ক্র্যেশমার ব্যক্তিত্বের যে টাইপ গুলির কথা বলেছেন সেগুলি আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সেমিস্টার এডুকেশন মাইনর)।
•আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,আর্নস্ট ক্র্যেশমার (Ernst Kretschmer) ছিলেন একজন জার্মান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। যিনি শারীরিক গঠন এবং ব্যক্তিত্বের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেছিলেন।আর তিনি তাঁর রোগীদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ব্যক্তিত্বকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। তাঁর এই শ্রেণীবিভাগ শারীরিক গঠন (Physique) এবং মেজাজ বা প্রবণতা (Temperament) এর ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল।আর সেগুলি হলো-
ক্র্যেশমারের ব্যক্তিত্বের চারটি প্রধান প্রকারের কথা বলেছেন, আর সেই প্রকারগুলো হলো-
১. পিকনিক (Pyknic) প্রকার--
শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃএই ধরণের ব্যক্তিদের দেহাকৃতি ছোট ও স্থূলকায় হয়। এদের ঘাড় ছোট ও মোটা হয়, মুখ গোলাকার, এবং শরীর মাংসল ও চওড়া হয়। এদের স্থুলতা দেখা যায়, বিশেষ করে পেট ও বুকের দিকে।
মেজাজ বা প্রবণতাঃ পিকনিক ব্যক্তিরা সাধারণত সামাজিক, প্রফুল্ল এবং বহির্মুখী হয়। এরা হাসিখুশি, খেতে ও ঘুমাতে ভালোবাসে। এদের মেজাজ দ্রুত পরিবর্তনশীল হতে পারে, অর্থাৎ এরা কখনো খুব আনন্দিত আবার কখনো বিষণ্ণ হতে পারে। ক্রেশমার এদেরকে ম্যানিক-ডিপ্রেসিভ সাইকোসিসে (Manic-Depressive Psychosis, যা এখন বাইপোলার ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত) আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি বলে মনে করতেন।
২. অ্যাস্থেনিক (Asthenic) প্রকার--
শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃ এই ধরনের ব্যক্তিরা লম্বা, পাতলা এবং এদের পেশী দুর্বল বা অনুন্নত হয়। এদের ওজন কম থাকে, বুক চ্যাপ্টা এবং কাঁধ সরু হয়। এদের চেহারা প্রায়শই লম্বাটে ও সংকীর্ণ হয়।
মেজাজ বা প্রবণতাঃ অ্যাস্থেনিক ব্যক্তিরা সাধারণত অন্তর্মুখী, সংবেদনশীল, লাজুক এবং দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে চায়। এরা কল্পনার জগতে বিচরণ করতে এবং দিবাস্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। ক্রেশমার এদেরকে স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় (Schizophrenia) আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি বলে মনে করতেন।
৩. অ্যাথলেটিক (Athletic) প্রকার
শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃ অ্যাথলেটিক ব্যক্তিরা সুগঠিত পেশীবহুল দেহের অধিকারী হয়। এদের কাঁধ চওড়া, কোমর সরু এবং পেশী সুঠাম হয়। এরা লম্বা বা খুব ছোট হয় না, বরং এদের গঠন সুষম এবং শক্তিশালী হয়।
মেজাজ বা প্রবণতাঃ এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত স্থির, শান্ত এবং নিজেদের পরিবেশের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পারে। এরা শক্তিশালী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সাহসী হয়। ক্রেশমার মনে করতেন, এদের মধ্যে মানসিক রোগের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম, তবে এরা কঠোর মনোভাবাপন্ন বা বিস্ফোরক ক্রোধের প্রবণতা দেখাতে পারে।
৪. ডিসপ্লাস্টিক (Dysplastic) প্রকার
শারীরিক বৈশিষ্ট্য: এই বিভাগে এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাদের শারীরিক গঠন উপরের তিনটি প্রকারের কোনোটির সঙ্গেই পুরোপুরি মেলে না। এদের দেহাকৃতি প্রায়শই অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং উপরের প্রকারগুলির মিশ্র বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এদের মধ্যে জন্মগত ত্রুটি বা শারীরিক অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে।
মেজাজ বা প্রবণতাঃ এদের মেজাজের কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন থাকে না। এদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার প্রবণতা বেশি থাকতে পারে।
সমালোচনা দৃষ্টিতে ক্র্যেশমারের ব্যক্তিত্বের টাইপ
•স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বলা হয় যে,ক্রেশমারের এই তত্ত্বটি তৎকালীন সময়ে বেশ প্রভাবশালী ছিল। তবে এটিকে অনেক সমালোচক সমালোচনার মুখে দাঁড় করিয়েছেন। আর সেই সমালোচনা দৃষ্টিতে প্রধান সমালোচনাগুলো হলো-
•পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতাঃক্র্যেশমারের তত্ত্বটি মূলত মানসিক রোগীদের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। আর যার ফলে সাধারণ জনসংখ্যার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তবে -
•বৈজ্ঞানিক প্রমাণঃ শারীরিক গঠন এবং ব্যক্তিত্বের মধ্যে সরাসরি কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
•স্থির টাইপঃ ব্যক্তিত্বকে নির্দিষ্ট কিছু টাইপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা আধুনিক মনোবিজ্ঞানে খুব একটা গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ ব্যক্তিত্ব অনেক বেশি জটিল এবং পরিবর্তনশীল।
পরিশেষে বলা যায় যে,ক্র্যেশমারের কাজ ব্যক্তিত্বের গবেষণায় শরীর এবং মন এর সম্পর্ক নিয়ে চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করেছিল। শুধু তাই নয়, এই তত্ত্বটি পরবর্তীকালে শেফেল্ডের (Sheldon) মতো গবেষকদের গবেষণার ক্ষেত্রে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ (Samaresh Sardar) এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏
Comments
Post a Comment