Skip to main content

প্রেমেন্দ্র মিত্রের'মঙ্গল(4th. Sem) গ্রহে ঘনাদা' গল্পে কৌতুক ও হাস্যরসের উপাদানগুলি বিভিন্নভাবে গল্পের মূল সুরকে প্রভাবিত করেছে আলোচনা করো।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের'মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা' গল্পে কৌতুক ও হাস্যরসের উপাদানগুলি বিভিন্নভাবে গল্পের মূল সুরকে প্রভাবিত করেছে আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা মাইনর )।

             •আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটি অন্যতম গল্প 'মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা'। আর সেই গল্পটিতে গল্পকার বিজ্ঞানের সাথে কল্পনার একটি অপূর্ব মিশ্রণ ঘটিয়েছেন,যা সহজেই পাঠকের মন কেড়ে নেয়। শুধু তাই নয়, গল্পটিতে আমরা আরও দেখি যে, বিজ্ঞান ও কল্পনার পাশাপাশি কৌতুক ও হাস্যরসের বিভিন্ন উপাদানগুলি এখানে সমানভাবে গল্পের মূল সুরকে প্রভাবিত করেছে। আর সেই আলোচনায় আমরা দেখি-  কৌতুক ও হাস্যরসের অবদান সমূহ-

       •ঘনাদার চরিত্রের বাড়াবাড়িঃ আমরা জানি যে, ঘনাদা নিজেই হাস্যরসের একটি বড় উৎস।কারণ তার অবিশ্বাস্য এবং প্রায় অসম্ভব গল্প বলার ভঙ্গিমা, যেখানে তিনি নিজেকে প্রতিটি অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখেন।যার ফলে তা শ্রোতা এবং পাঠকের মনে এক ধরণের মিশ্র অনুভূতি তৈরি করে দেয়। আর সেই অনুভূতিগুলি হল, বিস্ময়, মুগ্ধতা এবং চাপা হাসি।আসলে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার তার বর্ণনা, সেখানে তার অদ্ভুত সব কার্যকলাপ বিশেষ করে অক্সিজেন মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়ানো বা মঙ্গলীয়দের সঙ্গে "লুডো" খেলা প্রভৃতি বিষয়গুলি গল্পের হাস্যরস বৃদ্ধি করে থাকে। আর সেখানে-

        •শ্রোতা ও পাঠকদের প্রতিক্রিয়াঃ মঙ্গল গ্রহে ঘনাদার গল্প শুনে শিবু, সুধাংশু, বাচস্পতি প্রমুখের অবিশ্বাস, বিস্ময় এবং মাঝে মাঝে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া গল্পের হাস্যরস বাড়ায়। তারা ঘনাদার বাড়াবাড়ি ধরতে পারলেও, শেষ পর্যন্ত তার যুক্তিতে বা বলার কৌশলে মুগ্ধ হয়ে যায়। তাদের এই সংশয়পূর্ণ অথচ আগ্রহী মনোভাব গল্পে কৌতুকের মাত্রা যোগ করে। শুধু তাই নয়-

         •অবিশ্বাস্য ঘটনার সাবলীল উপস্থাপনঃ মঙ্গল গ্রহে অক্সিজেন ছাড়াই টিকে থাকা, মঙ্গলীয়দের সাথে লুডো খেলার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনাগুলোকে ঘনাদা এমন সহজ ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেন যেন তা খুবই সাধারণ ব্যাপার। এই বৈপরীত্য পাঠককে হাসায়। কল্পবিজ্ঞানের একটি গুরুতর বিষয়কে তিনি হাস্যরসের মোড়কে পরিবেশন করেন।

         •অদ্ভুত ঘটনার সমূহের সমাধানঃ ঘনাদা যখন মঙ্গল গ্রহে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন, তখন তার সমাধান পদ্ধতিগুলো প্রায়শই অদ্ভুত ধরনের এবং অপ্রত্যাশিত হয়। যেমন, অক্সিজেন সমস্যার সমাধান কিংবা মঙ্গলীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের যে পদ্ধতি তিনি উদ্ভাবন করেন, তা একইসাথে বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ এবং হাস্যকর বলেই মনে হয়।

       •ভাষা ও চটুলতাঃকথ্য ভাষার ব্যবহার ও চটুলতা: প্রেমেন্দ্র মিত্র ঘনাদার মুখে যে কথ্য ভাষা এবং চটুল বাক্য ব্যবহার করেছেন, তা গল্পের গতিশীলতা বাড়ায় এবং হাস্যরস সৃষ্টি করে। ঘনাদার নিজস্ব বাচনভঙ্গি এবং বাগধারা তার চরিত্রকে আরও মজাদার করে তোলে।

          • গল্পে কৌতুক ও হাস্যরসের প্রভাব •

          •সহজবোধ্য ও উপভোগ্যঃ কল্পবিজ্ঞানের মতো একটি জটিল বিষয়কে কৌতুক ও হাস্যরসের মাধ্যমে উপস্থাপন করায় গল্পটি সাধারণ পাঠকের কাছে অনেক বেশি সহজবোধ্য ও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এটি শুষ্ক বৈজ্ঞানিক আলোচনাকে সরস করে তোলে।আর সেখানে-

           •অবিশ্বাস্যতা গ্রহণযোগ্যতাঃ ঘনাদার গল্পগুলো এতটাই অবিশ্বাস্য যে সেগুলো নিছক পাগলামি মনে হতে পারে। কিন্তু হাস্যরসের প্রয়োগ এই অবিশ্বাস্য ঘটনাগুলোকে এক ধরণের গ্রহণযোগ্যতা দান করে। পাঠক হাসির ছলে এই অসম্ভব ঘটনাগুলোকে মেনে নিতে বাধ্য হন।যার ফলে-

          •গল্পের মূল সুরের হালকাচালঃ  'মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা' মূলত একটি কল্পবিজ্ঞানের গল্প।আর কল্পবিজ্ঞানের হলেও , কৌতুকের ছোঁয়ায় এর মূল সুরটা হালকা এবং মজাদার হয়ে ওঠে।তবে এই গল্পটিকে শুধুমাত্র বিজ্ঞান-মনস্কতার গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে বিনোদনমূলক করে তোলে। যারফলে দেখা যায়-

         •চরিত্রের গভীরতাঃ আলোচ্য গল্পে হাস্যরসের ব্যবহার ঘনাদার চরিত্রকে আরও জীবন্ত এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। পাশাপাশি তার অতিমানবীয় ক্ষমতা এবং অদ্ভুতুড়ে গল্প বলার ধরন তার চরিত্রকে একটি বিশেষ মাত্রা দান করে।আর এই প্রেক্ষিতে এটি প্রমাণ করে যে, ঘনাদা কেবল একজন গল্পকথক নন, বরং একজন মজাদার ব্যক্তিত্বও বটে।

           • পরিশেষে, আমরা বলতে পারি যে,কৌতুক ও হাস্যরস পরিবেশন গল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য-যা পাঠকের মনোরঞ্জন সাধন করে।তবে গল্পটি কেবলমাত্র কল্পনাপ্রসূত অ্যাডভেঞ্চার নয়, বরং বলা যেতে পারে যে,হাসির খোরাকও যোগায়। যা গল্পটিকে একটি ক্লাসিক ঘনাদা গল্পে পরিণত করে। পাশাপাশি 'মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা' গল্পে কৌতুক ও হাস্যরস কেবল বাড়তি উপাদান নয়, বরং এটি গল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যা এর প্লট, চরিত্র এবং সামগ্রিক আবেদনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের 'SHESHER KOBITA SUNDARBAN' Youtube channel 🙏 

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...