Skip to main content

মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা(4th. Sem) গল্পে লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র বিজ্ঞানের সাথে কল্পনার এক মিশ্রণ ঘটিয়েছেন- আলোচনা করো।

'মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা' গল্পে লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র বিজ্ঞানের সাথে কল্পনার এক মিশ্রণ ঘটিয়েছেন- আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা মাইনর, চতুর্থ সেমিস্টার) 

            •আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'মঙ্গল গ্ৰহে ঘনাদা' গল্পটি বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অনন্য উদাহরণ।আরএই গল্পে লেখক বিজ্ঞানসম্মত তথ্য ও অলৌকিকতার রঙ মিশিয়ে গল্পটিকে এক অদ্ভুত মিশ্র স্বাদে পরিবেশন করে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।আর বিজ্ঞান ও কল্পকাহিনীর শুরুতেই আমরা দেখতে পাই গল্পে ঘনাদা তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মঙ্গলগ্রহে তার রোমাঞ্চকর অভিযানের বিবরণ দেন। যেখানে বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং চমকপ্রদ কল্পনা একাকার হয়ে যায়। যেখানে-

বিজ্ঞানঃ আমরা জানি যে,প্রেমেন্দ্র মিত্র নিজে বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। শুধু তাই নয়,বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর অদম্য কৌতূহল ছিল।আর সেই কৌতুহল ঘনাদার গল্পগুলোতে এর সুস্পষ্ট ছাপ দেখা যায়।আর সেখানে 'মঙ্গল গ্ৰহে ঘনাদা' গল্পেও তিনি তৎকালীন মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কিত কিছু বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং তথ্য ব্যবহার করেছেন। আর সেই বৈজ্ঞানিক ধারণায় আমরা দেখি-

মহাকাশে মঙ্গলের পরিবেশঃ মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা গল্পে মঙ্গল গ্রহের হালকা পাতলা বাতাস এবং প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।যদিও মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। তবে আলোচ্য গল্পে  অ্যামিনো অ্যাসিডের উপস্থিতির মাধ্যমে প্রাণের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। যা উল্কাপিন্ডে অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়ার ধারণার সাথে অতি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

মহাকাশ যাত্রাঃ আপাততঃ দৃষ্টিতে ঘনাদার মহাকাশ যাত্রা বাস্তবে অসম্ভব মনে হতে পারে। তবে অসম্ভব হলেও মহাকাশ যাত্রার কিছু প্রাথমিক ধারণার উল্লেখ এখানে আছে। মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানোর জন্য যে সময় এবং পথের গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে, তা বর্তমান মহাকাশ বিজ্ঞানীদের হফম্যান ট্রান্সফার অরবিট (Hohmann Transfer Orbit) ধারণার সঙ্গে মিলে যায়। যদিও হফম্যানের এই ধারণা ১৯২৫ সালে আসে। আর তার প্রতিফলন প্রেমেন্দ্র মিত্র তার গল্পে এর প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

বৈজ্ঞানিক যুক্তিঃ ঘনাদা তার গল্পে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক নাম এবং তত্ত্বের উল্লেখ করেন, যা গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে। তিনি এমনভাবে তথ্য উপস্থাপন করেন যেন তা সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত। অপরপক্ষে-

কল্পনার বিষয়ঃঘনাদার গল্পের মূল আকর্ষণই হলো তার কল্পনার পরিবেশ অবাধ বিচরণ। আর সেই বিচরণের কারণে যেখানে অসম্ভবও সম্ভব হয়ে ওঠে। আসলে 'মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা' গল্পে এই কল্পনার ব্যবহার অত্যন্ত নিপুণতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে। আর সেখানে আমরা দেখি-

মঙ্গল গ্রহে অভিযানঃ ঘনাদার মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পদ্ধতি, সেখানে তার বেঁচে থাকা, এবং মঙ্গলবাসীদের সাথে তার কথোপকথন,এ সবই বলা চলে অতিমানবীয় কল্পনার ফল। তাই তিনি যে অবিশ্বাস্য কায়দায় মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেন বা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকেন, তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। বরং বলা যেতে পারে,লেখকের অসীম কল্পনাশক্তির পরিচায়ক। সেই কল্পনার শক্তিতে উঠে আসে-

অসাধারণ চরিত্রায়নঃ আলোচ্য গল্পে ঘনাদার চরিত্রটি নিজেই কল্পনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। তার গল্প বলার ধরণ, যেখানে তিনি পৃথিবীর সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী, এবং সবকিছুতেই তার অলৌকিক জ্ঞান ও দক্ষতা। যা পাঠকের মনে এক কাল্পনিক জগৎ তৈরি করে থাকে।তবে তিনি এমনভাবে গল্প বলেন যেন শ্রোতারা কাল্পনিক জেনেও তা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। এছাড়াও-

রম্যরস ও কৌতুকঃ মঙ্গল গ্ৰহে ঘনাদা গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর রম্যরস। যেখানে তিনি কল্পনার মাধ্যমে  এমন সব হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেন, যা পাঠককে মুগ্ধ করে।তবে ঘনাদার গল্প বলার ভঙ্গি, তার অনায়াস গুলবাজি, সবই কল্পনার এক অনবদ্য সৃষ্টি। আর সেই কারণে গল্পের মধ্যে আমরা দেখতে পাই-

মিশ্রণ ও প্রভাবঃ মঙ্গল গ্রহে ঘনাদার গল্পে প্রেমেন্দ্র মিত্রের মুন্সিয়ানা এখানেই যে, তিনি বিজ্ঞানের কাঠিন্যকে কল্পনার সহজিয়া রূপ দিয়ে পাঠকের কাছে উপভোগ্য করে তুলেছেন। তবে তিনি এমনভাবে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো পরিবেশন করেন যে, পাঠক সেই তথ্যের গভীরে না গিয়েও গল্পের প্রবাহে ভেসে থাকা যায়। তবে এই মিশ্রণ শুধু গল্পের আকর্ষণই বাড়ায় না, বরং বলা যায় যে,ছোটদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতাও তৈরি করে।যা তারা বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে কৌতূহল নিয়ে দেখতে শেখে এবং ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তুলতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, 'মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা' গল্পটি এমন একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে কঠিন বিজ্ঞানকে কল্পনার মোড়কে পরিবেশন করে একটি রোমাঞ্চকর এবং মজাদার আখ্যান তৈরি করা হয়েছে। যে আখ্যান বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যার ফলে গল্পটি অবিশ্বাস্য হলেও পাঠকের কাছে সত্য বলে মনে হয়।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...