Skip to main content

প্রফেসর শঙ্কু ও রোবু(4th.Sem) গল্পের প্রফেসর শঙ্কু চরিত্রটি কিভাবে একজন আদর্শ বিজ্ঞানী হিসেবে এই গল্পে উপস্থাপিত হয়েছে -তা আলোচনা করো।

প্রফেসর শঙ্কু ও রোবু গল্পের প্রফেসর শঙ্কু চরিত্রটি কিভাবে একজন আদর্শ বিজ্ঞানী হিসেবে এই গল্পে উপস্থাপিত হয়েছে- তা আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা মাইনর)

                   •আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,সত্যজিৎ রায়ের 'প্রফেসর শঙ্কু ও রোবু' গল্পে প্রফেসর শঙ্কু একজন আদর্শ বিজ্ঞানী।আর গল্পকার তাকে আদর্শ বিজ্ঞানী হিসেবে অত্যন্ত সুচারুভাবে গল্পে উপস্থাপিত করেছেন। এই প্রেক্ষিতে আমারা তার এই চারিত্রিক গুনাবলীর বেশ কয়েকটি প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করতে পারি।আর সেখানে আমরা দেখি-

         •শঙ্কুর জ্ঞানতৃষ্ণা ও অনুসন্ধিৎসাঃ প্রফেসর শঙ্কু জীবনে কখনোই থেমে থাকতে পারেন না,তাই তিনি থেমে থাকেননি।আসলে তাঁর মধ্যে সব সময় নতুন কিছু জানার ও আবিষ্কার করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকে। 'রোবু' গল্পে তিনি রোবট তৈরির মতো একটি জটিল কাজে হাত দেন, যা তাঁর এই অদম্য অনুসন্ধিৎসারই ফসল বলা যায়। তবে তিনি কেবল বিজ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট শাখায় সীমাবদ্ধ থাকেননি। আর সেকারণেই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, প্রাণীবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয়ে, বিভিন্ন শাখায় তাঁর অগাধ জ্ঞান রয়েছে।

         •উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও প্রয়োগঃ আমরা জানি শঙ্কু কেবলমাত্র তত্ত্বগত জ্ঞানে বিশ্বাসী নন,তাই তিনি তাঁর জ্ঞানকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন।তবে রোবুর মতো একটি রোবট তৈরি করা তাঁর অসাধারণ উদ্ভাবনী শক্তির প্রমাণ মেলে। মজার ব্যাপার হলো, এই রোবটটি তৈরি করতে তাঁর খরচ হয় মাত্র তিনশো তেত্রিশ টাকা সাড়ে সাত আনা, যা তাঁর সম্পদের প্রতি নির্লোভ মনোভাব এবং সীমিত রসদেও বিশাল কিছু করার ক্ষমতার পরিচয় দেয়। এছাড়াও-

       •মানবতা ও নৈতিকতঃ আলোচ্য গল্পে শঙ্কু একজন নিছকই যন্ত্রবাদী বিজ্ঞানী নন। বরং বলা যায় যে,তাঁর আবিষ্কারের পেছনে সব সময় মানবতার কল্যাণ এবং নৈতিকতার একটি বড় ভূমিকা ছিল। তবে এই গল্পের রোবুর মাধ্যমে তিনি শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক কৌতূহল মেটান নি, বরং রোবু পরবর্তীতে তাঁর প্রাণ বাঁচিয়ে এক মানবিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েছিল।আসলে শঙ্কু তাঁর জ্ঞানকে কখনও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করেন না, বরং এর সদ্ব্যবহারের ওপর সবসময় জোর দিতেন।

        •নির্ভিকতা ও প্রতিকূলতাঃ গল্পটি যদি আমরা অতি সুস্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, শঙ্কু বিভিন্ন সময়ে নানা বিপদ ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন।কিন্তু তিনি কখনোই সেই বিপদ ও প্রতিকূলতার ভয় পান না বা দমে যান না। বরং বলা যেতে পারে যে, দৃঢ়তার সাথে সেগুলোর মোকাবিলা করেছেন।আসলে তাঁর এই চারিত্রিক দৃঢ়তা একজন আদর্শ বিজ্ঞানীর জন্য অপরিহার্য।

           •সরলতা ও বিনয়ীঃ প্রফেসর শঙ্কু বিশাল প্রতিভার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত সরল এবং বিনয়ী। আর সেকারণে তিনি নিজের আবিষ্কার বা জ্ঞান নিয়ে অহংকার করেন না। তাঁর চরিত্রে এক ঋষিসুলভ স্থৈর্য(শান্ত) ও সংযম দেখা যায়। শঙ্কুর এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাঁকে অন্য সাধারণ বিজ্ঞানীদের থেকে আলাদা করে তোলে। শুধু তাই নয়-

           •আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বন্ধুত্বঃ প্রফেসর শঙ্কুর গবেষণা ও আবিষ্কারগুলি কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। তাঁর বিদেশি বিজ্ঞানী বন্ধুদের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক এবং বৈজ্ঞানিক আলোচনাগুলো তাঁর আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং একজন বিশ্বমানের বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর অবস্থানকে তুলে ধরে।

            পরিশেষে বলা যায় যে, 'প্রফেসর শঙ্কু ও রোবু'গল্পে শঙ্কু এমন একজন বিজ্ঞানী-যিনি শুধু মস্তিষ্কের জোরে বড় নন, বরং তাঁর মানবিকতা, নৈতিকতা এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে তিনি একজন আদর্শ বিজ্ঞানী হিসেবে পাঠকের মনে বিস্তর জায়গা করে নিয়েছেন।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...