রাজ্য আইন সভার গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় সেমিস্টার)।
•আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,ভারতের রাজ্য আইনসভা ভারতের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।এটি রাজ্যস্তরে আইন প্রণয়ন এবং রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব আইনসভা রয়েছে। তবে কিছু রাজ্যে একটি মাত্র কক্ষ (এককক্ষ বিশিষ্ট) নিয়ে আইনসভা গঠিত হয়, যা বিধানসভা (Legislative Assembly) নামে পরিচিত। আবার কিছু রাজ্যে দুটি কক্ষ (দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট) থাকে, যেখানে নিম্নকক্ষ বিধানসভা এবং উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদ (Legislative Council) নামে পরিচিত।
•রাজ্য আইনসভার গঠন(বিধানসভা)•
•সদস্য সংখ্যা ও নির্বাচন পদ্ধতিঃভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, একটি বিধানসভার সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ৬০ এবং সর্বোচ্চ ৫০০ হতে পারে। তবে কিছু ছোট রাজ্য যেমন গোয়া, সিকিম, মিজোরাম এবং পুদুচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে এবং তাদের সদস্য সংখ্যা ৬০-এর কম হতে পারে। বিধানসভার সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হন। প্রতিটি সদস্য একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা (নির্বাচনক্ষেত্র) থেকে নির্বাচিত হন।তাদের মেয়াদ সাধারণত ৫বছর। তবে এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের আইন সভার নাম বিধানসভা।
•রাজ্য আইনসভা অর্থাৎ বিধানসভার কার্যাবলী•
১) আইন প্রণয়ন ক্ষমতাঃরাজ্য আইনসভার প্রধান কাজ হল রাজ্য তালিকা এবং যুগ্ম তালিকা ভুক্ত বিষয়গুলির ওপর আইন প্রণয়ন করা। রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে রাজ্য আইনসভার একক ক্ষমতা রয়েছে। তবে যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে রাজ্য আইনসভা ও সংসদ উভয়ই আইন প্রণয়ন করতে পারে। তবে, যদি একই বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে প্রণীত আইনে বিরোধ দেখা দেয়, তবে সাধারণত কেন্দ্রের আইনই প্রাধান্য পায়।
২) অর্থবিল সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ অর্থবিল কেবলমাত্র বিধানসভাতেই (নিম্নকক্ষ) উত্থাপন করা যায়। বিধান পরিষদে এটি পাস হওয়ার জন্য পাঠানো হলেও, বিধান পরিষদ এটিকে সর্বোচ্চ ১৪ দিন পর্যন্ত আটকে রাখতে পারে। তবে-
সাধারণ বিল উভয় কক্ষের যেকোনো একটিতে উত্থাপন করা যায়। বিধানসভায় পাস হওয়ার পর তা বিধান পরিষদে পাঠানো হয়। বিধান পরিষদ একটি সাধারণ বিল সর্বোচ্চ ৬ মাস আটকে রাখতে পারে।
৩) আর্থিক ক্ষমতাঃ রাজ্য সরকারের বাজেট (বার্ষিক আর্থিক বিবরণী) রাজ্য আইনসভায় (মূলত বিধানসভায়) পেশ ও অনুমোদন করা হয়। তবে কোনো নতুন করে আরোপ বা বিদ্যমান করের পরিবর্তন করতে হলে রাজ্য আইনসভার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এছাড়াও রাজ্য সরকারের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাজ্য আইনসভার হাতে থাকে।
৪) শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতাঃরাজ্যের মন্ত্রীসভা(মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদ) সম্মিলিতভাবে বিধানসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। পাশাপাশি বিধানসভার সদস্যরা প্রশ্ন, আলোচনার মাধ্যমে মন্ত্রিসভার কাজকর্মের ওপর নজর রাখতে পারেন এবং তাদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে পারেন। এছাড়াও যদি বিধানসভায় কোনো অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়, তাহলে মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয়। তবে বিধান পরিষদ মন্ত্রিসভাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কারণ মন্ত্রিসভা বিধানসভার কাছে দায়বদ্ধ।
৫) নির্বাচন সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ রাজ্য আইনসভার নির্বাচিত সদস্যরা (বিধায়করা) ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।রাজ্য আইনসভার সদস্যরা বিধান পরিষদের সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ নির্বাচন করেন।স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার (বিধানসভার ক্ষেত্রে) এবং চেয়ারম্যান ও ডেপুটি চেয়ারম্যান (বিধান পরিষদের ক্ষেত্রে) নির্বাচিত হন নিজ নিজ সভার সদস্যদের দ্বারা।
৬) সংবিধান সংশোধন ক্ষমতাঃসংবিধানের কিছু নির্দিষ্ট বিধান সংশোধনের জন্য সংসদকে রাজ্য আইনসভাগুলির অনুমোদন নিতে হয়। যেমন - রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের ক্ষমতা, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক ইত্যাদি। এক্ষেত্রে অর্ধেক রাজ্যের আইনসভার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
৭) অন্যান্য ক্ষমতাঃরাজ্য আইনসভা বিভিন্ন কমিটি গঠন করে সরকারি নীতির বিশদ পর্যালোচনা করতে পারে।রাজ্য আইনসভা জনমত গঠন এবং জনগণের অভিযোগ উপস্থাপনের একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করে।তবে জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময়ে রাজ্য আইনসভার ক্ষমতা পরিবর্তিত হতে পারে, কারণ তখন কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
•পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, রাজ্য আইনসভা রাজ্যের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং রাজ্যের শাসনব্যবস্থা ও আইন প্রণয়নে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এটি রাজ্যের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ। সুতরাং আমারা বলতে পারি রাজ্য আইনসভা হলো সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হৃৎপিণ্ড।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏
Comments
Post a Comment