Skip to main content

চৈতন্যভাগবত(BNGA,2nd.Sem) গ্রন্থের আদি খন্ডের দশম অধ্যায় অবলম্বনে বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিচয় বর্ণন অংশটির পরিচয় দাও।

চৈতন্যভাগবত গ্রন্থের আদি খন্ডের দশম অধ্যায় অবলম্বনে বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিচয় বর্ণন অংশটির পরিচয় দাও (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, বাংলা মেজর)

              আলোচনার শুরুতেই বলে রাখি যে,চৈতন্যভাগবত গ্রন্থের আদিখণ্ডের দশম অধ্যায়ে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাল্যলীলা এবং তাঁর পার্ষদদের পরিচয় প্রসঙ্গ বর্ণিত হয়েছে। শুধু তাই নয়,এই অধ্যায়েই মহাপ্রভুর দ্বিতীয় পত্নী বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিচয় বর্ণন অংশটির পরিচয় সংক্ষিপ্ত অথচ খুবই তাৎপর্যপূর্ণভাবে বর্ণিত হয়েছে।যদিও এই অধ্যায়ে তাঁর বিস্তারিত জীবনীর বদলে মূলত তাঁর বংশপরিচয় এবং মহাপ্রভুর সঙ্গে তাঁর বিবাহসূত্রের  বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।যেটি বৈষ্ণব সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত। আর সেখানে আমরা দেখি- 

         বিষ্ণুপ্রিয়ার বংশ পরিচয়ঃ আমরা চৈতন্যভাগবত গ্ৰন্থ অনুসারে জানি যে, বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ছিলেন নবদ্বীপের সুবিখ্যাত পণ্ডিত সনাতন মিশ্রের কন্যা। এই সনাতন মিশ্র তাঁর পান্ডিত্য এবং সদাচরণের জন্য গোটা নবদ্বীপে অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন। তাঁর পাণ্ডিত্যের কারণে তাঁকে 'রাজপণ্ডিত' বা 'রাজপণ্ডিত মিশ্র' বলেও অভিহিত করা হতো। আর সেখানে বিষ্ণুপ্রিয়ার এই কুলীন ব্রাহ্মণ পরিচয় তাকে এক সুদৃঢ় সামাজিক সম্মানে তুলে ধরে।

        বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিণয়ঃ চৈতন্যভাগবত গ্রন্থের আদি খন্ডের দশম অধ্যায়ে বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে মহাপ্রভু নিমাই পণ্ডিতের বিবাহের বিষয়টি বর্ণনা রয়েছে।আর এটি ছিল মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের দ্বিতীয় বিবাহ । তবে চৈতন্যদেবের প্রথম পত্নী লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর অকাল মৃত্যুর পর মায়ের নির্দেশে এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীকে বিবাহ করেন। চৈতন্যভাগবতে এই বিবাহকে দৈববিধান হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়,এখানে বিষ্ণুপ্রিয়াকে মহাপ্রভুর নিত্যসঙ্গিনী হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় -

        বৈষ্ণব ধর্মীয়তত্ত্বে বিষ্ণুপ্রিয়াঃ চৈতন্য ভাগবত গ্রন্থের দশম অধ্যায়ে  বিষ্ণুপ্রিয়ার ব্যক্তিগত জীবন বৈশিষ্ট্য বা কোন লীলার বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় না। তবুও এই পর্বে বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে তাঁকে মহাপ্রভুর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ বা জীবন সংগ্রামের সঙ্গিনী  হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বে বিষ্ণুপ্রিয়াকে শ্রীমহাপ্রভুর শক্তিরূপিণী বা আহ্লাদিনী শক্তির প্রকাশ হিসেবে গণ্য করা হয়।তাই এই অধ্যায়ে তাঁর নাম উল্লেখের মাধ্যমে ভবিষ্যতের লীলায় তাঁর গুরুত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।আর সেখানে-

          বিষ্ণুপ্রিয়া ত্যাগের প্রতীকস্বরূপঃ পরবর্তীকালে মহাপ্রভুর সন্ন্যাস গ্রহণের পর বিষ্ণুপ্রিয়ার যে নীরব আত্মত্যাগ এবং সাধন ভজনের জীবন, তার একটি প্রাথমিক প্রেক্ষাপট এই অধ্যায়ে রচিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই অধ্যায়ে বিষ্ণুপ্রিয়াকে আত্মত্যাগময়ী নারী চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ বিষ্ণুপ্রিয়ার এই আত্মত্যাগ যদি না থাকতো তাহলে নিমাই কখনো চৈতন্যরূপে বৈষ্ণব সমাজে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে পারত না। তবে চৈতন্যদেবের সন্ন্যাসের পরের ঘটনা এই দশম অধ্যায়ে আর নেই। তাই এই পর্ব থেকেই বৈষ্ণব পাঠকবৃন্দের মনে চৈতন্যদেবের এবং বিষ্ণুপ্রিয়ার প্রতি এক শ্রদ্ধার ভাব তৈরি হয়। আর এই প্রেক্ষিতে আমরা-

           পরিশেষে বলতে পারি, চৈতন্যভাগবতের আদিখণ্ডের দশম অধ্যায়ে বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিচয় বর্ণন মূলত তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য এবং মহাপ্রভুর জীবনধারায় তাঁর প্রবেশের উপর আলোকপাত করে।আর সেটি বিষ্ণুপ্রিয়ার পরবর্তীকালের আত্মত্যাগ এবং বৈষ্ণব ধর্মে তাঁর গুরুত্বের একটি ভিত্তি স্থাপন করে। আর এই দৃষ্টিপটে আমরা বলতে পারি, চৈতন্যভাগবতের  প্রথম খণ্ডের দশম অধ্যায়ে বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিচয় বর্ণন অংশটি ভীষণ তাৎপর্যময়।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ(Samaresh Sardar)এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...