Skip to main content

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের (2nd.Sem) গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর)।

              •আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ভারতীয় সংবিধানের ১২৪/১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, পার্লামেন্ট আইন করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত একজন প্রধান বিচারপতি এবং অনধিক ৭ জন বিচারপতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে।বর্তমানে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ১জন প্রধান বিচারপতি এবং ৩৩ জন অন্যান্য বিচারপতি সহ মোট ৩৪ জন বিচারপতির পদ রয়েছে। এই সংখ্যা ২০১৯ সালে বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

বিচারপতিদের নিয়োগঃ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত করা হয়। প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন রাষ্ট্রপতির দ্বারা এবং অন্যান্য বিচারপতিদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করে নিয়োগ দেন।

যোগ্যতাঃ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হতে হলে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে। এছাড়াও, তাকে কমপক্ষে পাঁচ বছর কোনো হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, অথবা কমপক্ষে দশ বছর কোনো হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, অথবা রাষ্ট্রপতির মতে একজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ হতে হবে।

পদের মেয়াদ ও অপসারণঃসুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারেন। অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে তাদের অপসারিত করা যেতে পারে।

                 •সুপ্রিম কোর্টের কার্যাবলী•

ভারতীয় সংবিধানে১২৯ নম্বর ধারায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টকে 'Court of Record' বা অভিলেখ আদালত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।সেই ভাগ গুলি হল-

১) মূল এলাকা(Original Jurisdiction)

সংবিধানের ১৩১ নং ধারা অনুসারে, কিছু নির্দিষ্ট মামলা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা যায়। এই এলাকার মধ্যে পড়ে-কেন্দ্রীয় সরকার এবং এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ।একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার ও এক বা একাধিক রাজ্য সরকার এবং অন্যদিকে এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ।দুই বা ততোধিক রাজ্য সরকারের মধ্যেকার বিরোধ।মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights) প্রয়োগ সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে, সুপ্রিম কোর্ট রিট (Writ) জারির মাধ্যমে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে।

২) আপীল এলাকা (Appellate Jurisdiction)

সুপ্রিম কোর্ট হলো ভারতের সর্বোচ্চ আপিল আদালত। হাইকোর্ট বা অন্যান্য নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়। আপীল এলাকাকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। আর সেই এলাকাগুলো হল-

সাংবিধানিক আপীলঃ কোনো মামলায় সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত থাকলে হাইকোর্টের সার্টিফিকেট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়।

দেওয়ানি আপীলঃ হাইকোর্টের দেওয়ানি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়, যদি হাইকোর্ট সার্টিফিকেট দেয় যে মামলাটিতে আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে।

•ফৌজদারি আপীলঃ হাইকোর্টের ফৌজদারি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়, বিশেষত যদি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

 •বিশেষ অনুমতি ভিত্তিক আপুল এলাকাঃ  সুপ্রিম কোর্ট তার নিজস্ব বিবেচনায় ভারতের যেকোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালের (সামরিক আদালত ছাড়া) যেকোনো রায়, আদেশ বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য বিশেষ অনুমতি দিতে পারে (ধারা ১৩৬)।

৩)পরামর্শদান এলাকাঃ

            •সংবিধানের ১৪৩ নং ধারা অনুসারে, রাষ্ট্রপতি জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো আইনি বা তথ্যগত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট এই ধরনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে বাধ্য থাকলেও, রাষ্ট্রপতি সেই পরামর্শ মানতে বাধ্য নন।

) নির্দেশ, আদেশ ও লেখজারির ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধানের ৩২ নম্বর ধারা অনুসারে সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার গুলি সংরক্ষণের জন্য নাগরিকরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করলে সুপ্রিম কোর্ট মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য পাঁচ ধরনের নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারি করতে পারেন।আর সেই লেখগুলি হলো-বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকার পৃচ্ছা, উৎপ্রেষণ। তবে জরুরী অবস্থা জারি হলে সুপ্রিম কোর্ট এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না।

            •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে কাজ করে এবং বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা রাখে।যার মাধ্যমে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত কোনো আইন বা নির্বাহী আদেশ সংবিধানসম্মত কিনা তা পরীক্ষা করে এবং অসাংবিধানিক হলে বাতিল ঘোষণা করতে পারে। এটি ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে অবস্থিত একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান যা পিরামিডতুল্য। 

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 •

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...