অসমিয়া নাট্য সাহিত্যে পদ্মনাথ গোঁসাই কৃতিত্ব আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ষষ্ঠ সেমিস্টার বাংলা অনার্স CBCS)
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,অসমীয়া নাট্য সাহিত্যে পদ্মনাথ গোহাঞিবরুয়া (১৮৭১-১৯৪৬) এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি আধুনিক অসমীয়া সাহিত্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ হিসেবে পরিচিত। তবে কেবল নাট্যকার হিসেবেই নন, তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, জীবনীকার, হাস্যরসিক, প্রবন্ধকার এবং সাংবাদিক। তাই অসম সাহিত্য সভার প্রথম সভাপতি হিসেবেও তিনি স্মরণীয়। আর সেখানে -
•নাট্যকার হিসেবে পদ্মনাথের অবদান•
আমরা জানি পদ্মনাথ গোহাঞিবরুয়া অসমীয়া নাট্য সাহিত্যের একজন পথিকৃৎ। তিনি বিভিন্ন ধরনের নাটক রচনা করেছেন - ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং পৌরাণিক। তাঁর নাটকগুলো কেবল মনোরঞ্জনই করেনি, বরং বলা যেতে পারে,অসমীয়া সমাজে নতুন চিন্তাভাবনা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করেছে।আর সেখানে-
১) ঐতিহাসিক নাটক রচনায় পদ্মনাথঃ ঐতিহাসিক নাটক রচনায় পদ্মনাথ গোহাঞিবরুয়া অসমের গৌরবময় ইতিহাস থেকে উপাদান নিয়ে বেশ কিছু ঐতিহাসিক নাটক রচনা করেছেন।আর সেখানে এই নাটকগুলো অসমীয়া দর্শকদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ ও ঐতিহাসিক সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে সহায়ক হয়েছিল। তাঁর উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক নাটকগুলো হলো-
জয়মতীঃ জয়মতী নাটকটি অসমের ইতিহাসের এক বীরঙ্গনা জয়মতীর আত্মত্যাগের কাহিনী অবলম্বনে রচিত।বলা যায় এই নাটকটি অসমীয়া নাট্য সাহিত্যের একটি ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত।
গদাধরঃএটিও আহোম রাজা গদাধর সিংহর জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নাটক।
লাচিত বরফুকনঃ অসমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর লাচিত বরফুকনের বীরত্ব ও দেশপ্রেম এই নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া সাধনী নাটকটি চুতীয়া রানী সাধনীর আত্মত্যাগের কাহিনী নিয়ে রচিত।
•সামাজিক নাটক রচনায় পদ্মনাথ•
সামাজিক নাটক পদ্মনাথ গোহাঞিবরুয়া তার সামাজিক নাটকগুলোতে সমসাময়িক অসমীয়া সমাজের বিভিন্ন দিক ও সমস্যা তুলে ধরেছেন। আর তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো-
গাঁওবুঢ়াঃ গাঁওবুঢ়া এটি একটি প্রহসনমূলক সামাজিক নাটক। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে অসমীয়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং গ্রাম্য সমাজের দুর্নীতি ও শোষণ এই নাটকে সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ড. মহেশ্বর নেওগ এই নাটকটিকে বলেছেন - "সুলিখিত গ্ৰামীণ কমেডি।'
পৌরাণিক নাটক রচনায় নাট্যকার পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে বেশ কয়েকটি তিনি নাটক রচনা করেছেন।যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-'বাণ রাজা'। এই নাটকটি উষা ও অনিরুদ্ধের পৌরাণিক প্রেম কাহিনী অবলম্বনে এই রচিত হয়েছে।
•প্রহসনমূলক নাটক রচনায় পদ্মনাথ•
•হাস্যরসাত্মক নাটক বা প্রহসন রচনায়ও পদ্মনাথ গোঁসাইবরুয়া সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর এই ধরনের নাটকগুলো দর্শকদের মধ্যে হাসির উদ্রেক করতো এবং একই সাথে সমাজের কিছু সমস্যাও তুলে ধরতো।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
টৈটন তামুলিঃ এটি একটি হাস্যরসাত্মক নাটক, যা দর্শকদের মধ্যে প্রচুর হাসির খোরাক জুগিয়েছিল। পাশাপাশি 'ভূত নে ভ্রম' নাটকটি একটি কৌতুকপূর্ণ নাটক, যা পাঠকদের এবং দর্শকদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত হাসির সঞ্চার করেছিল।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,পদ্মনাথ গোহাঞিবরুয়ার নাটকগুলো কেবল বিষয়বস্তুর দিক থেকেই নয়, নির্মাণশৈলী এবং ভাষার দিক থেকেও সাহিত্যে নতুনত্ব এনেছিল। তিনি ছিলেন সেই সময়ে অসমীয়া মঞ্চনাটকের বিকাশে একজন প্রধান শক্তি।তাঁর নাটকগুলো আধুনিক অসমীয়া নাট্য সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং পরবর্তী প্রজন্মের নাট্যকারদের অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই তাঁর হাত ধরেই অসমীয়া নাটক এক নতুন মাত্রা লাভ করে এ তথ্য আমাদের স্বীকার করতেই হবে।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏
Comments
Post a Comment