পরিমাপ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো (Need for Quantification theory)( পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন মাইনর)
•আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,পরিমাপ পদ্ধতি আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে বিজ্ঞান, শিল্প, বাণিজ্য - সব ক্ষেত্রেই অপরিহার্য।আর এই প্রেক্ষিতে আমরা পরিমাপের প্রয়োজনীয়তার যে বিভিন্ন দিকগুলি পাই তাহলো-
••১) যথার্থতা ও নির্ভুলতা
• ক) সঠিক ফলাফলঃ আমরা জানি যে,পরিমাপ আমাদের কাজের ফলাফলকে সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলতে পারি,একটি ভবন নির্মাণ, শিল্প উৎপাদন, বা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সঠিক পরিমাপ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে এক্ষেত্রে এক মিলিমিটারের ভুলও অনেক সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
• খ) মান নিয়ন্ত্রণঃ উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিমাপ একটি অত্যাবশ্যক বিষয়। কোনো পণ্য বা সেবা যদি নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী তৈরি না হয়, তাহলে তা বাজারে গ্রহণযোগ্য হবে না।আর গ্ৰহণযোগ্য না হলে ব্যবহারকারীর জন্য বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
••২) অর্থনৈতিক কার্যক্রম
• ক) বাণিজ্যিক লেনদেনঃআমরা জানি যে,ব্যবসা-বাণিজ্যে সঠিক পরিমাপ ছাড়া কখনই লেনদেন সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই পণ্যের সঠিক পরিমাণ জানতে হয়, তা সে চাল, তেল, বা অন্য কোনো নির্মাণ সামগ্রীই হোক না কেন।
খ) মূল্য নির্ধারণেঃ পণ্যের পরিমাণ অনুযায়ী তার মূল্য নির্ধারিত হয়।সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করে যে ক্রেতা তার টাকার বিনিময়ে সঠিক পরিমাণ পণ্য পাচ্ছে এবং বিক্রেতাও তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে।
গ) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যঃআন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিভিন্ন দেশের মধ্যে একই পরিমাপ পদ্ধতি থাকা অপরিহার্য, যাতে পণ্যের আদান-প্রদানে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা জটিলতা সৃষ্টি না হয়।
••বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিঃ
ক) গবেষণা ও আবিষ্কারঃ বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য নির্ভুল পরিমাপের প্রয়োজন। কোনো নতুন আবিষ্কার বা তত্ত্বের বৈধতা প্রমাণের জন্য বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়, যার প্রতিটি ধাপে সঠিক পরিমাপ অপরিহার্যহয়ে উঠে।
খ) প্রযুক্তিগত উন্নয়নঃ আধুনিক প্রযুক্তির সব শাখায়, যেমন ইলেকট্রনিক্স, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিজ্ঞান - সব কিছুতেই সুনির্দিষ্ট পরিমাপের ভিত্তিতে ডিজাইন ও উৎপাদন করা হয়। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিপ তৈরি করতে ন্যানোমিটার পর্যায়ের পরিমাপ প্রয়োজন।
গ) সাধারণীকরণঃবিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা যখন একসাথে কাজ করেন, তখন একটি অভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতি তাদের কাজের সমন্বয় ও ফলাফল আদান-প্রদানে সহায়তা করে। এ কারণেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত SI (Systeme Internationale d'Unites) একক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
•• ৪) দৈনন্দিন জীবনে-
ক) গৃহস্থালির কাজেঃ রান্না করার সময় উপকরণগুলোর সঠিক পরিমাপ না জানলে খাবারের স্বাদ নষ্ট হতে পারে। একইভাবে, বাড়ির বিভিন্ন মেরামতির কাজ বা পোশাক তৈরির জন্যও সঠিক মাপজোখ দরকার।
খ)চিকিৎসা ক্ষেত্রেঃ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা: চিকিৎসাক্ষেত্রে ওষুধের সঠিক ডোজ, রোগীর শারীরিক প্যারামিটার (যেমন তাপমাত্রা, রক্তচাপ, ওজন) পরিমাপ করা জীবন বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি। ভুল পরিমাপ মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
গ) পরিবহন ক্ষেত্রেঃ পরিবহন: দূরত্ব, গতি, সময়, জ্বালানির পরিমাণ ইত্যাদি পরিমাপ ছাড়া পরিবহন ব্যবস্থা অচল। বিমান, ট্রেন, গাড়ি সবকিছুই সঠিক পরিমাপের উপর নির্ভরশীল।
•পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, পরিমাপ পদ্ধতি কেবল কিছু সংখ্যা বা এককের ব্যবহার নয়, এটি আমাদের জীবন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং সভ্যতার অগ্রগতিতে একটি মৌলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সঠিক ও নির্ভুল পরিমাপ ছাড়া কোনো কিছুই সুচারুভাবে চালানো সম্ভব নয়।
Comments
Post a Comment