Skip to main content

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় সংসদ, উচ্চমাধ্যমিক)।
      আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহ সংঘঠিত হয়েছিল প্রধানত তিনটি কারণে। আর সেই কারণগুলি আমরা নিম্ন সূত্রাকারে তুলে ধরলাম-
১) রাজনৈতিক কারণঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশী যুদ্ধের পর
১০০ বছর ধরে ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদী রথ গোটা ভারতবর্ষে অপ্রতিহত গতিতে ছুটে চলেছিল। আর সেই গতি রুদ্ধ হয় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সংগঘঠিত মহাবিদ্রোহের ফলে। কোম্পানির দীর্ঘদিনের কুশাসন ও ঔপনিবেশিক নীতির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিক্রিয়া হল এই মহাবিদ্রোহ। যেখানে-
•অধীনতামূলক মিত্রতা ও স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ ঃ কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই কোম্পানির শাসকগণ আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছিল। ফলে দেশীয় রাজ্যগুলি একের পর এক তাদের অস্তিত্ব হারাতে থাকে। বিশেষ করে লর্ড ওয়েলেসলি ও লর্ড ডালহৌসির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি এবং স্বত্ববিলোপ নীতি দেশীয় রাজাদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। ডালহৌসি এই নীতি প্রয়োগ করে ঝাঁসী, সাতারা, নাগপুর, সম্বলপুর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্য গ্রাস করলে মহাবিদ্রোহ অনিবার্য হয়ে ওঠে। 
২) অর্থনৈতিক কারণঃ ভারতবর্ষে যুগে যুগে বিভিন্ন বৈদেশিক জাতি প্রবেশ করেছে। এই সকল বিদেশি জাতির শাসনের ফলে ভারতের মূল অর্থনৈতিক কাঠামো কখনো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। কিন্তু কোম্পানির শাসনের ফলে ভারতের পুরনো অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। কারণ কোম্পানি প্রথমেই ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বা কাঠামোকে ধ্বংস করার কাজে হাত দেয়। যেখানে ভারত সস্তায় কাঁচামাল রপ্তানি করে। শুধু তাই নয় ভারতীয় পণ্য সস্তায় ইউরোপে বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি ইংল্যান্ডের শিল্পজাত দ্রব্য ভারতে আমদানি হলে ভারতীয় তাঁতি, শিল্পী, কারিগর প্রভৃতির জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দশা। আর সেই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মহাবিদ্রোহ অনিবার্য হয়ে ওঠে। 
৩) সামাজিক কারণঃ কোম্পানির শাসনের প্রথম দিকে শাসকগণ ভারতীয় সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কিন্তু খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ব্রাহ্মণ পন্ডিত ও মৌলবীদের মনে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে। কারণ তাঁরা সামাজিক ক্ষেত্রে কৌলিন্য ও প্রতিপত্তি হারায়। যেখানে-
        ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ও মৌলবীরা মনে করেন যে, পাশ্চাত্য শিক্ষা হিন্দু-মুসলমানদের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে ফেলবে। ঠিক এই সময়কালে সতীদাহ প্রথা বিলোপ, বিধবা-বিবাহ আইন প্রভৃতি সামাজিক আইনকে রক্ষণশীলরা ভালো চোখে দেখেননি। সেই সাথে তারা রেলপথ নির্মাণ ও টেলিগ্রাফের প্রবর্তনকেও তাঁরা সন্দেহের চোখে দেখতেন। তবে ভারতীয়দের ধর্মান্তরকরণের প্রচেষ্টাকে ভারতীয়রা ক্ষমা করতে পারেনি। আর তার পরিণতি হল এই মহাবিদ্রোহ। 
৪) সামরিক কারণঃ বিদ্রোহের সূচনা করেছিল ভারতীয় সিপাহিরা। আর তারা বিভিন্ন কারণে কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। যেখানে ভারতীয় সিপাহীদের সামরিক যোগ্যতার কোন মূল্য দেওয়া হতো না। এমনকি কোম্পানির সিপাহিদের থেকে তারা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হত। পাশাপাশি ভারতীয়দের জাতিনির্দেশক চিহ্ন ধারণ নিষিদ্ধ করা হয়। আবার -
     সেই মুহূর্তে সিপাহীদের মধ্যে প্রচারিত হয় যে, এনফিল্ড রাইফেলের টোটা গরু ও শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরি। যে টোটা দাঁত দিয়ে কাটতে হতো। যার ফলে হিন্দু ও মুসলিম সিপাহীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হলে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...