশগুলি ধ্বনি উচ্চারণের সময় সক্রিয় থাকে। আর এগুলির সাহায্যেই ধ্বনি সৃষ্টি হয়। আর এই ধ্বনি গুলি প্রধানত দুই প্রকার-
১) স্বরধ্বনিঃ যে ধ্বনি উচ্চারণে শ্বাসবায়ু কোন প্রকার বাধা পায় না এবং অন্যান্য কোন ধ্বনির সাহায্য ব্যতীতই নিজে পূর্ণ ও স্পষ্ট রূপে উচ্চারিত হয়, তাকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন -অ আ, ই, ঈ ইত্যাদি।এই স্বরধ্বনির সংখ্যা বর্তমানে ১১। তবে এখানে ঋ,৯ কে স্বরধ্বনি ভুক্ত হয় না।
বাংলা স্বরধ্বনিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। আর সেই ভাগ গুলি হল-হ্রস্বস্বর, দীর্ঘস্বর, মৌলিক স্বর, যৌগিক স্বর এবং প্লুতস্বর ধ্বনি( সংগীতের সময়, বিলাপের সময় বা আহবানের সময় কোন স্বরকে অতিরিক্ত বিলম্বিত দীর্ঘ করলে তাকে প্লুতস্বর বলে।যেমন- হরে-এ-এ-এ-এ...।এছাড়া-
জিহ্বার অবস্থান ও উচ্চারণ ভঙ্গিমা সূত্রে স্বরধ্বনিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। উচ্চারণ স্থান অনুসারে স্বরধ্বনি ৮ টি। তবে বাংলা স্বরধ্বনি ৭টি-ই,এ,অ্যা,আর,অ,ও এবং উ। তবে আক্ষরিক অর্থে এদের বলে মৌলিক স্বরধ্বনি।
• পরবর্তী ক্লাস হবে 'ব্যঞ্জনধ্বনি' •
Comments
Post a Comment