বৈজ্ঞানিক অনুমান কাকে বলে? বৈজ্ঞানিক অনুমানের মানদণ্ড গুলি আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন মাইনর)।
•বৈজ্ঞানিক অনুমান(Criteria of scientific Hypothesis)- আমরা জানি যে, বৈজ্ঞানিক অনুমান বলতে বোঝায় বৈজ্ঞানিক অনুকল্পের মানদণ্ড বা বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ, একটি অনুমান বা ধারণাকে কখন 'বৈজ্ঞানিক অনুকল্প' বলা যাবে, তখন তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত বা গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে যদি কোনো অনুমানের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো না থাকে, তাহলে তাকে বৈজ্ঞানিক অনুকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। আর এই আলোচনার ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক অনুকল্পের মানদণ্ডগুলি হল-
•পরীক্ষণযোগ্যতাঃ বৈজ্ঞানিক অনুকল্পের পরীক্ষণযোগ্যতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। আসলে বৈজ্ঞানিক অনুকল্প এমন হতে হবে যা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভুল প্রমাণ করা সম্ভব। অর্থাৎ, এটি এমনভাবে গঠিত হবে যাতে এর স্বপক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করা যায়। তবে যদি কোনো অনুকল্পকে কোনোভাবেই পরীক্ষা করা না যায় বা ভুল প্রমাণ করা না যায়, তবে সেটি বৈজ্ঞানিক অনুকল্প নয়।
•প্রাসঙ্গিকতাঃ বৈজ্ঞানিক অনুমানের অনুমানকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ঘটনা বা সমস্যাটির সাথে প্রাসঙ্গিক হতে হবে। শুধু তাই নয়,এটি বিদ্যমান এবং প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া দরকার।তবে এক্ষেত্রে বলা যায়,কিছু বিরল ক্ষেত্রে একটি অনুকল্প প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে যেতে পারে। তবে তখন সেটিকে নতুন এবং শক্তিশালী প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত হওয়া দরকার।
সরলতাঃ সরলতার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী অনুকল্প যদি একই ঘটনা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়, তবে সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত সরল অনুকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এটি সরলতার এই অনুকল্পটি 'অকামের রেজর' নামেও পরিচিত। অর্থাৎ, এখানে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা পরিহার করে সহজবোধ্য এবং সংক্ষিপ্তভাবে অনুকল্প উপস্থাপন করা উচিত।
•পূর্বাভাস প্রদানঃআমরা জানি একটি ভালো বৈজ্ঞানিক অনুকল্প কেবলমাত্র পর্যবেক্ষিত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করে না, বরং নতুন বা ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন ঘটনা সম্পর্কে এই অনুমান পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবে। তবে এক্ষেত্রে এই পূর্বাভাসগুলো পরে পরীক্ষা করে সেই অনুকল্পের সত্যতা যাচাই করা যায়।
•বাস্তব কারণভিত্তিকতাঃ অনুমান বা অনুকল্পে যে কারণের কথা বলা হবে, তার বাস্তব অস্তিত্ব থাকতে হবে বা বাস্তবে তার ঘটা সম্ভব হতে হবে।কারণ এক্ষেত্রে অবাস্তব বা অলৌকিক কোনো কিছুকে কারণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। উদাহরণ হিসাবে আমরা বলতে পারি যে, 'ভূতের ভারে গাছ ভেঙেছে'। এখানে গাছ ভাঙার বিষয়টির বাস্তব কারণভিত্তিক নয়।
সুস্পষ্টতাঃ অনুকল্পকে সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট ভাষায় প্রকাশ করতে হবে।আর সেখানে এর অর্থ নিয়ে কোন অস্পষ্টতা যাতে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। সেই সাথে লক্ষ্য রাখা দরকার এই বিষয়টি যাতে সহজেই পরীক্ষা করা যায়।
•পর্যবেক্ষণযোগ্যতাঃআমরা উপরিউক্ত যেসকল মানদন্ড গুলি পর্যবেক্ষণ করলাম সেগুলি অবশ্যই বৈজ্ঞানিক অনুমান বা অনুকল্পের সাথে উল্লিখিত ঘটনাগুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য হওয়া দরকার। তবে এই মানদণ্ডগুলো অনুসরণ করে যে বৈজ্ঞানিক অনুকল্প গঠিত হয়, সেটি অবশ্যই বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য একটি মজবুত ভিত্তি তৈরি করে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
Comments
Post a Comment